ক্রিয়েটিং সেন্স অফ দ্য কে-অস

ডিসেম্বর ৩০, ২০১৯

চীনের একদলীয় শাসন ব্যবস্থার নেশা দক্ষিণ এশিয়ায় যেন আসর জমিয়ে বসেছে। পৃথিবীর সবচেয়ে দরিদ্র মানুষের বসবাস যেহেতু দক্ষিণ এশিয়ায়; সবচেয়ে দুর্বল মেরুদণ্ডের মধ্যবিত্ত আর সবচেয়ে অনৈতিক ধনী মানুষের বসবাস এইখানেই। তাই একদল ‘ডাকাত’ সংঘবদ্ধ হয়ে ‘রাজনৈতিক দল’ নাম নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার পরিশ্রমী মানুষের সম্পদ লুন্ঠন করে; ধনী হবার চক্করটিকে নানা দেশপ্রেম আর ধর্মপ্রেমের কথামালা পরিয়ে এতোকাল যে ভাওতাবাজি করে চলেছে; তা উন্মোচনের বছর ছিলো যেন ২০১৯।

২০১৯ সালের দক্ষিণ এশিয়া বিশৃংখলার এক চূড়ান্ত রঙ্গমঞ্চ। চারপাশের বাতিগুলো নিভে যাবার অশনি এই ক্ষণে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মানুষেরা প্রতিদিন নৈরাশ্যে ডুবে যাচ্ছে ক্রমশঃ। ভারতে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে সেই জার্মানির উগ্র নাৎসিপন্থার আদলে উগ্রহিন্দুত্ববাদের আগুণ জ্বালিয়েছেন। ইসলামি কট্টরপন্থার আগুণে পুড়ে যাওয়া পাকিস্তানে ইমরান খান ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে চেষ্টা করছেন বিরোধী দলগুলোকে দুর্বল করে দিতে। বাংলাদেশে শেখ হাসিনা ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে যে কাজে এরিমাঝে সাফল্য অর্জন করেছেন।

চীনের একদলীয় শাসন ব্যবস্থার নেশা দক্ষিণ এশিয়ায় যেন আসর জমিয়ে বসেছে। পৃথিবীর সবচেয়ে দরিদ্র মানুষের বসবাস যেহেতু দক্ষিণ এশিয়ায়; সবচেয়ে দুর্বল মেরুদণ্ডের মধ্যবিত্ত আর সবচেয়ে অনৈতিক ধনী মানুষের বসবাস এইখানেই। তাই একদল ‘ডাকাত’ সংঘবদ্ধ হয়ে ‘রাজনৈতিক দল’ নাম নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার পরিশ্রমী মানুষের সম্পদ লুন্ঠন করে; ধনী হবার চক্করটিকে নানা দেশপ্রেম আর ধর্মপ্রেমের কথামালা পরিয়ে এতোকাল যে ভাওতাবাজি করে চলেছে; তা উন্মোচনের বছর ছিলো যেন ২০১৯।

পৃথিবীর সভ্য গণতন্ত্রের দেশগুলোতে সরকার একটা সার্ভিস সেন্টারের বেশি কিছু নয়। সেসব দেশের নাগরিকেরা সরকারকে নিয়োগ করে রাষ্ট্রের হোম-ম্যানেজমেন্টের কাজে। সরকার জনগণের চাকরি করে মাত্র।

কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার নিবিড় গ্রামীণ সমাজে; সরকার মানে দেশের মালিক। রাষ্ট্র যেন এক একটি পীরপ্রজাতন্ত্রী মাজার; এইখানে বংশ পরম্পরায় গদিনশীন পীর বংশের শরিকেরা। জনগণকে এই মাজারে এসে পীরের সামনে হাত কচলে অনুনয় বিনয় করে বলতে হয়, আমার সব সম্পদ নিয়ে নিন; শুধু প্রাণটুকু ভিক্ষা দিন।

পীর সরকারের খাদেমেরা চোখ-মুখ গরম করে, লোকজনকে ধর্ম-প্রেম, দেশপ্রেম শিখিয়ে বেড়ায়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর ক্ষমতাসীন পীরের খাদেমেরা সমাজের সবচেয়ে দরিদ্র অবস্থা থেকে তুলে আনা ফুটসোলজার। এরা সামরিক ও পুলিশ বাহিনীর মতই প্রতিপালিত লুন্ঠনের অন্নে। ক্ষমতার খাদেমরা পাগল কুকুরের মতো দৌড়ে বেড়ায় দক্ষিণ এশিয়ার দুর্নীতির বসন্তে।

জনগণের টাকায় কেনা অস্ত্র দেখিয়ে জনগণকেই ভয় দেখিয়ে বেড়ায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সেনাবাহিনী, পুলিশ ফোর্সের লোকেরা। যত্রতত্র ‘অপরাধ দমন’-এর নামে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড করে বেড়ায় এরা। এইভাবে পুরো দক্ষিণ এশিয়া হয়ে উঠেছে ভীতির জনপদ।

দক্ষিণ এশিয়ার আজকের সমাজ একটি ডিটেনশন ক্যাম্প। এখানে বন্দী নাগরিকেরা ভয়ে ভয়ে তাদের অভিমত প্রকাশ করে। সেই হিটলারের উগ্র-নাৎসি ডিটেনশন ক্যাম্পে ঠিক যেরকম ভীতি কাজ করতো বন্দীদের মাঝে।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মানবাধিকার পরিস্থিতি এই মুহূর্তে খুবই আদিম। ব্যাংক ডাকাতির সময় যেমন বেপরোয়া থাকে ডাকাতরা;
দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষমতার খাদেমরা ঠিক তেমনি বেপরোয়া দেশ ডাকাতির এই বিশৃংখল সময়ে। কেউ
ক্ষমতার পীরের সঙ্গে ‘সহমত’ পোষণ না করলেই তার জীবন বিপন্ন হয়ে ওঠে।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর শীর্ষ নেতারা সবাই বৃদ্ধ। আজকের এই ইন্টারনেট যুগের বিশ্ববাস্তবতা; তারুণ্যের মন ও মনন বোঝার সামর্থ্য তাদের নেই। তারা এক অচল ভুবনের বাসিন্দা। এর ফলে খুব বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে পুরো উপমহাদেশে।

বৃদ্ধ শীর্ষ নেতারা জীবন সম্পর্কে তারুণ্যকে যেসব উপদেশ দেন, সেগুলো যেন ‘মাছকে সাঁতার শেখানো’র মতো হাস্যকর। সমাজে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ কেমন হওয়া উচিত; তা তরুণদের কাছে স্পষ্ট; কারণ তারা ব্যক্তিগত জীবনে তা অনুশীলন করে।

বৃদ্ধ নেতা ও তাদের ক্ষমতার খাদেমরা যেহেতু ব্যক্তিগত জীবনকে ফ্যাসিবাদি ফলে তাদের মুখের সব কথাই স্বৈরবচন। গণতন্ত্রের স্বৈরিণী যেন এই জোর করে ‘ক্ষমতা দখল’ করে রাখা ‘অচল রাজারা’।

২০২০ সালে প্রবেশের ক্ষণে দক্ষিণ এশিয়ায় ‘রাষ্ট্র’ ব্যাপারটা সামষ্টিক সমাজে এর প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে। তিরিশের নীচের তরুণদের কাছে, রাষ্ট্র হচ্ছে; ভাত দেয়ার মুরোদ নেই; কিল দেবার গোঁসাই।

আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় অর্ধশিক্ষিত ধর্মের ম্যানেজাররা উগ্র ধর্ম-পুলিশি করতে গিয়ে যেভাবে অপাংক্তেয় হয়েছে সমাজে; আজ অর্ধশিক্ষিত দেশপ্রেমের ম্যানেজাররা উগ্রদেশপ্রেম-পুলিশি করতে এসে চূড়ান্ত অপছন্দের হয়ে উঠেছে। ক্ষমতার স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীকে জনমানুষ এখন সবচেয়ে ঘৃণা করে।

কাজেই ২০২০ সালে দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ নেতাদের পুনর্ভাবনা করতে হবে নিজেদের বোঝাপড়া নিয়ে। ইতিহাসে কেবল সেসব রাজনৈতিক নেতাকেই শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়; যাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনায় দেশের মানুষ সুখে ছিলো; যারা সামাজিক সুবিচার ও মানবাধিকার নিশ্চিত করেছেন।

‘হিটলার’ নামটা শুনলে আজো তার করুণ মৃত্যুর সাত দশক পরেও প্রতিটি মানুষের মাঝে তীব্র বিবমিষা জাগে। ক্ষমতার জন্য পাগল এক হিংস্র নরভোজির ছবি মানুষের চোখের সামনে ভেসে ওঠে।

দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ নেতাদের এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে; তারা হিটলারের আদলে ইতিহাসে গণধিকৃত হতে চান; নাকি একটু সম্মানজনক স্মরণের মাঝে থাকতে চান। মানুষের অমিত- অপরাজেয় শক্তি; তারা হিটলারের মতো নরভোজি নেতার ডিটেনশন ক্যাম্পের মানবেতর দিনরাত্রি অতিক্রম করে ঠিকই সভ্যতার পতাকা উড়িয়েছে; আর উগ্র নাৎসি হিটলার বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছে মানুষের শক্তির কাছে বিপুলভাবে পরাজিত হয়ে।