ভোরের অপেক্ষায় অতন্দ্র বাংলাদেশ

ডিসেম্বর ১৬, ২০১৯

ধর্ম-প্রেমের অতি-আগ্রহী লোকেদেরও মন্দসময় চলছে। যে সৌদি-অর্থায়নে কট্টর ধর্ম চর্চার সংস্কৃতি পরিপুষ্ট হয়েছে; সেই সৌদি আরব নিজেই কট্টরপন্থা থেকে মুক্তির অন্বেষণে। যে অতি ধর্মপ্রেমিক পাকিস্তানে তার সহি পথের দিশা খুঁজেছে; সেই পাকিস্তানেই অতি ধর্ম-প্রেমরোগের নিরাময়ে নিয়মিত জঙ্গিদমন অভিযান চলছে।

ধর্ম-প্রেমের যে অতি-আগ্রহী লোকেরা বড্ড ‘প্রগতিশীলতার’ মুখোশ পরে এতোকাল বেড়ে বলেছেন, ভারতে ধর্ম-প্রেম বেড়ে যাওয়ায় স্বরূপে হাজির হয়ে পড়ায়; জনগণের কাছে; তাদের আবেদন প্রতিদিন কমছে।

অন্যান্যবারের তুলনায় এবার বিজয় দিবস উদযাপনে তোড়জোড় কম-শো ডাউন কম। পাড়ার মোড়ের যে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের অফিসে সাধারণ মুটে মজুরের কাছে জোর করে চাঁদা নিয়ে বিরিয়ানি রান্না করা হতো; মাইকে দুটি দেশের গান বাজিয়েই তারপর ‘দুনিয়া পিত্তলদি’ বাজানোর যে গগণবিদারী আওয়াজ হতো; তা কমে এসেছে।

ক্ষমতার মিডলম্যানদের ক্যাসিনোতে ঢুকে তাদের মধুচন্দ্রিমাটি তছনছ করে দেবার পর থেকেই ‘অতি-আগ্রহী’ মিডলম্যানেরা পলায়নে। কখন দুর্নীতি দমন কমিশন এসে খপ করে ধরে সেই ভয়ে। সরকারের কাছে অস্বাভাবিক উচ্চমূল্যে ‘বালিশ’ ‘জানালার পর্দা’ বিক্রি করে যারা রাজপ্রাসাদ গড়েছে; তারা গ্রেফতারের ভয়ে গা ঢাকা দিয়েছে। রাজপ্রাসাদের বাতি নিভিয়ে রাখা হয়েছে; যাতে চোখে পড়ে না যায় লুন্ঠন।

জাতীয় দিবসে পৃথিবীর অন্যান্য দেশে কেন্দ্রীয়ভাবে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধের ভেটেরান আর সাধারণ মানুষ। আমাদের দেশে সাধারণ মানুষের কাছে চাঁদা নিয়ে বড় বড় ব্যানারের এক কোণায় জাতির জনকের ছবি রেখে নিজের একটি ‘বড় ছবি’ ছাপিয়ে মহল্লার নেতা বিরিয়ানির ডেগ চাপিয়ে দিয়ে চেয়ারে বসে বেনসন সিগেরেট ফুঁকতে থাকেন।

জাতীয় দিবসে দেশের সাধারণ মানুষ একই রকম করে দেশপ্রেম পুষে রেখেছেন বুকে। শুধু ছন্দ পতন ঘটেছে অতি-আগ্রহীদের দেশপ্রেম প্রদর্শনে। টেকাটুকা নেই-যারা টেকাটুকা চুরি করেছে; তাদের গ্রেফতারের ভয়; আগ্রহ আসবে কোত্থেকে!

দুর্নীতির বিরুদ্ধে এই সর্বময় অভিযানটিই এবারের বিজয় দিবসের অঙ্গীকার।

ধর্ম-প্রেমের অতি-আগ্রহী লোকেদেরও মন্দসময় চলছে। যে সৌদি-অর্থায়নে কট্টর ধর্ম চর্চার সংস্কৃতি পরিপুষ্ট হয়েছে; সেই সৌদি আরব নিজেই কট্টরপন্থা থেকে মুক্তির অন্বেষণে। যে অতি ধর্মপ্রেমিক পাকিস্তানে তার সহি পথের দিশা খুঁজেছে; সেই পাকিস্তানেই অতি ধর্ম-প্রেমরোগের নিরাময়ে নিয়মিত জঙ্গিদমন অভিযান চলছে।

ধর্ম-প্রেমের যে অতি-আগ্রহী লোকেরা বড্ড ‘প্রগতিশীলতার’ মুখোশ পরে এতোকাল বেড়ে বলেছেন, ভারতে ধর্ম-প্রেম বেড়ে যাওয়ায় স্বরূপে হাজির হয়ে পড়ায়; জনগণের কাছে; তাদের আবেদন প্রতিদিন কমছে।

অতি দেশপ্রেমিক, অতি ধর্মপ্রেমিক, অতি প্রগতিশীলতার লিপসার্ভিসের দোকানগুলো ক্রমশ ক্রেতাশূণ্য হয়ে পড়ছে।
দেশকে বুকের মধ্যে লালন করে যে মানুষটি প্রতিদিন অর্থনীতির চাকা ঘোরান, ধর্মকে নৈতিকতার দিশা হিসেবে লালন করে সৎ জীবন যাপন করেন যিনি, যাপিত জীবনে প্রাত্যহিক অনুশীলনে মানুষকে যিনি মানুষ হিসেবে শ্রদ্ধা করেন; তাদের জীবন এখন অনুসরণীয়।

একাত্তরে খুনে দখলদার পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে জাতি যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলো; স্বাধীন বাংলাদেশে অতি দেশপ্রেম, অতি ধর্মপ্রেমের পলেস্তরা মুখে এঁকে যারা লুন্ঠন করে, বিদেশে সেকেন্ড হোম বানায়, রাতারাতি অতি-দরিদ্র থেকে অতি ধনী হয়ে উঠেছে; তাদের বিরুদ্ধে জাতির
ঠিক সেভাবে ঐক্যবদ্ধ হবার সময় এখন।

এই যে অর্থনৈতিক ও সামাজিক মানদণ্ডে পুরো দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ দেশ হিসেবে বাংলাদেশের বিজয় পতাকা উড়ছে; মুক্তিযুদ্ধে শহীদ নারী-পুরুষ, বীরমুক্তিযোদ্ধা আর বাংলাদেশ গড়ার নিয়ত যোদ্ধা মেহনতি মানুষের অর্জনের এই পতাকাকে অভিবাদন।

বাংলাদেশের সামনে এখন কল্যাণ রাষ্ট্র হয়ে ওঠার লক্ষ্য।

যেদিন হৃদয়হীন মুনাফাকেন্দ্রিক মালিকের অবহেলায় শ্রমিক পুড়ে মরবে না; ন্যায্য দাবির অনশন মিছিল শ্রমিকের শব মিছিল হবে না; এমন একটি ভোরের অপেক্ষায় অতন্দ্র বাংলাদেশ।