নববর্ষ উদযাপনে নিয়ন্ত্রণ, হতাশায় জনগণ

এপ্রিল ১৩, ২০১৩

2010-04-14__Baishakhঢাকা জার্নাল: বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ এবার নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে৷তাই বিকেল ৫টার পর অনুষ্ঠানস্থলগুলোতে কাউকে  থাকতে দেবেনা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী৷ রোববার বাংলা বর্ষবরণে যখন পুরোপুরি প্রস্তুত বাঙালি, তখন এই খবরে নেমে এসেছে হতাশা৷

এবারই ব্যতিক্রম হল৷ জানিয়ে দেয়া হলো, ১লা বৈশাখের উত্‍সবে সময়ের নিয়ন্ত্রণ আরোপের করার কথা৷ পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ জানিয়েছেন, সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত রাজধানী ঢাকায় নববর্ষের উত্‍সব আয়োজন চলবে৷ এরপর আর না৷

এই সিদ্ধান্ত কেন নেয়া হল? জবাবে মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, নিরাপত্তার কথা ভেবে৷ দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করেই তাঁরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ তবে তাঁর দাবি, আগেও বর্ষবরণের অনুষ্ঠান বিকেল ৫টার মধ্যেই শেষ করার অনুরোধ করা হতো, তবে কাউকে বাধ্য করা হত না৷ কিন্তু এবার বিকেল ৫টার পর রমনা বটমূল, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ নববর্ষের কোন অনুষ্ঠান আর চলবেনা৷ আর অনুষ্ঠানস্থলে কাউকে থাকতে দেয়া হবেনা৷ কেউ থাকতে চাইলে বের করে দেয়া হবে৷

তিনি আরও জানান, এবার ঢাকায় ২৫টি জায়গায় বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের অনুমতি দেয়া হয়েছে৷ এর বাইরেও অনুষ্ঠান হবে৷ আইন-শৃঙ্খলায় নিয়োগ করা হচ্ছে ১০ হাজার পুলিশ, ব়্যাব ও সাদা পোশাকের গোয়েন্দা৷ ২০০ চেকপোস্টে তল্লাশী হবে৷ আর থাকছে ভ্রাম্যমাণ নজরদারি৷ উৎসবে যোগ দেয়া মানুষের জন্যই এই নিরাপত্তা৷ কিন্তু এবার পরিস্থিতি একটু আলাদা ৷ তাই নিরাপত্তা ঝুঁকিও বেশি৷

রাজনৈতিক অস্থিরতা যেমন আছে আছে মৌলবাদীদের হুমকি৷ তাই বিকেল ৫টার পর তারা কোনভাবেই বাংলা বর্ষবরণের অনুষ্ঠান চলতে দেবেন না তাঁরা৷

পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ অবশ্য জানিয়েছেন, গণজাগরণ মঞ্চের সমাবেশ বা অনুমোদন পাওয়া কোন রাজনৈতিক সমাবেশ এই আদেশের আওতায় পড়বেনা৷

মহানগর পুলিশের এই সিদ্ধান্তে নগরবাসীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে৷ কেউ বলছেন, নিরাপত্তা ঝুঁকি সম্পর্কে পুলিশ নিশ্চিত হলে তাদের এছাড়া আর কিইবা করার আছে৷ তবে কেউ কেউ বলছেন, ঝুঁকিমুক্ত পরিবেশে উৎসবের আয়োজনে সহায়তা করা পুলিশের কাজ৷ যারা নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে৷

কথা সাহিত্যিক মুজতবা আহমেদ মুরশেদ বলেন, “বাংলা বর্ষবরণ উত্‍সবে মহানগর পুলিশের এই নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত বেদনাদায়ক৷ এর আগে এরকম আর কখনো ঘটেনি৷ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অবাধে প্রাণের উত্‍সবের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে৷ আর তা নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে নয়৷”

তিনি বলেন, “১লা বৈশাখ একটি সর্বজনীন উৎসব ৷ একটি ক্ষুদ্র মৌলবাদী গোষ্ঠী এর বিরোধী৷ তাদের হুমকিতে যদি এবার বিকেল ৫টার মধ্যে সব অনুষ্ঠান শেষ করতে হয়৷ তাহলে পরের বছর দেখা যাবে অনুষ্ঠান বন্ধেরই দাবি তুলবে মৌলবাদীরা৷ অথবা বলবে, ছায়ানটের অনুষ্ঠানে হামদ-নাত গাইতে হবে৷ এটা মেনে নেয়া যায়না৷”

মুরশেদ বলেন, “যারাই হুমকি দিক না কেন৷ আর তাতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ভয় পেলেও বাঙালি ভয় পায়না৷ তারা প্রাণের উত্‍সব বাংলা নববর্ষ উদযাপনে এই নিয়ন্ত্রণ মানবেনা৷”
সূত্র: ডিডব্লিউ

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.