মহিলা মাদ্রাসাতেও যৌন-প্রজনন স্বাস্থ্যশিক্ষায় আগ্রহ বাড়ছে

নভেম্বর ১৫, ২০১৯
ছবি সংগৃহীত

ঢাকা জার্নাল: সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরোধীতার পরও শেষ পর্যন্ত যৌন-প্রজনন স্বাস্থ্যশিক্ষার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। শুধু শ্রেণিকক্ষে ক্লাসের মাধ্যমে নয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ‘সবার জন্য জেন্ডার সমতা (জেমস) কর্ণার’ বা ‘কিশোর-কিশোরী কর্ণার’-এ খেলার মাধ্যমে স্কুল ও মাদ্রাসায় এই শিক্ষা নিচ্ছে ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী বয়ঃসন্ধিকালের কিশোর-কিশোরী। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মাধ্যমে পরিচালিত ‘জেনারেশন ব্রেক থ্রু’ প্রকল্প শেষ হলেও এই কার্যক্রম এখন চলছে স্বপ্রণোদিতভাবে।

বেসরকারি সংস্থা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এবং কনসার্ন উইমেন ফর ডেভেলপমেন্ট (সিডব্লিউএফডি) এই কার্যক্রম বাস্তায়ন করছে সরকারের সহযোগী হিসেবে।  

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, দেশের ৫০টি মাদ্রসাসহ মোট ৩৫০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ১০টি মহিলা মাদ্রাসা। রাজধানী ঢাকায় একমাত্র তেগাঁওয়ের মদিনাতুল উলুম মডেল ইনস্টিটিউট মহিলা কামিল মাদ্রাসায় শেখানো হচ্ছে যৌন-স্বাস্থ্য শিক্ষা।  

দেশের ১০টি মহিলা মাদ্রসায় প্রায় দেড় হাজারের মতো ছাত্রীরা শিখছে জেন্ডার সমতাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় বিষয়। প্রজনন-স্বাস্থ্য বিষয়ে নিজেরা সচেতন হওয়ার পাশাপাশি অন্যদেরও সহযোগিতা করছে এরা। নিজেদের আত্মরক্ষার বিভিন্ন বিষয় জানতে পারছে তারা।

সূত্রমতে, প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে এবছর (২০২০) থেকে যুক্ত হচ্ছে দেশের পাঁচটি জেলার ২৫০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দুই লাখ সাত হাজার ৫২ জন ছেলেমেয়ে। আর ২০২১ ও ২০২২ সালে চালু হবে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভগের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। ২০২৩ ও ২০২৪ সালে দেশের অন্য ছয়টি বিভাগের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্ধেকে চালু করা হবে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যশিক্ষা কার্যক্রম।

পরবর্তীতে ২টি নারী মাদ্রসাসহ ২৩টি কো-এডুকেশন মাদ্রাসায় যৌন-প্রজনন স্বাস্থ্যশিক্ষা দেওয়া হবে। জেনারেশন ব্রেক থ্রু প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়া হবে।

রাজধানীতে একটি মাত্র মহিলা মাদ্রাসায় যৌন-প্রজনন স্বাস্থ-শিক্ষা দেওয়া হয়। তেগাঁওয়ের মদিনাতুল উলুম মডেল ইনস্টিটিউট মহিলা কামিল মাদ্রাসায় গিয়ে দেখা গেছে এখানে শিক্ষার্থীরা তাদের নিরাপত্তা, জেন্ডার বিষয়ে দক্ষ হয়ে উঠেছে।

শুধু ক্লাসে নয় এই মাদ্রাসাতেও চলছে খেলার মাধ্যমে প্রজনন স্বাস্থ-শিক্ষা।

মদিনাতুল উলুম মডেল ইনস্টিটিউট মহিলা কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. মুজির উদ্দিন বলেন, ‘যৌন-প্রজনন স্বাস্থ্য শিক্ষার মাধ্যমে ছাত্রীরা নিজেদের আত্মরক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয় শিখতে পারছে। তারা জেন্ডার সমতা সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা সচেতনতা শিখছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হচ্ছে।’

কিশোরী কর্ণারে ‘হার্ড ব্রেক’ খেলায় অংশ নেয় নবম শ্রেণির মেয়েরো। খেলায় হারজিতের আনন্দে মেতেই যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যশিক্ষার বিভিন্ন বিষয় জেনে নেয়। এই খেলা শুধু অষ্টম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য। এই খেলার মাধ্যমে বিজ্ঞানভিত্তিক যৌন ও প্রজনন বিষয়ে শিক্ষামূলক জ্ঞান অর্জন করছে মেয়েরা।

বেসরকারি সংস্থা কনসার্ন উইমেন ফর ডেভেলপমেন্ট (সিডব্লিউএফডি) টেনিক্যাল অফিসার ইয়াসমিন আক্তার বলেন, ‘প্রশিক্ষিত শিক্ষকরা ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সী বয়ঃসন্ধিকালের শিক্ষার্থীদের এই শিক্ষা দেন। খেলার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের যৌন ও প্রজনন বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হয়। হার্ড ব্রেক খেলার মাধ্যমে নবম ও দশম শ্রেণির ছেলেমেয়েদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হয়। ১০-১৯ এর মোড় খেলায় এই শিক্ষা দেওয়া হয় ষষ্ট থেকে দশম শ্রেণির ছেলেমেয়েদের। এছাড়া কম্পিউটর গেম রয়েছে সাতটি। ভুতের বাড়ি, অজানাকে জানা খেলাসহ সাতটি খেলায় যৌন প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে তথ্য দেওয়া আছে।’

যৌন-স্বাস্থ্য শিক্ষা ও জেন্ডার সমতা নিয়ে ভিডিওটি দেখুন ডিডব্লিউএর সৌজন্যে।

ঢাকা জার্নাল, নভেম্বর ১৫, ২০১৯