ফটিকছড়ি সংঘর্ষের ঘটনায় ৩০ জামাত নেতা গ্রেফতারঃ ১৪৪ ধারা জারি

এপ্রিল ১২, ২০১৩

cmc-bg20130411075202

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ভুজপুরে বৃহস্পতিবারের সংঘর্ষের ঘটনায় স্থানীয় এক জামায়াত নেতাসহ অন্তত ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এদিকে, নতুন করে সংঘর্ষের আশঙ্কায় শুক্রবারও ভুজপুরে ১৪৪ ধারা বহাল রয়েছে। টহল অব্যাহত রেখেছে বিজিবি।

বৃহস্পতিবারের সহিংসতায় ভুজপুর থানার উপ-পরিদর্শক নূরুন্নবী বাদী হয়ে একটি মামলা (মামলা নম্বর-২) দায়ের করেছেন।

সংঘর্ষের ঘটনায় ভুজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জামায়াত নেতা শফিউল আলম নূরীসহ এখন পর্যন্ত ৩০ জনকে আটক করেছে পুলিশ। পুরো এলাকায় গ্রেপ্তার আতঙ্ক বিরাজ করছে।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার বিকেলে আওয়ামী লীগ নেতা এটিএম পেয়ারুল ইসলামের নেতৃত্বে সকাল ৮টায় দক্ষিণ ফটিকছড়ির মোহাম্মদ তকিরহাট থেকে একটি হরতালবিরোধী মোটর শোভাযাত্রা বের হয়।

তখন দলের সভাপতির মুক্তি চেয়ে জামায়াত ঘনিষ্ঠ ছাত্র সংগঠন- শিবিরের দেশব্যাপী হরতাল কড়াভাবে পালিত হচ্ছিল চট্টগ্রামেও, তাছাড়া নেতাকর্মীদের মুক্তি চেয়ে বৃহত্তর চট্টগ্রামে চলছিল বিএনপির হরতাল’ও।

এমন প্রেক্ষাপটে ওই হরতালবিরোধী মোটর শোভাযাত্রাটি দুপুরে উপজেলা সদর ঘুরে উত্তর ফটিকছড়ির দিকে রওনা দেয়। দুপুর দেড়টার দিকে শোভাযাত্রাটি উপজেলার ভুজপুর থানার কাজীরহাট বাজারে যাবার পথে বড় মসজিদ মোড়ে পৌঁছে হরতালকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়।

সংঘর্ষকালে ছাত্রলীগের লোকেরা স্থানীয় সাধারণ গ্রামবাসীদের মধ্যে দাঁড়ি ও টুপিওয়ালা লোকেদের ‘রাজাকার’ বলে গালিগালাজ করলে উত্তেজনা বাড়ে। বাইরে থেকে আসা ছাত্রলীগের লোকেরা কাজীরহাটের কেন্দ্রীয় মসজিদটিকে ‘বড় মাদরাসা’ মনে করে একে ‘জামায়াত শিবিরের আস্তানা’ বলে ইটপাটকেল ছুঁড়তে শুরু করে। বিরোধী নেতাকর্মীরা মসজিদের মাইকে এই পরিস্থিতির বর্ণনা করতে থাকে।

এরপর সংঘর্ষে আক্রান্ত আওয়ামী লীগ কর্মীরা কাজীরহাটের বাজারে যাবার বদলে পেছনে ফিরতে চেষ্টা করে। উল্টো দিকে কালাইয়ারটেক পৌঁছলে গ্রামবাসী তাদের ঘিরে ধরে এবং বড় বড় লাঠি দিয়ে শ’ চারেক গ্রামবাসী শোভাযাত্রাকারীদের মারতে থাকে এবং প্রায় সব গাড়ি ও মোটরবাইকে আগুন ধরিয়ে দেয়। দুইশ’র বেশি মোটরবাইক, শোভাযাত্রার নেতা এটিএম পেয়ারের মাইক্রোবাস, ৯টি চাঁদের গাড়ি ও মিনি ট্রাক পুড়িয়ে ছাই করে ফেলে গ্রামবাসী।

পরে আওয়ামী লীগের লোকেদের অবরুদ্ধ করে রাখে গ্রামের মানুষ। দুপুর ২টার পর উপজেলা সদর থেকে অগ্নিনির্বাপক দল একটি গাড়ি নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পাশাপাশি সীমান্তরক্ষী বাহিনী বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড-বিজিবি’র এক প্লাটুন সেনাসহ পুলিশের একটি দল গিয়ে এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবু তৈয়বসহ বাকিদের উদ্ধারে বেশ ক’বার ব্যর্থ চেষ্টা চালায়। পরে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে লীগের নেতাকর্মীদের নিজেদের গাড়িতে তুলে নিয়ে সরে পড়তে চেষ্টা করে বিজিবি।

অবরোধকারীদের ভিড় ঠেলে সরে পড়ার সময় গাড়ি থেকে পড়ে গেলে এক ছাত্রলীগ কর্মীকে নির্মমভাবে মারে গ্রামবাসী। মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে তার। একইসময় অপর এক ছাত্রলীগ কর্মীকেও গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়। মারধরের ঘটনায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক কর্মীও হাসপাতালে মারা যায়।

অগ্নি নির্বাপণ বিভাগের গাড়িটিও জ্বালিয়ে দেন গ্রামবাসী। এসময় বিজিবির বেসামাল গুলিতে অর্ধশতাধিক গ্রামবাসী গুলিবিদ্ধ হয়। অন্যদিকে বিভিন্ন বাড়িতে আশ্রয় নেয়া আওয়ামী লীগ কর্মীদের গণপিটুনি দিয়ে প্রায় অর্ধশতাধিককে আহত করে গ্রামবাসী।

পরে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শফিউল আলম নুরী ও কাজিরহাট বড় মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা জুনায়েদ বিল জালাল বাজারের কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে শান্তির আহ্বান জানালে বিজিবি-পুলিশ গুলি বন্ধ করে। গ্রামবাসী ঘটনাস্থল ত্যাগ করা শুরু করে।

 

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.