বিএনপির অপকর্মকারীদের ধরা হয়নি বলেই ‘আইওয়াশ’ বলছে:তথ্যমন্ত্রী

নভেম্বর ১, ২০১৯

 ঢাকা জার্নাল: তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, “বিএনপির দুর্নীতিবাজ ও অপকর্মকারীদের এখনো ধরা হয়নি। তারা হয়তো চলমান শুদ্ধি অভিযানকে ‘আইওয়াশ’ বলছেন। তাদের দলের  অনেকেই আছেন নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। সেই তালিকাও সরকারের কাছে আছে। প্রধানমন্ত্রী আগে আমাদের দল থেকেই শুরু করেছেন।”

শুক্রবার (০১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম ডিসি হিল প্রাঙ্গণে চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহারের শুভ কঠিন চীবর দান উৎসব অনুষ্টানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

বিএনপি নেতাদের নিজেদের চেহারা আয়নায় দেখার অনুরোধ জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নিজেদের মধ্যে যারা আছেন তারা যেন সতর্ক থাকেন। তারা নিশ্চয়ই ভবিষ্যতে বুঝতে পারবেন এটি সকল দল মতের উর্ধ্বে। যারা প্রকৃতপক্ষে অনিয়ম অনাচারের সঙ্গে যুক্ত আছেন, তাদের সবার বিরুদ্ধে অভিযান। প্রকৃতপক্ষে ক্যাসিনোসহ যারা নানা ধরনের অনিয়ম অনাচার ও অপকর্মের সঙ্গে জড়িত আছেন তাদের সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘সারাদেশে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা করা হয়েছে।’

 চট্টগ্রামের কি অবস্থা জানতে চাইলে মন্ত্রী সাংবাদিকদের  বলেন, ‘একটি প্রাথমিক তালিকা করা হয়েছে। সেটি যাচাই বাছাই করে এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে কেউ যে কখনো আমাদের দলে আসতে পারবে না তা কিন্তু নয়। যারা অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত, অন্যদলে থাকাবস্থায় আমাদের দলের নেতাকর্মীদের ওপর নিপীড়ন নির্যাতন চালিয়েছে, দখলবাজসহ নানা অনিয়ম অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত ছিল তাদের আমাদের দলে নেওয়ার কোনও কারণ থাকতে পারে না, তাদের নেতৃত্বের আসনে বসানোর কোনও প্রশ্নই আসে না। সুতরাং  তালিকা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই তালিকাটা করা হয়েছিলোই ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।

এর আগে চট্টগ্রাম ডিসি হিল প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতি পরিচালিত চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহারের শুভ কঠিন চীবর দান উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ড. হাছান মাহমুদ। ওই সময় তিনি বলেন, ‘সকল ধর্মের মর্মবাণী হচ্ছে মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্ববোধ ও মমত্ববোধ সৃষ্টি করা। মানুষের প্রতি দয়া ও ভ্রাতৃত্ববোধের শিক্ষা সকল ধর্ম দেয়। বৌদ্ধ ধর্ম আরো এক ধাপ এগিয়ে সমস্ত জীবের প্রতি দয়ার কথা বলেছে। আমরা যদি সকলে নিজ নিজ ধর্মের মূল মর্মবাণী অনুসরণ করি অনুশীলন করি তাহলে পৃথিবী অনেক শান্তিময় হতো।’

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আজ পৃথিবী জুড়ে ধর্মের নামে যে হানাহানি বিবেদ চলছে কোন ধর্মেই বিবেধ সৃষ্টির কথা বলেনি। ধর্মকে নিজেদের মতো করে ব্যাখ্যা করে অনেকেই ধর্মীয় হানাহানি সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চালায় বিশ্বময়। আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে মেলবন্ধন সৃষ্টিতে সক্ষম হয়েছি পৃথিবীর অনেক দেশের কাছে এটি একটি উদাহরণ।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, সাম্প্রদায়িক বিভাজন করলে যাদের সুবিধা হয় সেই সাম্প্রদায়িক অপশক্তি মাঝে মধ্যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি করে সম্প্রীতি বিনষ্ট করার অপচেষ্টা চালায়। তারই অংশ হিসেবে কক্সবাজারের রামু, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর, সাম্প্রতিক সময়ে ভোলার ঘটনা ঘটানো হয়েছে। শেখ হাসিনার সরকার সেগুলোকে কঠোর হস্তে দমন করেছে।’

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘যেই চেতনার ভিত্তিতে রাষ্ট্র গঠন করা হয়েছিল সেই রাষ্ট্রকে যদি কেউ অস্থিতিশীল করতে চায় তাদেরকে কঠোর হস্তে দমন করতে আমরা বদ্ধ পরিকর। আমাদের মধ্যে যেই সম্প্রীতি সৌহার্দ্য আছে সেটিকে আরো সংহত করার জন্য সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।’

তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘১৯৪৭ সালে সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে দেশ বিভাগের পর আমরা বাঙ্গালিরা উপলব্ধি করতে পারলাম, আমাদের মূল পরিচয় বাঙালিত্ব, বাংলা ভাষা এবং সংস্কৃতির উপর আঘাত করেছে রাষ্ট্র। তখন আমরা উপলব্ধি করতে পারলাম, এই রাষ্ট্র আমাদের জন্য নয়। সেই কারণেই মাতৃভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে স্বাধীকার আন্দেলনকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপান্তরিত করে আমরা অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বাংলাদেশ রচনা করেছি সকল ধর্মের মানুষের রক্তস্রোতের বিনিময়ে।’

রাঙ্গুনিয়া কুলকুরমাই সদ্ধর্মোদয় বিহারের অধ্যক্ষ শাসনরত্ন ভদন্ত ধর্মসেন মহাস্থবিরের সভাপতিত্বে কঠিন চীবর দান উৎসবে আশীর্বাদক ছিলেন বাংলাদেশী বৌদ্ধদের সর্ব্বোচ্চ ধর্মীয় গুরু ড. ধর্মসেন মহাস্থবির, দ্বিতীয় সর্ব্বোচ্চ ধর্মীয় গুরু ড. জ্ঞানশ্রী মহাস্থবির, বিশেষ অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, ধর্মদেশনা দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পালি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. জ্ঞানরত্ন মহাস্থবির, মোগলটুলি শাক্যমুনি বৌদ্ধ বিহারের মহাপরিচালক ভদন্ত তিলোকাবংশ মহাস্থবির, রাঙ্গামাটি রাজবন বিহারের আবাসিক ভিক্ষু ভদন্ত মেত্তাবংশ স্থবির, শাকপুরা সার্বজনীন তপোবন বিহারের উপ বিহারাধ্যক্ষ ভদন্ত প্রজ্ঞামিত্র ভিক্ষু প্রমূখ। ঢাকা জার্নাল, নভেম্বর ১, ২০১৯