প্রতিষ্ঠান যাচাইয়ের পর এমপিও ছাড় করবে সরকার

অক্টোবর ২৬, ২০১৯

ঢাকা জার্নাল: এমপিওভুক্তি (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) তালিকার সব প্রতিষ্ঠানের তথ্য যাচাই করবে সরকার। কোনও প্রতিষ্ঠান মিথ্যা বা ভুল তথ্য দিয়ে থাকলে তারা এমপিও ছাড় পাবে না। শিগগিরই সরেজমিন যাচাই-বাছাই শুরু করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্রমতে, ২০১৮ সালের নতুন নীতিমালা অনুযায়ী সফটওয়্যারের মাধ্যমে অনলাইনে যাচাই-বাছাই করে যেসব প্রতিষ্ঠান যোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছে তাদেরই এমপিও দেওয়ার তালিকা তৈরি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত ২৩ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই হাজার ৭৩০টি প্রতিষ্ঠানের এমপিও দেওয়ার ঘোষণা দেন। এরপর বিকালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করে।
পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ পাওয়ার পর এমপিও তালিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এমপিও তালিকার বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। অস্তিত্বহীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি হওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং এমপিও পাওয়া প্রতিষ্ঠানও রয়েছে এই তালিকায়।
জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমেদ বলেন, ‘নীতিমালা অনুযায়ী সফটওয়্যারের মাধ্যমে অনলাইনে যাচাই-বাছাই করে যোগ্য প্রতিষ্ঠানকে এমপিও দেওয়া হয়েছে। শর্ত অনুযায়ী যেসব তথ্য চাওয়া হয়েছে, তা পূরণ করা-সাপেক্ষে এমপিও তালিকা করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে গত জুলাই থেকেই বেতন-ভাতা দেওয়া হবে। তবে সরেজমিন যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে, যেসব শর্ত আবেদনের জন্য উল্লেখ করা হয়েছে, তা ঠিক আছে কিনা। সরেজমিন যাচাই-বাছাই করে যদি মিথ্যা বা ভুল তথ্য পাওয়া যায় তাহলে এমপিও ছাড় হবে না। এমপিও ছাড় পেতে শর্ত পূরণ করতে হবে। ’
এমপিও পাওয়া প্রতিষ্ঠানের নতুন করে এমপিও তালিকায় নাম থাকার অভিযোগ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান বলেন, ‘পুরো তালিকা তৈরি হয়েছে সফটওয়্যারের মাধ্যমে। প্রধান শিক্ষকরা অনলাইনে দোকান থেকে আবেদন করেছেন। নিম্ন মাধ্যমিকের এমপিও রয়েছে, মাধ্যমিকে না গিয়ে শিক্ষকরা নিম্ন মাধ্যমিকের ঘর পূরণ করেছেন। আর সে কারণেই আবার নিম্ন মাধ্যমিক স্তরের তালিকায় নাম এসেছে।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নতুন এমপিওভুক্তির তালিকায় থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ম অনুযায়ী গেজেট প্রকাশের পর এমপিও কোড দেওয়া হবে। স্কুল ও কলেজের এমপিও কোড দেবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য দেবে কারিগরি শিক্ষা অধিদফতর এবং মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিও কোড দেবে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিও কোড পাওয়ার পর আবেদনের মাধ্যমে প্রত্যেক শিক্ষককে এমপিও কোড দেওয়া হবে। প্রতিষ্ঠানের এমপিও কোড দেওয়ার সময়ও প্রতিষ্ঠান শর্ত পূরণ করেছে কিনা তা যাচাই বাছাই করা হবে।

জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান বলেন, ‘সফটওয়্যারের মাধ্যমে যোগ্যতা যাচাই করা হয়েছে। সেই অনুযায়ী তালিকা তৈরি করা হয়। এমপিও কোড দেওয়ার আগেই যাচাই-বাছাই করা হবে।’
তালিকা প্রকাশের পর কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার শাহজালাল সরকারি কলেজ। গত বছরের ১২ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ এই প্রতিষ্ঠানটি সরকারি করার আদেশ জারি করে। গত বুধবার প্রকাশিত এমপিওভুক্তির তালিকার ৫১ নম্বরে (ইআইএন ১২৯৪৯২) শাহজালাল কলেজটির ডিগ্রি স্তরের এমপিওভুক্তি হয়েছে।
যশোরের অভয়নগর উপজেলার ২০০৪ সালে এমপিওভুক্ত রাজ টেক্সটাইল নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি নতুন তালিকায় যুক্ত হয়েছে। মাধ্যমিক স্তরে এমপিওভুক্তির আবেদন করে প্রতিষ্ঠানটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে পুনরায় এমপিওভুক্ত হয়। এর ফলে বিদ্যালয়টির মাধ্যমিক স্তরে চাকরিরত শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে আনন্দের পরিবর্তে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুফিয়া খাতুন জানান, ‘ এটিকে মাধ্যমিক স্তরের এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন করা হলেও হয়তো ভুলবশত আবারও নিম্ন-মাধ্যমিক স্তরের এমপিওভুক্তিতে স্থান পেয়েছে।’ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এটা সংশোধনের জন্য আবেদন করা হবে বলে জানান তিনি।
এছাড়া পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ঝলইশাল শিরি ইউনিয়নের নতুনহাট টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজ নতুন তালিকায় স্থান পেয়েছে। এমপিওভুক্তির তালিকা প্রকাশের পর ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা হয় প্রতিষ্ঠানটির। গণমাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণ নিয়ে ফলাও করে খবর প্রকাশিত হয়েছে।

এমপিওভুক্তির তালিকা নিয়ে অভিযোগ প্রসঙ্গে নন-এমপিও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার বলেন, ‘তালিকা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তারপরও শিক্ষকদের দিকে তাকিয়ে এমপিও দেওয়া উচিত।’

ডলার আরও বলেন, ‘২০১৮ সালের আগের এমপিও নীতিমালা তাদের জন্য, যারা এই নীতিমালার পরে স্বীকৃতি পেয়েছে। যাদের স্বীকৃতি আগে তারা কেন আগের নীতিমালা অনুযায়ী পাবে না। আগের নীতিমালায় যাদের শর্ত পূরণ ছিল, তখন অর্থসংকুলান না থাকায় তাদের দেওয়া হয়নি। দীর্ঘদিন এমপিও না দেওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা খারাপ হয়েছে। তাই আমি মনে করি এমপিও দিয়ে শর্তপূরণে তিন বছর বা নির্ধারিত সময় বেঁধে দিতে পারে মন্ত্রণালয়। কিন্তু স্বীকৃতি পাওয়া সব প্রতিষ্ঠানকে এমপিও দিতে হবে। বিষয়টি নিয়ে আমরা মন্ত্রণালয়ে কথা বলবো।’

ঢাকা জার্নাল, অক্টোবর ২৬, ২০১৯