রাজার পালঙ্কে নয়, ফ্লোরে ঘুমানোর দাবি মাগুরার ডিসির

মে ৩১, ২০১৯

রাজা সীতারাম রায়ের স্মৃতিচিহ্ন ও ৩০০ বছরের প্রাচীন একটি পালঙ্কে ঘুমান মাগুরার জেলা প্রশাসক। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এমন খবরে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। তবে এ খবরকে মিথ্যা দাবি করে জেলা প্রশাসক আলী আকবর বলেছেন, তিনি রাজার পালঙ্কে নয়, বরং ফ্লোরে ঘুমান।

১৬৮৬ সালে সম্রাট আওরঙ্গজেবের কাছ থেকে রাজা উপাধি লাভ করেন সীতারাম রায়। প্রতাপশালী এই রাজার রাজত্বের সীমারেখা ছিল উত্তরে পাবনা এবং দক্ষিণে সুন্দরবন পর্যন্ত। মাগুরার মহম্মদপুরে তিনি গড়ে তোলেন নিজের রাজধানী। এখনও কীর্তি হিসেবে এখানে রয়েছে সেই আমলের রাজপ্রাসাদ, কাচারিবাড়ি, দোলমঞ্চসহ আরও অনেক নিদর্শন। রাজত্বকালে সীতারাম রায় গড়ে তোলেন অস্ত্র তৈরির কামারশালা। প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদফতর রাজা সীতারাম রায়ের রাজপ্রাসাদ এবং দোলমঞ্চটি সংস্কার করলেও কালের বিবর্তনে রাজপ্রসাদ থেকে হারিয়ে গেছে মূল্যবান অনেক সামগ্রী।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, যে পালঙ্কে রাজা বিশ্রাম নিতেন সেটি দীর্ঘদিন ধরে মাগুরা জেলা প্রশাসনের ট্রেজারিতে রাখা ছিল। নতুন ভবন নির্মাণ এবং সংস্কার কাজের সুবিধার জন্যে এটি বিভিন্ন সময় ট্রেজারি থেকে রেকর্ডরুমের স্তূপে এবং জিমখানার অন্যান্য অব্যবহৃত উপকরণের পাশে জায়গা পেয়েছে।

মাগুরা জেলা প্রশাসনের নেজারত, ট্রেজারি এবং রেকর্ডরুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, গত ২ ফেব্রুয়ারি রাজা সীতারামের সেই পালঙ্কটি মাগুরার এনডিসি রাজিব চৌধুরীর সহায়তায় জেলা প্রশাসকের বাসভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ব্যাপারে রাজিব চৌধুরী বলেন, ‘সীতারামের একটি মূল্যবান পালঙ্কের কথা শুনেছি। কিন্তু এখন সেটি কোথায় ও কীভাবে আছে তা আমার জানা নেই।’ পালঙ্কটি ডিসির বাসায় কেন নিয়ে যাওয়া হয়েছে প্রশ্নে তিনি কোনও উত্তর দেননি।

তবে পালঙ্কটি দীর্ঘদিন জেলা প্রশাসনের রেকর্ডরুমে সংরক্ষিত ছিল বলে জানিয়েছেন এই বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সাবেক কর্মকর্তা সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইসাহাক আলী। রেকর্ডরুমের বর্তমান দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা সাদিয়া ইসলাম সীমা বলেন, ‘আগে রেকর্ডরুমে থাকলেও এখন পালঙ্কটি সেখানে নেই। কেন নেই সেটি জানি না।’

রাজা সীতারাম রায়ের প্রাসাদএ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাগুরার জেলা প্রশাসক আলী আকবর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পালঙ্কটি দীর্ঘদিন ধরে জেলা প্রশাসকের বাংলোতেই রয়েছে। আমার এটি আনার প্রশ্নই ওঠে না। বরং পালঙ্কটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। তাই আমি মেরামত ও রঙ করিয়েছি।’

পালঙ্কটি কেন জাদুঘরে পাঠানো হয়নি, এ প্রশ্নের উত্তরে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘আমার আগের জেলা প্রশাসক প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরকে এটি গ্রহণ করার জন্য লিখিতভাবে জানিয়েছিলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা এটি গ্রহণ করেনি। এই মূল্যবান সম্পত্তি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ গ্রহণ না করলে আমি কি সেটা রাস্তায় ফেলে দেবো? জেলা প্রশাসক হিসেবে পালঙ্কটি সযত্নে সংরক্ষণের স্বার্থেই আমি আমার দায়িত্ব পালন করছি।’
রাজার পালঙ্কে ঘুমানোর প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ছাত্রজীবন থেকেই আমার ফ্লোরে ঘুমানোর অভ্যাস। এখনও আমি ফ্লোরেই ঘুমাই। রাজার পালঙ্কে ঘুমানোর প্রশ্নই ওঠে না।’

প্রসঙ্গত, আলী আকবর মাগুরার জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করেন গত বছরের অক্টোবর মাসে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাগুরার সাবেক জেলা প্রশাসক আতিকুর রহমান (বর্তমানে রেলমন্ত্রীর পিএস হিসেবে কর্মরত) বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার সময়ে এই পালঙ্ক ডিসির বাসভবনে ওঠানোর প্রশ্নই আসে না। আমি দায়িত্ব হস্তান্তর করেছি গত বছরের অক্টোবরে। আর পত্রিকার খবরে বলা হচ্ছে এটা করা হয়েছে গত ফেব্রুয়ারিতে। এ ব্যাপারে মাগুরার জেলা প্রশাসনের রেকর্ডরুম ও ট্রেজারি শাখার কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসা করলেই জানা যাবে এটা কখন ও কীভাবে হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি জনাব আলী আকবরকে একজন সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তা হিসেবেই জানি। তবে এ ব্যাপারে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। তাহলেই বের হবে কেন এটি করা হয়েছে। এখানে ভুল বোঝাবুঝির কোনও অবকাশ নেই।’

প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের আঞ্চলিক পরিচালক আফরোজা খান মিতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ সংক্রান্ত বিষয়ে লিখিত কোনও আবেদন আমার হাতে বা দফতরে আসেনি। এ বিষয়ে প্রধান কার্যালয়ে কোনও আবেদন হয়েছে কিনা তা জানি না। মিডিয়ার মাধ্যমে জানার সূত্র ধরে মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা বলে বিধি ও ধারা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার সুযোগ রয়েছে। অফিস খুললে আগামী সোমবার বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।’