সহজ জয়ে বিশ্বকাপ শুরু ইংল্যান্ডের

মে ৩১, ২০১৯

ফেভারিট হয়ে এবারের বিশ্বকাপ শুরু ইংল্যান্ডের। খুনে ব্যাটিংয়ের সঙ্গে বোলিংটাও যে তাদের প্রতিপক্ষকে ধসিয়ে দেওয়ার মতো তার প্রমাণ মিললো উদ্বোধনী ম্যাচেই। দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১০৪ রানে হারিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করেছে স্বাগতিকরা।

ওভালে দুই দলের লড়াইটা ছিলো ইংল্যান্ডের খুনে ব্যাটিং বনাম দক্ষিণ আফ্রিকার ধারালো বোলিংয়ের। আক্রমণের এমন রসদ মজুদ থেকেও খেলাটা হয়ে দাঁড়ালো এক পেশে। প্রোটিয়ারা ইংল্যান্ডকে স্লোয়ার দিয়ে ভড়কে দেওয়ার চেষ্টা করলেও ইংলিশদের আটকানো যায়নি বড় স্কোর গড়া থেকে। তাতে তাদের সংগ্রহটা দাঁড়ায় ৮ উইকেটে ৩১১ রানে। বিপরীতে প্রোটিয়ারা ছিলো পুরোপুরি অসহায়। যেই জোফরা আর্চারকে নিয়ে এত আলোচনা সেই আর্চারের শুরুর আঘাতই নাড়িয়ে দেয় প্রোটিয়াদের।

অবশ্য খুনে মেজাজে থাকা ইংল্যান্ডকে ব্যাটিংয়ে সেভাবে খুনে মেজাজে পাওয়া যায়নি না আজ। বরং প্রোটিয়াদের স্লোয়ারের কৌশলে সেভাবে চওড়া করতে পারেনি ব্যাট। তার পরেও চার হাফসেঞ্চুরির কল্যাণে পুঁজিটা পৌঁছেছে সমৃদ্ধ জায়গায়। জেসন রয়ের ৫৪, জো ‍রুটের ৫১, মরগানের ৫৭ ও বেন স্টোকসের ৮৯ রানই ছিলো স্কোর বোর্ড সচল রাখার জন্য যথেষ্ট। তাতে ৮ উইকেটে সংগ্রহটা দাঁড়ায় ৩১১ রানের!

টস জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে তাক লাগিয়ে দেওয়ার লক্ষ্য ছিলো প্রোটিয়াদের। ইমরান তাহিরকে শুরুতে আক্রমণে এনে তা করেও দেখায় জনি বেয়ারস্টোকে ফিরিয়ে। কিছু উইকেট পড়লেও ব্যাটিংয়ের লাগামটা হাতছাড়া হতে দেয়নি স্বাগতিকরা।
অপর দিকে তাদের বিশাল স্কোরের জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকার শুরুটা ছিলো অতি সাবধানী। অতিরিক্ত সাবধানী হতে গিয়ে তারা বিপদও ডেকে আনে চতুর্থ ওভারে। জোফরা আর্চারের গতির কাছেই পরাস্ত হন ওপেনার হাশিম আমলা!
অবশ্য তা শুধু সীমাবদ্ধ থাকে চোট আঘাতে। আর্চারের বাউন্সার গিয়ে আঘাত হেনে বসে আমলার হেলমেটের গ্রিলে। পুল করতে গেলে আর্চারের বল ফণা তুলে প্রত্যাশার বাইরে। সেই আঘাতে অস্বস্তিতে ভোগায় বাধ্য হয়েই রিটায়ার্ড হয়ে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে।
অবশ্য সেই বাউন্সারই যে আর্চারের পক্ষ থেকে প্রোটিয়াদের জন্য সতর্কবাণী ছিলো তা টের পায়নি তারা। না হলে আমলার বদলে নামা মারক্রামও বোকামি করতেন না বাড়তি বাউন্সের বাইরের বল খেলতে গিয়ে! লোভনীয় শট খেলতে গিয়ে তার জায়গা হয় স্লিপে দাঁড়িয়ে থাকা জো রুটের হাতে। মারক্রাম বিদায় নেন ১১ রানে।
আর্চারের বোলিংটা কতটা কার্যকরী তার প্রমাণ মেলে আবার এক ওভার বিরতি দিয়ে। নতুন নামা অধিনায়ক ফাফ দু প্লেসিসকেও থিতু হতে দেননি। দলের বিপদে নামা প্রোটিয়া অধিনায়ককে শর্ট বলে বাধ্য করেছেন পুল করতে। যার ফল ফাইন লেগে থাকা মঈন আলীর হতে জমা হওয়া ক্যাচ।
এমন বিপদে কুইন্টন ডি ককই সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছেন ইনিংসকে। আশা জাগানো ব্যাটিং উপহার দিলেও ৬৮ রানে তাকে ফিরিয়ে দেন প্লাঙ্কেট। ডি ককের বিদায়ের পরই আসলে সম্ভাবনা উড়ে যায় প্রোটিয়াদের।
রাসি ফন ডার ডাসেন ৫০ রান করে কিছুটা প্রতিরোধ দিয়েছেন কিন্তু তা ইংলিশদের বোলিংকে সামাল দেওয়ার মতো ছিলো না। বিশেষ করে আর্চার আবার আক্রমণে এসে ফেরান এই ডাসেনকেই। আবার আমলা ব্যাটিংয়ে নামলেও টুর্নামেন্টের আগে প্রতিশ্রুত রান ক্ষুধার ধারে কাছেও ছিলেন না।
মূল তারকাদের বিদায়ের পর প্রোটিয়াদের শেষটা হয়ে যায় আরও দ্রুত। বিশেষ করে ইংলিশদের দাপুটে ভঙ্গিমার উজ্জল উদাহরণ তুলে ধরেন বেন স্টোকস। অসাধারণ ফিল্ডিংয়ে ক্যাচ নেন আন্দিলে ফেলুকোয়ায়োর। তাতে প্রোটিয়াদের ইনিংস শেষ হতে খুব বেশি সময় নেয়নি। ৩৯.৫ ওভারে ২০৭ রানেই গুটিয়ে যায় তারা।
বিশ্বকাপে আর্চারের শুরুটাও হলো স্মরণ করে রাখার মতো। কার্যকরী বোলিংয়ে ৭ ওভারে ২৭ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট। দুটি নেন লিয়াম প্লাঙ্কেট ও বেন স্টোকস। একটি করে নিয়েছেন আদিল রশিদ ও মঈন আলী।
ম্যাচসেরা হন ব্যাট-বলে ও ফিল্ডিংয়ে অসাধারণ খেলা স্টোকস।