বিএনপিকে কোনঠাসা করে সরকার কি ঝুঁকি নিচ্ছে?

এপ্রিল ১১, ২০১৩

bnpঢাকা জার্নাল: প্রধানবিরোধী দল বিএনপির সিনিয়র নেতাদের একটা বড় অংশ গ্রেফতার থাকায় আন্দোলন এবং সাংগঠনিক কার্যক্রম এগিয়ে নিতে দলটি কিছুটা বেকায়দায় পড়েছে বলে এর নেতাদের অনেকেই বলছেন।

তবে তারা পরিস্থিতিটাকে সাময়িক হিসেবে বিবেচনা করছেন।

তারা অভিযোগ তুলেছেন, তাদের কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে আটক করে সরকার গণতন্ত্রের পরিপন্থী কাজ করছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, বিরোধীদলের নেতাকর্র্মীদের আটক করে সরকার এক ধরণের ঝুঁকি নিচ্ছে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমেদসহ দলটির শীর্ষপর্যায়ের ৮জন নেতাকে জামিন না দিয়ে একসাথে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল গত রোববার।

তাদের পক্ষ থেকে এবার জজ আদালতে জামিনের আবেদন করা হলে ,তাতেও শুনানির জন্য ২১শে এপ্রিল পর্যন্ত অপেক্ষার পালা।

বিএনপিতে এখন সিনিয়র নেতাদের মধ্যে গ্রেফতার আতংক কাজ করছে বলে দলটির নেতাদের অনেকেই বলছেন।

এমন পটভূমিতে নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে বিএনপির টানা ৩৬ ঘন্টার হরতালেও দলটির মধ্যম সারির এবং সিনিয়র নেতাদের মাঠে দেখা যায়নি।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন জানিয়েছেন, সিনিয়র এবং মধ্যম সারির কুড়িজন নেতাসহ সারাদেশে কয়েকহাজার নেতাকর্মি আটক রয়েছে।

তিনি বলেছেন,‘আমরা গুটিকয়েক ছাড়া সিনিয়র নেতারা সবাই জেলে। এটা সরকারের স্বৈরাচারী এবং ফ্যাসিস্ট আচরণ।

বিরোধীদলের নেতাদের জেলে পুড়ে দেশ পরিচালনা করা ,এটা গণতন্ত্রের ভাষা বলা যায় না। এ ধরণের অবস্থা কিন্তু সরকার এবং দেশ,কারও জন্যই ভাল না।’

মানবাধিকার সংগঠন অধিকার বলছে, প্রধান বিরোধীদলের নেতাদের একের পর এক আটকের ঘটনা দেশের পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যেতে পারে এবং সেজন্য সংগঠনটি উদ্বিগ্ন।

অধিকারের মহাসচিব আদিলুর রহমান মনে করেন, সরকার চরমপন্থার দিকে এগুচ্ছে,যা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকে উৎসাহিত করবে।

বিএনপির সিনিয়র নেতাদের একটা বড় অংশ যে আটক রয়েছে।তার প্রভাব দলটির আন্দোলনের কর্মসূচির পাশাপাশি দলীয় কার্যক্রমেও পড়ছে।

এর নেতাদের অনেকেই মনে করেন, তাদের দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমে ভাটা পড়েছে। গ্রেফতারের ভয়ে অনেকেই নিস্ক্রিয় হয়ে রয়েছেন। এখন দলটির শীর্ষনেত্রী খালেদা জিয়াকেই সব বিষয় সমন্বয় করতে হচ্ছে।

খন্দকার মোশাররফ হোসেন পরিস্থিতিটাকে সাময়িক হিসেবে বর্ননা করেছেন।

তিনি বলছেন,‘কার্যক্রমে সাময়িক ভাটা পড়তে পারে। কিন্ত বিএনপি যেহেতু সমর্থক ভিত্তিক দল,তাই নেতাদের জেলে রাখলেই এই দলকে ধ্বংস বা এর শক্তি দূর্বল করা যাবে না। সাময়িক সমস্যা কাটিয়ে উঠতে আমাদের নেতৃত্ব ক্রমানুসারে তৈরি করা আছে। একজন গ্রেফতার হলে পরের জন সেখানে কাজ করছে।’

বিএনপি নেতা মোশারফ হোসেন যেমনটা বলছিলেন,বিএনপি হয়তো সাময়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু নেতিবাচক প্রভাব সরকারের ভাবমূর্তির ক্ষেত্রেও পড়ছে বলে তারা মনে করেন।

সিনিয়র সাংবাদিক আবেদ খানও মনে করেন, প্রধানবিরোধীদলের সিনিয়র নেতাদের আটকের ঘটনা গণতন্ত্রের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

তিনি বলেছেন,‘একটা পরিস্থিতির মধ্যে আটক করে বা আটক না করে সরকার কৌশলটি নিয়েছে। এ ধরণের কৌশল অনেক সময় সরকারের জন্য বুমেরাং হয়ে যায়। আমার মনে হয়, সরকার এ ক্ষেত্রে বড় ঝুঁকি নিয়ে বসে আছে। এই ঝুঁকিটা হচ্ছে,অনেকটা বৃদ্ধ ব্যঘ্রের উপর আরোহণ করার মতো অবস্থা। যেখান থেকে তাকে জয়ী হতে হবে ,নাহলে বিপর্যয়ের মধ্যে যেতে হবে।’

বিশ্লেষকরা এটাও উল্লেখ করছেন, ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে সরকারকেই সহনশীল ভূমিকা নিতে হবে।

সূত্র: বিবিসি

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.