ঢাকার বাইরেও চিকুনগুনিয়া, আশপাশে বেশি

জুলাই ২৪, ২০১৭

চিকুনগুনিয়ার রোগী পাওয়া যাচ্ছে ঢাকার বাইরের জেলায়ও, যাতে রোগটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সরকারের রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়্ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. তৌহিদ উদ্দিন আহমদ বলেন, চিকুনগুনিয়া ছড়ানোর জন্য দায়ী এডিস এলবোপিকটাস গ্রামে পাওয়া যায়। বিশেষ করে নরসিংদী, গাজীপুর, সাভার ও মুন্সীগঞ্জে এসব মশা আছে।

“এসব এলাকা থেকে ঢাকায় প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ যাতায়াত করে। এ কারণে এ রোগটি এসব এলাকায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে।”

আইইডিসিআর’র তথ্য অনুযায়ী,গত ২২ জুলাই পর্যন্ত দেশের ১৫টি জেলা থেকে জ্বর-ব্যথা নিয়ে আসা ১০৮ জনের মধ্যে ৩০ জনের চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয়েছে।

এসব জেলার মধ্যে ঢাকা মহানগর সংলগ্ন ঢাকা জেলার এলাকাসমূহ, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ ও গাজীপুর রয়েছে। এসব জেলা থেকে আসা ৬০ জনের মধ্যে ২১ জনের নমুনা পরীক্ষায় চিকুনগুনিয়ার ভাইরাস পাওয়া গেছে।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১২ জন চিকুনগুনিয়া রোগী পাওয়া গেছে নরসিংদীতে। এছাড়া ঢাকা জেলায় পাঁচজন, মুন্সীগঞ্জে দুইজন ও গাজীপুরে দুইজন রোগী পাওয়া গেছে।

এর বাইরে বগুড়ায় চারজন, চট্টগ্রামে তিনজন, গোপালগঞ্জে একজন, রাজশাহীতে একজন চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত পাওয়া গেছে।

আইইডিসিআর বলছে, জেলাগুলোতে চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত প্রায় সবাই সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা ঘুরে গেছেন। তাছাড়া তাদের অধিকাংশের আথ্রাইটিস ছিল।
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যারা ঢাকায় ঘন ঘন আসেন, তাদের সতর্ক থাকতে বলি, যেন ঢাকা থেকে ইনফেকশনটা কোনোভাবে বাইরে চলে না যায়।”
এ বিষয়ে সতর্ক না হলে বিপদের শঙ্কা জানিয়ে ডা. তৌহিদ বলেন, “চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে কামড়ানো মশা অন্য একজনকে কামড়াল এবং তিনি ঢাকার বাইরে গিয়ে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন। আবার ওই ব্যক্তিকে এডিস এলবোপিকটাস মশা কামড়াল, সেই মশা অন্যদের কামড়ালে রোগটি ছড়িয়ে পড়তে পারে।”

এভাবে মশাবাহিত এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে জানান তিনি।

নরসিংদীর ১২ জনের চিকুনগুনিয়া হওয়ার বিষয়ে অবহিত নন জেলার সিভিল সার্জন ডা. সুলতানা রাজিয়া।

তিনি বলেন, “আমার জানামতে একজন সরকারি কর্মকর্তা আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি ঢাকা থেকে এসেছেন।

“চিকুনগুনিয়া নিয়ে এখনও আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু হয়নি। আমরা এটা নিয়ে নানা কার্যক্রম চালাচ্ছি। সবগুলো উপজেলায় চিকুনগুনিয়া নিয়ে সহায়তা কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এছাড়া নানা ধরনের প্রচারণা চালাচ্ছি।”

মুন্সীগঞ্জের দুজন ঢাকা থেকে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে জানান জেলার সিভিল সার্জন ডা. সিদ্দিকুর রহমান। এ রোগটি মুন্সীগঞ্জে এখনও সেভাবে ছড়ায়নি বলে দাবি করেন তিনি।

সিদ্দিকুর বলেন, তারাও চিকুনগুনিয়া নিয়ে হেলপ ডেস্ক চালু করেছেন।

“চিকিৎসকরা রোগীদের সচেতন করতে প্রচারণা চালাচ্ছেন। একজনের হলে অন্যজন যেন এ রোগে আক্রান্ত না হয় সে বিষয়ে সবাইকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।”

এ রোগ প্রতিরোধে মশা নিধন কার্যক্রম জোরদার করা জরুরি হলেও মুন্সীগঞ্জে এখনও তা শুরু হয়নি বলে জানান সিভিল সার্জন।

তিনি বলেন, “আমাদের সবারই সতর্ক থাকা উচিত। তবে বাস্তবতা হলো আমরা আক্রান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত নড়িচড়ি না। ঢাকায়ও দেখেছেন, চিকুনগুনিয়া ছড়িয়ে পড়ার পর যখন পত্রপত্রিকায় লেখালেখি শুরু হল তখন দৌঁড়ঝাপ শুরু হল।”

তবে ঢাকার বাইরে চিকুনগুনিয়ার বিস্তার ঠেকাতে এরইমধ্যে উদ্যোগী হওয়ার কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদ।

তিনি বলেন, “আমাদের কর্মকর্তাদের বলা আছে, কোনো জায়গায় এ ধরনের কেইস পাওয়া গেলে সেখানে দ্রুত চলে যেতে। সেই রোগীকে যেন মশা কামড়াতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা আছে। স্থানীয় প্রশাসনকে মশক নিধনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও আমরা বলেছি।”

ঢাকা জার্নাল, জুলাই ২৪,২০১৭।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.