বনানীতে ধর্ষণ ঘটনায় ৫ আসামির কার কী ভূমিকা ছিল

জুন ৯, ২০১৭

ঢাকা জার্নাল : রাজধানীর বনানীতে দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণ মামলায় সাফাত আহমেদসহ পাঁচ আসামিকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। ধর্ষণ ঘটনার সময় আসামিরা কে কী ভূমিকায় ছিল চার্জশিটে তা উল্লেখ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৮ জুন) ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম দেলোয়ার হোসেনের আদালতে এই চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইসমত আরা এমি।

মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণ মামলার এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি সাফাত আহমেদ মামলার বাদীকে ধর্ষণ করে। এসময় ধর্ষণের চিত্র ভিডিও ধারণের কথা বলে তাকে ব্ল্যাকমেইলেরও চেষ্টা করে সে। এছাড়া মামলার দুই নম্বর আসামি নাঈম আশরাফ ওরফে আব্দুল হালিম বাদীর বান্ধবীকে একাধিকবার ধর্ষণ করে।ঘটনার পর এই আসামিও বাদীর বান্ধবীকে ব্ল্যাকমেইলের চেষ্টা করে। এজাহারভুক্ত অন্য তিন আসামির সবাই রাতভর ধর্ষণে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে। অন্য তিনজন সহযোগী হলো, সাফাতের বন্ধু সাদমান সাকিফ, গাড়ি চালক বিল্লাল হোসেন ও দেহরক্ষী রহমত আলী ওরফে আবুল কালাম আজাদ।

আদালতে দাখিল করা চার্জশিটে এমন তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে বলে জানান তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

আাদালত সূত্রে জানা গেছে, মামলার প্রধান দুই আসামি সাফাত আহমেদ ও নাঈম আশরাফ ওরফে আব্দুল হালিম ধর্ষণের কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। আর সহযোগী তিন জনের ভূমিকাও চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে।

এরমধ্যে সাদমান সাকিফ ধর্ষণের ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সাফাত ও নাঈম আশরাফ ওরফে হালিমকে সহযোগিতা করেছে। দুই শিক্ষার্থীকে বাঁচানোর সুযোগ থাকলেও সাদমান সাকিফ তাদের বাঁচানোর চেষ্টাও করেনি। উল্টো দুই শিক্ষার্থীর সঙ্গে আসা বন্ধুদের মারধর ও ভয়ভীতি দেখিয়েছে। যা ধর্ষণকাজে সরাসরি সহযোগিতা করার শামিল। এছাড়া ধর্ষণ ঘটনার পর দুই শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ব্ল্যাকমেইল করে আপোস-রফার চেষ্টা করে তারা। এই সংশ্লিষ্টতার কথাও উল্লেখ করা হয় চার্জশিটে।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, ধর্ষণের আগে রেইনট্রি হোটেলের সুইমিংপুলে আসামিদের সঙ্গে নামতে বাধ্য করা হয়েছিল দুই শিক্ষার্থীকে। সুইমিংপুল থেকে যাতে কোনোভাবে শিক্ষার্থীরা পালিয়ে যেতে না পারেন, সেজন্য সাফাতের নির্দেশে বডিগার্ড রহমত আলী ওরফে আজাদ পাহারা দিয়ে রেখেছিল।

মামলার তদারকি কর্মকর্তা ও ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের উপ-কমিশনার (ডিসি) ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘দেহরক্ষী চাইলে খুব সহজেই বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের অবহিত করতে পারতো। কিন্তু তিনি তা না করে নিজেই পাহারা দিয়ে রেখেছিল। পরবর্তীতে নির্যাতনের শিকার দুই শিক্ষার্থীর বন্ধুকে মারধরের ভিডিও ধারণ করেছিল গাড়ি চালক বিল্লাল।’

এছাড়া সাফাতের বডিগার্ড রহমত আলী ওরফে আবুল কালাম আজাদের কাছে ধর্ষণের অনেক তথ্যই পৌঁছে। পুলিশকে জানানোর সুযোগও ছিল। কিন্তু রহমত আলীও সবকিছু গোপন করেছিল। তার এই ভূমিকা অপরাধীদের ধর্ষণে আরও উদ্বুদ্ধ করেছে। চার্জশিটে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে বলে ।

ধর্ষণ মামলার চার্জশিটে সাক্ষীর তালিকায় ৪৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এরা হলেন- বনানী থানার তদন্ত কর্মকর্তা আবদুল মতিন, ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের তদন্ত কর্মকর্তা ইসমত আরা এমি, মামলার বাদী ও তার বান্ধবী এবং ধর্ষণের শিকার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে থাকা বন্ধুরাও সাক্ষীদের তালিকায় রয়েছেন।

আগামী ১৯ জুন চার্জশিটের ওপর শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, রাজধানীর বনানীতে রেইনট্রি হোটেলে গত ২৮ মার্চ জন্মদিনের দাওয়াতে ডেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করা হয়। এই অভিযোগে গত ৬ মে বনানী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন ধর্ষণের শিকার দুই শিক্ষার্থীর একজন।। বৃহস্পতিবার আদালতে ওই মামলার চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ।

ঢাকা জার্নাল, জুন ৮, ২০১৭।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.