দুই স্ত্রীকে নিয়েই থাকতে চান আরাফাত সানী

জুন ৭, ২০১৭

ঢাকা জার্নাল: নাসরিন সুলতানার সঙ্গে বিয়ের আগে বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটার আরাফাত সানী ২০১০ সালে আরেকটি বিয়ে করেছেন। তার প্রথম স্ত্রীর ঘরে একটি সন্তানও আছে। আর মামলার ভয়ে এখন দুই স্ত্রীকে নিয়েই সংসার করতে চান আরাফাত সানী।
বুধবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লার আদালতে সানীর জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধির শুনানিতে এসব তথ্য প্রকাশ পেয়েছে।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দায়ের করা মামলায় তৃতীয় দফায় আরাফাত সানীর জামিনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে বুধবার। অন্তর্বর্তীকালীন জামিন শেষ হতে যাওয়ায় ঢাকা মহানগর দায়রা জজ  কামরুল হোসেন মোল্লার আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে আত্মসমর্পন করে জামিনের আবেদন করেন আরাফাত সানী। আদালত আরাফাত সানীকে আগামি ৬ জুলাই পর্যন্ত জামিন মঞ্জুর করেন এবং ওই তারিখের মধ্যে তাদের মধ্যে সমঝোতার পরামর্শ দেন।

সানীর পক্ষে জামিন শুনানি করেন কাজী নজিবুল্লাহ হিরু, এম. জুয়েল আহম্মদ এবং মুরাদুজ্জামান মুরাদ।

শুনানিতে তারা বলেন, নারী নির্যাতনের মামলায় আপনার আদালত থেকে আরাফাত সানীর নেওয়া জামিনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আজ। জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় আমরা আজ আবার জামিনের প্রার্থণা জানাচ্ছি।

তারা আরো বলেন, আরাফাত সানীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সত্য নয়। তাছাড়া আরাফাত সানী বর্তমানে লীগে খেলছে। সেখানে তিনি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট নিয়ে রেকর্ড গড়েছেন। এ অবস্থায় তার জামিন মঞ্জুরের আবেদন জানাচ্ছি।

বাদীপক্ষের আইনজীবী আতিকুর রহমান জামিনের বিরোধিতা করেন।

এদিন মামলার বাদিনী নাসরিন সুলাতানা আদালতে হাজির ছিলেন। তিনি জামিনের বিরোধীতা করেন। নাসরিন কান্নাজড়িত কন্ঠে আদালতকে বলেন, ‘২০১০ সালে আরাফাত সানী একটি বিয়ে করেছে সেটা আমার জানা ছিল না। সেখানে না কি তার একটি বাচ্চাও আছে। তার সাথে যখন আমি দেশের বাইরে ঘুরতে যাই তখন তার পাসপোর্টে সে অবিবাহিত সেটা লেখা ছিল। সে আমাকে ধোঁকা দিয়েছে।’

নাসরিন বলেন, ‘সে (আরাফাত সানী) জামিন নিয়ে যাওয়ার পর থেকে আমার সাথে যোগাযোগ করছে না। তাকে ফোন দিলে সে ফোন রিসিভ করে না। এরপর একদিন আমি তার বাসায় গেলে তার মা নার্গিস আক্তার আমাকে মারধর করেন। আরাফাত সানী আমার সাথে একটি দিনও কাটাচ্ছে না। আমি তার জামিন নামঞ্জুরের প্রার্থণা করছি।’ একই সঙ্গে সানীর প্রথম স্ত্রীকে তালাক দিয়ে তাকে ঘরে তুলতে বলেন।

এসময় সানীর আইনজীবীরা বলেন, তার (নাসরিন সুলতানা) সাথে সংসার হোক আমরা সেটাই চাচ্ছি। এজন্য তাকে আলাদা ফ্ল্যাট ভাড়া করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি সেখানে থাকছেন না।

সানীর প্রথম বিয়ের বিষয় স্বীকার করে আইনজীবীরা বলেন, ২০১০ সালে সানী বিয়ে করেন। ওই ঘরে তার একটি সন্তানও আছে। তাকে পরিত্যাগ করা সানীর পক্ষে সম্ভব নয়। সানী দুই স্ত্রীকে নিয়ে সংসার করতে ইচ্ছুক। নাসরিনকে নিয়ে সানী সংসার করতে চান বলেই তার জন্য বসুন্ধরা এলাকায় ফ্ল্যাটও ভাড়া নিয়েছেন। কিন্তু নাসরিন সেই ফ্ল্যাটে উঠছেন না। তিনি প্রথম স্ত্রীকে তালাক দিতে বলছেন। যা সম্ভব না।

তারা আরো বলেন, নাসরিন সুলতানা আরাফাত সানীর প্রথম স্ত্রীর কথা জেনেশুনেই তাকে বিয়ে করেছে। এখন সানীর প্রথম স্ত্রীকে তালাক দিলে তিনিও আরাফাত সানীর বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন। এজন্য সানী তাকে তালাক দিতে চাচ্ছেন না। তিনি এখন দুই স্ত্রীকে নিয়েই সংসার করতে চাচ্ছেন ।

এদিকে উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আরাফাত আগামি ৬ জুলাই পর্যন্ত সানীর জামিন মঞ্জুর করেন। ওই তারিখের মধ্যে আরাফাত সানী এবং নাসরিন সুলতানার মধ্যে সমঝোতার পরামর্শ দেন আদালত।

এই মামলায় গত ৯ মার্চ একই আদালত আরাফাত সানীর জামিন ১০ এপ্রিল পর্যন্ত মঞ্জুর করেন। এরপর ১৫ মে এবং তারপর আজ ৭ জুন পর্যন্ত জামিন মঞ্জুর করেন আদালত।

গত ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার চার নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলাটি করেন সানীর স্ত্রী নাসরিন সুলতানা। ওই দিন আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণের পর মামলার অভিযোগ মোহাম্মদপুর থানাকে তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। গত ৮ ফেব্রুয়ারি মোহাম্মদপুর থানার ওসি জামাল উদ্দীন মীর মামলাটি এজাহার হিসেবে রেকর্ড করে ঢাকা সিএমএম আদালতে নথি প্রেরণ করেন। এরপর আদালত মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

মামলায় বলা হয়, সাত বছর আগে পরিচয়ের সূত্র ধরে আরাফাত সানী ও নাসরিন সুলতানার ঘনিষ্ঠতা হয়। একপর্যায়ে তারা দুজন দুজনকে ভালবেসে ফেলেন। ২০১৪ সালের ৪ ডিসেম্বর অভিভাবকদের না জানিয়ে তারা বিয়ে করেন। কিন্তু বিয়ের তিন বছরেও সানী দুই পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে নাসরিন সুলতানাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘরে তুলে নেননি। বারবার এ বিষয়ে চাপ দিলেও তিনি কালক্ষেপণ করেন।

এরপর গত বছরের ১২ জুন রাত ১টা ৩৫ মিনিটে নাসরিন সুলতানা (ঘধংৎরহ ঝঁষঃধহধ) নামের একটি ভুয়া ফেসবুক আইডি থেকে নাসরিন সুলতানার আসল ফেসবুক মেসেঞ্জারে সানী-নাসরিনের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের কিছু ছবি পাঠানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন নাসরিন সুলতানা। ওই মামলায় সানী রিমান্ডে থাকা অবস্থায় গত ২২ জানুয়ারি তার মা নার্গিস আক্তার থানার সামনে বাদীকে মারধর করেন। এ বিষয়ে ওই দিন থানায় অভিযোগ করলেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় আদালতে মামলা করেন নাসরিন সুলতানা।

উল্লেখ থাকে যে, আরাফাত সানীর বিরুদ্ধে নাসরিন সুলতানা নারী নির্যাতনের মামলা ছাড়াও যৌতুক আইনে একটি মামলা এবং তথ্যপ্রযুক্তি আইনে আরেকটি মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় গত ২২ মার্চ আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশ।

চার্জশিটে আরাফাত সানীর সঙ্গে যে নাসরিন সুলতানার বিয়ে হয়েছিল সেটি উল্লেখ করেন তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার এসআই মো. ইয়াহিয়া।

ঢাকা জার্নাল, জুন ০৭, ২০১৭।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.