আগামী নির্বাচনে যাচ্ছে জামায়াত

মে ১৮, ২০১৭

ঢাকা জার্নাল:একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। অন্তত শতাধিক আসনে প্রার্থী দেওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখে প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করে বাছাই তালিকা তৈরি করছে দলটি। ইতোমধ্যে লিখিতভাবে তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিমত নেওয়া শুরু করেছে দলের পার্লামেন্টারি বোর্ড। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে দলটির ভেতরে দুই রকমের পরিকল্পনা চলছে। প্রথমত হাইকোর্টের আদেশে স্থগিত থাকা নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন ফিরিয়ে এনে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করা। দ্বিতীয়ত দলীয়ভাবে নির্বাচনে যেতে না পারলে বিগত স্থানীয় নির্বাচনগুলোর মতোই স্বতন্ত্র পরিচয়ে প্রার্থী দেবে দলটি। জামায়াতের নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

স্বতন্ত্র প্রার্থিতার সম্ভাবনা বেশি

নিবন্ধন ফিরে পাওয়ার বিষয়ে জামায়াত নেতারা মনে-মনে প্রত্যাশা করলেও ইতোমধ্যে দাড়িপাল্লা প্রতীক বাতিল হয়ে যাওয়ায় নতুন প্রতীক বরাদ্দ ও নিবন্ধন ফিরে পাওয়া অনেকটাই কঠিন। এক্ষেত্রে স্বতন্ত্র প্রার্থী দিতে পারে জামায়াতে।

ঢাকা মহানগর জামায়াত দক্ষিণের একজন শীর্ষস্থানীয় দায়িত্বশীল বলেন, ‘এখনও প্রত্যাশা, দলীয় প্রতীকেই নির্বাচনে যাব। এ ক্ষেত্রে আগামী বছরের মধ্যেই দলের নিবন্ধন ফিরে পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।’ জানতে চাইলে দলের দায়িত্বশীল, সিলেট জেলা দক্ষিণ জামায়াতের আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান  বলেন, ‘জামায়াত আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে। ২০ দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ থেকেই নির্বাচন করা হবে। দলীয় প্রতীকে না হলে স্বতন্ত্রভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।’

জামায়াতের সূত্রগুলো জানায়, দলের সংসদীয় বোর্ড ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছে। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ পার্লামেন্টারি বোর্ডের দায়িত্বে রয়েছে। স্থানীয় নেতাকর্মীদের অভিমত-প্রস্তাব ও তথ্য যাচাই করে এই বোর্ডই প্রার্থিতার বিষয়টি চূড়ান্ত করবে। সূত্র আরও জানায়, আগামী নির্বাচনে অন্তত ১০০আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা বিবেচনা করছে জামায়াত। এক্ষেত্রে জোটগতভাবে নির্বাচনের সম্ভাবনা প্রবল থাকায় বিএনপির ইচ্ছাকেই প্রাধান্য দিতে হবে দলটিকে। ফলে, নির্বাচনের আগে-আগে প্রার্থীর সংখ্যা আরও কমে আসবে। এক্ষেত্রে দলটির প্রার্থীর সংখ্যা ত্রিশের নিচেও নেমে আসতে পারে।

নির্বাচনের বিষয়ে স্বপরিচয়ে উদ্ধৃত হতে অনিচ্ছুক জামায়াতের রাজনীতির একজন গভীর পর্যবেক্ষক  বলেন, ‘আমি মনে করি, জামায়াত স্ট্র্যাটেজিক্যালি বিএনপি-জোটের মধ্যে থেকেই নির্বাচন করবে ও স্বতন্ত্রভাবেই করবে।’ তিনি এও বলেন, ‘আমি মনে করি, অন্যান্য রাজনৈতিক দলে নির্বাচনের প্রস্তুতি যেমন শুরু হয়েছে, তেমনি জামায়াতেও শুরু হয়েছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতের নায়েবে আমিরের একজন সহচর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তিনশ আসনকে সামনে রেখেই প্রস্তুতি চলছে।’

ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনের সুযোগ নেই

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট থেকে নির্বাচন করলেও আরপিও অনুযায়ী ধানের শীষ নিয়ে প্রার্থিতা করার সুযোগ নেই জামায়াতের। আগামী নির্বাচনে জোটের কোনও দলই কমপক্ষে তিন বছরের কম সময় হলে ওই দলের প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রার্থী দিতে পারবে না।

মনোনয়নে যারা আলোচনায়

জামায়াতের সূত্রগুলো জানায়, নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বিবেচনার ক্ষেত্রে ২০০১ সালের নির্বাচনকেই আদর্শ রাখছে জামায়াত। ওই নির্বাচনে দলটির ১৭ জন প্রার্থী বিজয়ী হয়ে সংসদে যান। এই আসনগুলো হচ্ছে, দিনাজপুর-১, দিনাজপুর-৬, নীলফামারী-৩, গাইবান্ধা-১, পাবনা-১ (শহীদ), পাবনা-৫, যশোর-২, বাগেরহাট-৪, খুলনা-৫, খুলনা-৬, সাতক্ষীরা-২, সাতক্ষীরা-৩ (মরহুম), সাতক্ষীরা-৫, পিরোজপুর-১, সিলেট-৫, কুমিল্লা-১২, চট্টগ্রাম-১৪। এছাড়া ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী কক্সবাজার-২, চট্টগ্রাম-১৪ আসনকেও বিবেচনায় নিয়েছে জামায়াত। এক্ষেত্রে বর্ণিত আসনগুলোয় প্রার্থিতা নিশ্চিত করলেও প্রার্থী পরিবর্তন হতে পারে।

এ ব্যাপারে দলের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার একজন সদস্য বলেন, ‘জামায়াত অধ্যুষিত এলাকাগুলোয় প্রার্থী ম্যাটার করে না। যে কাউকেই দাঁড় করালে নির্ধারিত ভোট তারা পাবেন।’

দলীয় নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ২০০১ সালের ১৭ টি ও ২০০৮ সালের ২ টি আসনে প্রার্থিতা চূড়ান্ত হয়েছে। এই আসনগুলোয় বিজয়ীদের মধ্যে যারা মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন,  কারাগারে আছেন, তাদের কেউ-ই মনোনয়ন পাচ্ছেন না আগামী নির্বাচনে। তবে গত ৮ বছরে দলের প্রভাবশালী হয়ে ওঠা প্রায় প্রত্যেকেরই প্রার্থিতার বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত। এছাড়া উপজেলা নির্বাচনে যে এলাকাগুলোয় জয় এসেছে এবং ভোটের সংখ্যার দিক থেকে জামায়াত এগিয়ে ছিল, ওই এলাকাগুলোকেও বিবেচনায় রাখছে জামায়াত।

জামায়াতের মজলিসে শুরা ও ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তরের একাধিক দায়িত্বশীল জানান, প্রার্থিতার বিষয়ে যারা আলোচনা আছেন, তাদের উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন, জামায়াতের সেক্রেটারি ডা. শফিকুর রহমান। বিগত কোনও নির্বাচনে অংশ নেননি তিনি। এবার সিলেট অঞ্চলে প্রার্থিতা করবেন। দলের আমির মকবুল আহমাদ বার্ধক্যজনিত কারণে প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই। এছাড়া তার বিরুদ্ধে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠায় শেষ পর্যন্ত প্রার্থী নাও হতে পারেন। নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান রাজশাহী অঞ্চলে নির্বাচন করবেন।

আরেক নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার খুলনা ৫ আসনে প্রায় চূড়ান্ত। নবম সংসদে তিনি বিজয়ী ছিলেন। দিনাজপুরে ১ আসনে আগের প্রার্থী মাওলানা আবদুল্লাহ আল কাফি মারা যাওয়ায় তার স্থলে অন্য কেউ প্রার্থী হবেন। সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ কক্সবাজারে, রফিকুল ইসলাম খান সিরাজগঞ্জের একটি আসনে দাঁড়াবেন। সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের কুমিল্লা-১২-এ চূড়ান্ত।

নতুনদের মধ্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, উত্তর আমির সেলিম উদ্দিন, মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। ঢাকার পল্টন, রমনা এলাকায় বা নরসিংদীর কোনও আসনে সাবেক কমিশনার আবদুর রবও দলীয় মনোনয়ন-প্রত্যাশী।

মানবতাবিরোধী অপরাধীদের আসনগুলোয় যারা

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ইতোমধ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামীর। তার পাবনা ১ আসনে পরিবারের সদস্যদের কারও সম্ভাবনা কম। এক্ষেত্রে জেলা জামায়াতের কোনও শীর্ষ-দায়িত্বশীল নেতা প্রার্থী হতে পারেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত মাওলানা আবদুস সুবহানের পাবনা ৫ আসনে অন্য কেউ প্রার্থী হবেন। দণ্ডপ্রাপ্ত মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পিরোজপুর-১ আসনে তার দুই সন্তানের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। তবে  সাঈদীর ছেলে শামীম সাঈদী ও মাসুদ সাঈদী নির্বাচন নিয়ে আগ্রহী নন বলে জানান বাংলা ট্রিবিউনকে।

জানতে চাইলে স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদী বলেন, ‘নির্বাচন করার কোনও ইচ্ছাই নেই। তাই নির্বাচন করার প্রশ্নই ওঠে না। এছাড়া নির্বাচনের পরিবেশ নেই। দল থেকেও যোগাযোগ করা হয়নি, আমরাও করিনি।’

সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামানের এলাকা শেরপুরে কোনও আসনে তার সন্তান হাসান ইকবালের সম্ভাবনা আছে। যদিও হাসান ইকবাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দল থেকে মনোনয়ন দিলে করা যাবে। তবে এ নিয়ে আমি এখনও কিছু জানি না। তবে শেরপুরে বিএনপির প্রার্থী থাকতে পারে।’

দলের একটি সূত্রের দাবি, সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার পরিবারের কোনও সন্তানের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা কম। একইভাবে আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের ফরিদপুরের আসনে প্রার্থিতার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ঢাকা জার্নাল, মে ১৮, ২০১৭।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.