দুই ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি দাবি রেইনট্রি কর্তৃপক্ষের

মে ১৬, ২০১৭

ঢাকা জার্নাল: রাজধানীর বনানীতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত সবাইকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবি করেছে দ্য রেইনট্রি হোটেল কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে হোটেলে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ দাবি  জানান হোটেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও ঝালকাঠির সংসদ সদস্য বিএইচ হারুনের বড় ছেলে আদনান হারুন।

সংবাদ সম্মেলনে আদনান হারুন বলেন, ‘গত ১৩ মে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর হোটেলে তল্লাশী করে কিছুই পায়নি। কিন্তু পরেরদিন ১৪ মে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ অভিযান চালিয়ে ১০ বোতল মদ পেয়েছে বলে দাবি করা হয়। তারা হোটেলে কীভাবে মদ পেলো? এখন সেটা আমাদেরও প্রশ্ন, আপনাদের বিবেকের কাছে।’

তাহলে শুল্ক গোয়েন্দা আপনাদের ফাঁসানোর জন্য সঙ্গে করে মদ নিয়ে এসেছিল কিনা- সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আদনান হারুন বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের কোনও বক্তব্য নেই।’

আদনান হারুন বলেন, ‘হোটেলের জেনারেল ম্যানেজার ফ্রাঙ্ক ফরগেট ঘটনার দিন রাতে সস্ত্রীক হোটেলেই অবস্থান করছিলেন। ওই রাতে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত তিনি হোটেল কার্যক্রমে কোনও অস্বাভাবিকতা দেখেননি বলে জানিয়েছেন। তবে হোটেলের রুমগুলো সাউন্ড প্রুফ হওয়ায় কক্ষের ভেতর কোনও অপরাধ হলে হোটেল কর্মচারীদের পক্ষে বাইরে থেকে সেটা বুঝার কোনও সুযোগ ছিল না। সুতরাং হোটেলের ৭০০ ও ৭০১ নম্বর কক্ষে ভিকটিমদের সঙ্গে এ ধরনের অপরাধ ঘটেছে কিনা সেটা আদালতে প্রমাণিত হবে এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সেটা তদন্ত করছে, যা প্রক্রিয়াধীন।’

অপরদিকে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হোটেলের পরিচালক মাহিন হারুন এবং ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি সাফাতের বন্ধুত্বের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আসামি সাফাত একদিনই এ হোটেলে এসেছিলেন এবং রাতযাপন করেছিলেন। জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মাহিন হারুন কেক নিয়ে গেছে বলে যে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে তাতে মাহিন হারুনের ব্যক্তিগত কোনও সংশ্লিষ্টতা নেই।’

হোটেলের ছাদে কতক্ষণ জন্মদিনের অনুষ্ঠান চলেছিল- সে বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে কোনও জবাব দেননি আদনান হারুন।

আপনারা কোনও প্রশ্নের জবাব দিতে চাইছেন না কেন- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে হোটেলের এমডি বলেন, ‘আমরা আপনাদের একটি প্রেস রিলিজ দিয়েছি। সেখানে আমাদের বক্তব্য লেখা আছে।’

তিনি বলেন, ‘অপরাধীদের সহযোগিতা করার জন্য ঘটনার দিনের সিসিটিভির ফুটেজ মুছে ফেলা হয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরও সত্য নয়। এ ধরনের অভিযোগ ভিত্তিহীন। যা হোটেলের সুনাম ও ভবিষ্যৎ নষ্ট করছে এবং হোটেলকে ক্ষতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এমনিতেই এ ঘটনার প্রেক্ষিতে হোটেলের ব্যবসা ধ্বংসের মুখে পতিত হতে চলেছে। কারণ গত এক সপ্তাহ ধরে হোটেলে কোনও অতিথি আসেননি। এমনকি আগামী দুই সপ্তাহে যারা হোটেল বুকিং দিয়েছিলেন তারা সবাই তা বাতিল করেছেন। আর হোটেলে অবস্থানরত অতিথিরা হোটেল ত্যাগ করেছেন। রেইন ট্রি হোটেল সাফাত-নাঈম চক্রের অপরাধের সবচেয়ে বড় ক্ষতিগ্রস্ত।’

উল্লেখ্য, ধর্ষণের শিকার হওয়ার অভিযোগ এনে গত ৬ মে বনানী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন বেসকারকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী। তারা মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, ‘২৮ মার্চ পূর্বপরিচিত সাফাত আহমেদের জন্মদিনের দাওয়াত দিয়ে তাদের বনানীর কে ব্লকের ২৭ নম্বর সড়কের ৪৯ নম্বরে দ্য রেইন ট্রি নামের হোটেলে নিয়ে যায়। সেখানে দুই তরুণীকে হোটেলের একটি কক্ষে আটকে রেখে মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে ধর্ষণ করে সাফাত ও নাঈম। এ ঘটনা সাফাতের গাড়িচালক বিল্লালকে দিয়ে ভিডিও করানো হয় বলেও উল্লেখ করা হয় এজাহারে। ধর্ষণ মামলার আসামিরা হলো- সাফাত আহমদ, নাঈম আশরাফ, সাদমান সাকিফ, সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও দেহরক্ষী আবুল কালাম আজাদ।

ঢাকা জার্নাল, মে ১৬, ২০১৭।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.