‘ইমাম মোস্তাফিজুরকে হত্যা করা ইমানি দায়িত্ব’

মে ৯, ২০১৭

ঢাকা জার্নাল : আমাদের রাসুল (সা.) এর হাদিসকে যারা বিকৃত করেছে ও তার মান-সন্মানে আঘাত হেনেছে, তাদেরকে সাহাবা কেরামরা কখনওই সহ্য করেনি। ইমাম মোস্তাফিজুর আশপাশের মুসলমানদের বিভ্রান্ত করছে, তাদের ঈমান নষ্ট করে কাদিয়ানি বানাচ্ছে। এই কারণেই ওই কাফের মোস্তাফিজকে হত্যা করা ইমানি দায়িত্ব বলেই তাকে দা দিয়ে কোপানো হয়েছে ফেলার জন্য।’ বলিষ্ঠ কণ্ঠেই এই কথাগুলো বলছিল ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৮নম্বর সার্জারি ইউনিটের মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নেওয়া আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মসজিদের ইমাম মোস্তাফিজুর রহমানের ওপর হামলাকারী আব্দুল আহাদ মোহাম্মদ উল্লাহ।

আহাদ জানায়, ইমামকে হামলাকারী অপর দুইজন ঈশ্বরগঞ্জ তার সহপাঠী ইসলামপুর দারুস সুন্নাত জাফরিয়া মাদ্রাসার ইলিয়াস হোসেন ও জহিরুল ইসলাম।

আহাদ নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দার চারিয়া গ্রামের মোসলেম উদ্দিনের ছেলে। সে গত ১ বছর ধরে ইসলামপুর দারুস সুন্নাত জাফরিয়া মাদ্রাসায় লেখাপড়া করছে। তারা ৫ ভাই ও ৫ বোন। সে এর আগে চট্টগ্রামের মেকল মাদ্রাসায় ১ বছর লেখাপড়া করেছে।

আহাদ আরও জানায়, গত তিন সপ্তাহ আগে সে জানতে পেরেছে ইমাম মোস্তাফিজুর রহমান আশপাশের মুসলমানদের বিভ্রান্ত করে ইমান নষ্ট করে কাদিয়ানি বানাচ্ছে। এরপরই সে পরকিল্পনা করে এই কাফেরকে আর দুনিয়ায় রাখা যাবে না। গত তিনদিন আগে ধারালো দা সংগ্রহ করে ইলিয়াস ও জহিরুলকে সঙ্গে নিয়ে ঈশ্বরগঞ্জে আসে ইমামকে মারার জন্য।

আহাদ জানায়, সে কোনও দল বা গোষ্ঠীর সদস্য না। নিজ উদ্যোগেই ইমামকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে সে।

জানা গেছে, ঈশ্বরগঞ্জের সরিষা ইউনিয়নের কানপুর গাংপাড়া আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মসজিদের ইমাম মোস্তাফিজুর রহমানের গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরের কাহালোতে। তিনি গত দুই বছর ধরে এই মসজিদে ইমামতি করছেন। মসজিদের পাশেই তিনি স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন।

ওই মসজিদের মোয়াজ্জিন আইয়ুব আলী জানান, ইমাম মোস্তাফিজুর রহমান নিরিবিলি জীবন যাপন করতেন। তিনি আশপাশের মুসলমনাদের মসজিদে এনে ধর্মের কথা শোনার জন্য দাওয়াত দিতেন। অনেকেই আসতেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানগুলোতে।

তিনি আরও জানান, গত দুই মাস আগে ঢাকা থেকে কোনও একটি মাদ্রাসার বেশ কয়েকজন হুজুর এবং ছাত্র আশপাশের মুসলমান সম্প্রদায়ের লোকজনের কাছে আসেন এবং আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মসজিদটি এই এলাকায় রাখা যাবে না বলে ঘোষণা দিয়ে যান। এরপরই এই ঘটনাটি ঘটেছে দাবি করেছেন তিনি।

আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ঢাকার কেন্দ্রীয় নেতা আহমেদ তাফসির চৌধুরী বলেন, ‘হামলাকারীরা সুপরিকল্পিতভাবেই মোস্তাফিজুরকে হত্যার উদ্দেশেই হামলা করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যারা আমাদের সম্প্রদায়ের মানুষজনকে দেখতে পারে না, তারাই এই হামলা করেছে।’

এদিকে সরিষা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহজাহান ভুইয়া জানান, ইমাম মোস্তাফিজুরের ওপর হামলার ঘটনাটি ন্যাক্কারজনক। তিনি তদন্তপূর্বক হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।

পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম জানান, গুরুতর আহত ইমাম মোস্তাফিজুর রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতেই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে কী কারণে হামলাটি হয়েছে তা তদন্ত করার পর জানা যাবে।

উল্লেখ্য, সোমবার রাত পৌনে ৯টার দিকে ঈশ্বরগঞ্জের সরিষা এলাকার কানপুর গাংপাড়া আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মসজিদের ইমাম মোস্তাফিজুর রহমান এশার নামাজ শেষে বের হলে ৩ দুর্বৃত্ত হামলা চালিয়ে কুপিয়ে আহত করে। পরে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে রাত ২টার দিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়।

এদিকে হামলার সময় স্থানীয় জনতা আব্দুল আহাদ নামে এক হামলাকারীকে আটক করে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে তুলে দেয়।

ঢাকা জার্নাল, মে ০৯, ২০১৭।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.