প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফর: সামরিক সহযোগিতার নতুন অধ্যায় শুরু

এপ্রিল ৮, ২০১৭

ঢাকা জার্নাল : সামরিক সম্পর্কের ভাবনা মাথায় রেখে ঢাকা ও দিল্লি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে একটি নতুন অধ্যায় শুরুর প্রয়াস নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শনিবার আনুষ্ঠানিক বৈঠকে মিলিত হবেন।

বাংলাদেশ চায় পানির হিস্যা, আর ভারত চায় সামরিক সহযোগিতা চুক্তি।আগামীকালের বৈঠকে এদুটি বিষয় নিয়ে জোরালো আলোচনা হবে বলে আশা করছেন সবাই।

এ বৈঠকে দুদেশের মধ্যকার সম্পর্কে একটি নতুন কৌশলগত অধ্যায় শুরু হবে। কারণ এর আগে বাংলাদেশ অন্য কোনও দেশের সঙ্গে সামরিক চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক সই করেনি।

এ বৈঠকের পরে সামরিক সমঝোতা স্মারকসহ ৩০টির বেশি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

শেখ হাসিনা দিল্লি পৌঁছানোর পর নরেন্দ্র মোদি এক টুইটে বলেন, ‘আমি এবং শেখ হাসিনা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে একটি নতুন পর্যায়ে নিয়ে যাবার জন্য।’

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরেক টুইটে জানায়, ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিমানবন্দরে যান।

দুই প্রধানমন্ত্রীর আলোচনার আগে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা পানি নিয়ে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আলোচনা করছেন। শুক্রবার সকালে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক ভারতের পররাষ্ট্র সচিব এস জয়শংকরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।এর আগে বৃহস্পতিবার তিনি ভারতের একজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার সঙ্গেও বৈঠক করেন। উল্লেখ্য, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক গত বুধবার দিল্লি পৌঁছান।

এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের স্বরাষ্ট্র সচিব মলয় কুমার দে বৃহস্পতিবার  ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দফতরের মুখ্য সচিব নৃপেন্দ্র মিশ্রার সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে সূত্র জানায়।

শেখ হাসিনার সম্মানে নরেন্দ্র মোদি একটি রাষ্ট্রীয় ভোজসভার আয়োজন করেছেন, যেখানে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বানার্জিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

পানি সহযোগিতা

বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের দাবি তিস্তাচুক্তি এবারের সফরে হচ্ছে না, সেটি মোটামুটিভাবে পরিষ্কার করে দিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।সেজন্য বাংলাদেশ তিস্তাচুক্তি স্বাক্ষরের একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা নিয়ে দর কষাকষি করছে, যেটি এখনও অব্দি চলছে।

বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বাংলাদেশের একটি সাংবাদিক প্রতিনিধিদলকে বলেছেন, ৪৮ ঘণ্টার ভেতরে কোনও নাটকীয় পরিবর্তন হবে বলে কোনও আভাস নেই। এছাড়া একই দিনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, এ বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাব দেখানো হয়।

গঙ্গা ব্যারাজ নিয়ে একটি ইতিবাচক ফলাফলের জন্যও বাংলাদেশ একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কাজ করতে আগ্রহী এবং সেটি নিয়েও দর কষাকষি চলছে।পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, পানি একটি স্পর্শকাতর বিষয় এবং এ বিষয়ে চূড়ান্ত ঘোষণা না আসা পর্যন্ত কিছুই বলা যাবে না।

সামরিক সহযোগিতা

ভারতের প্রস্তাবিত সামরিক চুক্তির বদলে একটি ব্যবসাবান্ধব সমঝোতা স্মারক করার বিষয়ে একমত হয়েছে বাংলাদেশ। এ সমঝোতা স্মারকে বাণিজ্যিক উপাদান, প্রতিরক্ষা সচিব এবং আমর্ড ফোর্সেস ডিভিশনের প্রধান পর্যায়ে নিয়মিত বার্ষিক বৈঠক, তথ্য আদান-প্রদান, যৌথ মহড়া, প্রশিক্ষণ ইত্যাদি বিষয়গুলো আছে।

সামরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে দুটি সমঝোতা স্মারক সই হবে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে,এর একটি হলো সামরিক সহযোগিতা কাঠামো সমঝোতা স্মারক এবং অপরটি হচ্ছে ভারতীয় অস্ত্র ক্রয়ের  জন্য সেদেশ থেকে ৫০ কোটি ডলার ঋণ নেওয়ার জন্য সমঝোতা স্মারক।

এ চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। কারণ এর আগে কোনও দেশের সঙ্গে বাংলাদেশ এ ধরনের সহযোগিতা স্মারক সই করেনি।

২০০২ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া চীন সফরের সময়ে একটি মিলিটারি টেকনিক্যাল সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন।

সামরিক সহযোগিতা কাঠামো সমঝোতা স্মারক- একটি ব্যবসাবান্ধব বাণিজ্যিক উপাদানে সমৃদ্ধ একটি সমঝোতা স্মারক, এতে জয়েন্ট ভেঞ্চারসহ অন্যান্য ব্যবসারও সুযোগ আছে।

প্রকল্প সহযোগিতা

প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরে ১৮টি প্রকল্পে সহায়তা করার জন্য  বাংলাদেশকে ৪৫০ কোটি ডলারের একটি লাইন অফ ক্রেডিট দেবে ভারত। এটি প্রথম দুটি লাইন অফ ক্রেডিটের থেকে আলাদা। কারণ আগের দুটিতে প্রথমে অর্থ নির্দিষ্ট করে পরে প্রকল্প ঠিক করা হয়েছিল। এবারে আগে প্রকল্প ঠিক করে পরে অর্থের পরিমাণ ঠিক করা হয়েছে। আগের দুটি লাইন অফ ক্রেডিটে ভারত ৩০০ কোটি ডলার দিয়েছিল।

হাসিনাকে অভ্যর্থনা

প্রচলিত প্রটোকল ভেঙে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিমানবন্দরে শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানান। কথা ছিল ভারী শিল্প প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাবেন। কিন্তু শেখ হাসিনা শুক্রবার দুপুরে দিল্লি এসে পৌঁছালে নরেন্দ্র মোদি নিজে বাংলাদেশী মেহমানকে স্বাগত জানানোর জন্য বিমানবন্দরে চলে যান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির আমন্ত্রণে রাষ্ট্রপতি ভবনে অবস্থান করছেন।

এছাড়া দিল্লির একটি পুরনো সড়ককে বঙ্গবন্ধুর নামে নামকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দিল্লি সরকার।

শনিবার আনুষ্ঠানিক বৈঠকের আগে দুই প্রধানমন্ত্রী একান্তে আলাপ করবেন। বৈঠকের পরে চুক্তি স্বাক্ষর হবে এবং সংবাদ সম্মেলনে তারা বিবৃতি পাঠ করবেন কিন্তু কোনও প্রশ্ন নেবেন না।

সম্মাননা

দীর্ঘ ৪৫ বছর পরে মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় শহীদদের সম্মাননা দেওয়ার  সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। তারই ধারাবাহিকতায় শনিবার (৮ এপ্রিল) মোট ১৬৬১ জনের মধ্যে সাতজন শহীদ পরিবারকে দিল্লির মানেকশ সেন্টারে মুক্তিযুদ্ধের সম্মাননা প্রদান করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরবর্তীতে সবাইকে এ সম্মাননা দেওয়া হবে।

যে সাত জনকে প্রাথমিকভাবে সম্মাননা দেওয়ার জন্য বাছাই করা হয়েছে, এরমধ্যে চার জন সেনাবাহিনীর, একজন নৌবাহিনীর, একজন বিমানবাহিনীর এবং একজন বিএসএফের জওয়ান।

সেনাবাহিনীর চার জনের মধ্যে আছেন শহীদ ল্যান্স নায়েক আলবার্ট এক্কা, মেজর অনুপ সিং গোলাট, সুবেদার মালকিত সিং এবং হাবিলদার সুগন সিং। নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট সমীর দাস, বিমানবাহিনীর স্কোয়াড্রন লিডার এবি সুমন্ত এবং বিএসএফ এর ল্যান্স নায়েক মোহিনী রঞ্জন চক্রবর্তী।

চুক্তির ক্ষেত্র

শনিবার (৮এপ্রিল) সামরিক, প্রতিরক্ষা ক্রয়, প্রকল্প সহায়তা, জ্বালানি, নিউক্লিয়ার, তথ্য প্রযুক্তি, বাণিজ্য, মহাকাশ ও অন্যান্য ক্ষেত্রে ৩০টির বেশি চুক্তি স্বাক্ষর হতে পারে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে পর।

ঢাকা জার্নাল, এপ্রিল ০৮, ২০১৭।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.