দেশের স্বার্থবিরোধী কোনো চুক্তি জনগণ মেনে নেবে না

এপ্রিল ৮, ২০১৭

ঢাকা জার্নাল : প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরে ভারতের সঙ্গে ঝুলে থাকা তিস্তার পানির হিস্যাসহ ন্যায্য দাবিতে চুক্তির দাবিতে এবং দেশের স্বার্থবিরোধী ‘প্রতিরক্ষা চুক্তি’ করার উদ্যোগ গ্রহণের প্রতিবাদে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ আয়োজিত বিক্ষোভ-সমাবেশে সিপিবি’র সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, সীমান্তে হত্যা, টিপাইমুখ বাঁধ, রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বাণিজ্য ঘাটতিসহ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার অমীংমাসিত অনেক বিরোধ দীর্ঘদিন ঝুলে আছে। জনগণ আশা করেছিল প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরে এসব বিষয়ে সমাধান হবে। বিশেষ করে বহু আকাক্সিক্ষত ‘তিস্তা চুক্তি’ স্বাক্ষর হবে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুকে বাদ দিয়ে ভারতের স্বার্থে ‘প্রতিরক্ষা চুক্তি’ স্বাক্ষরের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দেশের স্বার্থবিরোধী কোনো চুক্তি বাংলাদেশের জনগণ মেনে নেবে না।
আজ ৭ এপ্রিল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ-সমাবেশে কমরেড সেলিম সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন বাসদ-এর সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান, বাসদ-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ, সিপিবি’র প্রেসিডিয়াম সদস্য কমরেড অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন, সিপিবি’র ঢাকা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড ডা. সাজেদুল হক রুবেল। সমাবেশটি পরিচালনা করেন বাসদ নেতা জুলফিকার আলী।
সমাবেশে কমরেড সেলিম আরো বলেন, ‘জোট নিরপেক্ষতা’ ও শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থানের নীতির জন্য বাংলাদেশের জনগণ দীর্ঘদিন সংগ্রাম করেছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে সেই নীতি প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল। এই নীতিকে লঙ্ঘন করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ নানা পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের অশুভ সামরিক চুক্তি, সৌদি আরবের নেতৃত্বে গঠিত সামরিক জোটে অংশগ্রহণ ইত্যাদি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। একইভাবে এখন ভারতের সঙ্গে যে ‘প্রতিরক্ষা চুক্তি’ স্বাক্ষরের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই উদ্যোগ জোট-নিরপেক্ষতা ও শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থানের নীতি এবং বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী। ‘তিস্তা চুক্তি’ না করে ‘প্রতিরক্ষা চুক্তি’ করলে দু দেশের জনগণের বন্ধুত্ব হুমকির মধ্যে পড়বে।
তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা দাবি করে কমরেড সেলিম বলেন, ‘তিস্তা চুক্তি’র আশ্বাস দেয়া হচ্ছে। ভারত তাদের সুবিধা আদায় করে নেবে, আর আমাদের দেবে আশ্বাস–এটা আমরা মানবো না। যেনতেন চুক্তি আমরা মানবো না। তিস্তাসহ অভিন্ন সকল নদীর স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করে, সমতা ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে অবশিষ্ট পানি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বণ্টন করতে হবে। ভাটির দেশের সঙ্গে আলোচনা ও সম্মতি ছাড়া উজানে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা নিষিদ্ধ করতে হবে। এই নীতির ভিত্তিতে দ্রুতই ‘তিস্তা চুক্তি’ স্বাক্ষর করতে হবে।
কমরেড খালেকুজ্জামান বলেন, সকল নিয়ম-কানুন ভেঙে তিস্তাসহ অভিন্ন নদীগুলোর পানি ভারত একতরফাভাবে প্রত্যাহার করায় বাংলাদেশ মরুকরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মরুকরণের হাত থেকে বাংলাদেশকে বাঁচাতে তিস্তাসহ সকল অভিন্ন নদীর স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পারস্পরিক স্বার্থে সহযোগিতা এবং জনগণের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, আন্তরিক সৌহার্দ্য বৃদ্ধি করতে হলে, বাংলাদেশের ন্যায্য দাবি মেনে নিতে হবে।
কমরেড খালেকুজ্জামান আরো বলেন, ভারতের সাম্প্রদায়িক-প্রতিক্রিয়াশীল শাসকগোষ্ঠী তাদের অশুভ উদ্দেশ্য সাধনে বাংলাদেশ থেকে অন্যায্য সুবিধা আদায় করে নিতে চায়। এ ব্যাপারে আমাদের সতর্ক ও সোচ্চার থাকতে হবে। সরকার যদি ভারতের স্বার্থে দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দেয়, তবে জনগণ সরকারকে সমুচিত জবাব দেবে।
সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুরানা পল্টন মোড়ে এসে শেষ হয়।
ঢাকা জার্নাল,  মার্চ ৭, ২০১৭।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.