বৃহত্তর ফরিদপুরকে নিয়ে পৃথক বিভাগ হবে

মার্চ ২৯, ২০১৭

ঢাকা জার্নাল : অচিরেই বৃহত্তর ফরিদপুরের জেলাগুলোকে নিয়ে পৃথক বিভাগ করা হবে বলে ঘোষণা দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর ও মাদারীপুরকে নিয়ে পৃথক বিভাগের পরিকল্পনা রয়েছে এবং তা অচিরেই বাস্তবায়ন করা হবে।

ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে জনগণ যেন আরো বেশি সেবা পায়, কাজ পায় সে লক্ষ্যে নতুন এই বিভাগ করা হবে বলেও জানান তিনি। বুধবার (২৯ মার্চ) বিকেলে ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের শহর শাখার মাঠে জেলা আওয়ামী লীগের জনসভায় এসব কথা জানান তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঢাকা বিভাগ ভেঙে ময়মনসিংহ বিভাগ করেছি। ঢাকা বিভাগকে ভেঙে ফরিদপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর ও গোপালগঞ্জকে নিয়ে আরেকটি বিভাগ নতুন করবো’।

ফরিদপুরের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘নৌকায় ভোট দিয়েছেন, উন্নয়ন পেয়েছেন’। ‘জাতির পিতার স্মৃতি বিজড়িত ফরিদপুর সব সময় অবহেলিত ছিলো।

বিএনপির সময় ফরিদপুরের কোনো উন্নয়ন হয়নি। আওয়ামী লীগের আমলে সব উন্নয়ন হয়েছে’। জনসাধারণের কাছে গিয়ে আগামী নির্বাচনের জন্য নৌকা মার্কায় ভোট চাইতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নির্দেশনাও দেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘নৌকা মার্কার জন্য সাধারণ মানুষের কাছে ভোট চাইবেন’। ২০১৯ সালের নির্বাচনে দেশবাসীর কাছেও নৌকায় ভোট চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘উন্নয়নের কাজ অব্যহত রাখতে আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট দিন’। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়কার উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌকায় ভোট দিলে বাংলাদেশের মানুষ কিছু পায়। বিএনপি আমলের তুলনা করে তিনি বলেন, ‘২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর কি অত্যাচার করেছে। সারা দেশে তারা সন্ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছিলো। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ, বাংলা ভাই সৃষ্টি করেছিলো’। ‘বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে মানুষের টাকা লুট করে সম্পদের পাহাড় বানিয়েছে। জনগণের কল্যাণে কোনো কাজ করেনি’। বিগত সময়ে বিএনপি-জামায়াতের নির্বাচন ঠেকানো এবং সরকার পতনের আন্দোলনের নামে সহিংসতার কথা ‍তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০১৩, ১৪, ১৫ সালে আন্দোলনের নামে মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। এয়ার কন্ডিশন্ড রুমে বসে খালেদা জিয়া হুকুম দেন। আর বিএনপি-জামায়াত মানুষকে পেট্রোল বোমা দিয়ে পুড়িয়ে পুড়িয়ে হত্যা করেছে’। ‘বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাসের হাত থেকে এমনকি অন্তঃসত্ত্বা নারীরাও রক্ষা পাননি। তাদের পেট্রোল বোমার হাত থেকে রক্ষা পায়নি কোমলমতি শিশু ও শিক্ষকরাও’। আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, ‘বিএনপির রাজনীতি পেট্রোল বোমা দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা। খালেদা জিয়া বলেছিলেন, সরকার উৎখাত না করে ঘরে ফিরবেন না। বাংলাদেশের মানুষ যখন প্রতিরোধ গড়ে তোলেন, তখন নাকে খত দিয়ে ঘরে ফিরে যেতে হয়েছিলো’।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছাত্র-ছাত্রীদের কাজ লেখাপড়া শেখা। জঙ্গি-সন্ত্রাস-মাদকের পথ পরিহার করতে হবে। শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোনো শিক্ষার্থী স্কুলে অনুপস্থিত থাকলে খোঁজ নিন’। বাবা-মা, অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘সন্তানের খোঁজ নিতে হবে। তারা কার সঙ্গে মেশে, কি করে, কোথায় যায় খোঁজ রাখতে হবে’। ‘বাবা-মা, শিক্ষক, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে অনুরোধ একটা ছেলে-মেয়েও যেন সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের পথে না যায়। ইমাম সাহেবদের বলবো, সচেতনতা সৃষ্টিসহ কেউ যাতে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের পথে না যায় সে বিষয়ে কাজ করুন‘।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলামে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, আত্মহননের স্থান নেই। যারা এসব করছে, তারা ইসলামের বদনাম করছে’। জনসভায় বক্তব্য দেন জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী এমপি, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এমপি, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ, কর্নেল (অব.) ফারুক খান, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী স্থানীয় সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, হাবিবুর রহমান সিরাজ, এসএম কামাল হোসেন প্রমুখ। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে আরও ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এমপি, বাগেরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ হেলাল প্রমুখ।

জনসভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহা। সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হোসেন। ওবায়দুল কাদের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থেকে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, দল করলে দলের শৃঙ্খলা মানতে হবে। সকাল থেকে জনসভাস্থলে জড়ো হতে থাকেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

ঢাক-ঢোল পিটিয়ে, কাপড়, বাঁশ কাঠের নৌকা নিয়ে অনেকে আসেন। ফরিদপুর ছাড়াও রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুরসহ আশপাশের জেলা থেকেও নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষেরা যোগ দেন এ জনসভায়। জনসভা শুরুর আগেই পুরো মাঠ কানায় কানায় ভরে যায়। আশপাশের রাস্তাগুলোতে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অবস্থান নেন। উৎসবমুখর পরিবেশে নেতাকর্মীদের মধ্যে ছিলো উচ্ছ্বাস। প্রধানমন্ত্রীর সফরকে ঘিরে গোটা ফরিদপুর শহর নৌকা সম্বলিত তোরণ, ব্যানার-ফেস্টুন, বিলবোর্ডে সাজানোর পাশাপাশি আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়। জনসভাস্থল থেকে প্রধানমন্ত্রী যেসব উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন সেগুলো হলো- উদ্বোধন: ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, পল্লীকবি জসীম উদ্‌দীন সংগ্রহশালা, ফরিদপুর ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলোজি, শিশু একাডেমি, কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের উপ-মহা পরিদর্শকের কার্যালয়, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, ফরিদপুর ৫০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্লান্ট, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের একাডেমিক কাম পরীক্ষা হল, সদর উপজেলার চর কমলাপুর খেয়াঘাট থেকে বিলমামুদপুর স্কুল সড়কে কুমার নদীতে ৯৬ মিটার আরসিসি ব্রিজ, ভাঙ্গা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন, মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নয়ন, আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস, বিএসটিআই ভবন, ভাঙ্গা থানা ভবন, মধুখালী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, সদর উপজেলা থেকে বাখুণ্ডা জিসি হয়ে রসুলপুর ভায়া চরনিখুরদি সড়ক, সদর উপজেলার ডিক্রিরচর ইউনিয়নের মুন্সিডাঙ্গী কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ৩৩/১১ কেভি হারুকান্দি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র।

ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন: কুমার নদ পুনর্খনন, আলফাডাঙ্গা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ফরিদপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়, পুলিশ হাসপাতাল, পুলিশ অফিসার্স মেস, সালথা টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের একাডেমিক কাম প্রশাসনিক ভবন, চন্দ্রপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র, ফরিদপুর সরকারি সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজের ছাত্রী নিবাস, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, ১৫০০ আসন বিশিষ্ট মাল্টিপারপাস হল রুম, সালথা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, সদরপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন প্রকল্প।

এর আগে দীর্ঘদিন পরে মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের ফরিদপুরের শ্বশুরবাড়িতে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে জোহরের নামাজ, বিশ্রাম ও মধ্যাহ্ন ভোজ সেরে জনসভাস্থলে যান তিনি। বেলা পৌনে একটার দিকে পুতুলের শ্বশুর স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সদর উপজেলার বদরপুরের বাড়ি আফসানা মঞ্জিলে পৌছান শেখ হাসিনা।

পুতুল ও তার স্বামী খন্দকার মাশরুর হোসেনসহ শ্বশুরবাড়ির স্বজনেরা আন্তরিকভাবে স্বাগত জানান তাকে। বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে হেলিকপ্টারযোগে ফরিদপুর শহরের শেখ জামাল স্টেডিয়ামে অবতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। তাকে স্বাগত জানান স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া ও পুলিশ সুপার সুভাষ চন্দ্র সাহা। আরও ছিলেন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার হেলালউদ্দিন আহমেদ, পুলিশের ভারপ্রাপ্ত উপ-মহাপরিদর্শক মাহাবুবুর রহমান, সিরাজগঞ্জ সদর আসনের সংসদ সদস্য হাবিব এ মিল্লাত, ফরিদপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মৃধা, ফরিদপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার মোহতেসাম হোসেন বাবর, ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহা ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ হোসেন প্রমুখ।

স্টেডিয়াম থেকে সার্কিট হাউসে গেলে প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার দেন পুলিশের চৌকস দলের সদস্যরা। সার্কিট হাউসে বিশ্রাম নিয়ে বেলা সোয়া বারটার দিকে পুতুলের শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশে রওনা হন তিনি। জনসভা শেষে বিকেলে ঢাকায় ফিরে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ঢাকা জার্নাল, মার্চ ২৯, ২০১৭।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.