কেন টার্গেট হলেন সাংবাদিক শিমুল?

ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১৭

ঢাকা জার্নাল : সাংবাদিক আব্দুল হাকিম শিমুল কেন টার্গেট হলেন? তাকে লক্ষ্য করে কেন গুলি করা হলো? শিমুলের স্বজন ও সহকর্মীদের মনে দেখা দিয়েছে এসব প্রশ্ন।

এলাকাবাসী জানিয়েছে, শাহজাদপুর উপজেলার সমকাল প্রতিনিধি শিমুল (৪২) ছিলেন একজন সৎ ও নির্ভীক সাংবাদিক। শিমুলের কাছের মানুষ, দৈনিক আমার সংবাদের শাহজাদপুর প্রতিনিধি জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনার সময় শিমুলের সঙ্গে ছিলাম। সে খুব কাছ থেকে ছোট একটি ক্যামেরা দিয়ে সংঘর্ষের ছবি তুলছিল।

পৌর মেয়রের বাড়িতে লোকজন হামলা চালালে তার বাড়ি থেকে ৪/৫ রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়। কে বা কারা গুলি করেছে, সেটা আমি দেখিনি। একটি গুলি শিমুলের ডান চোখ দিয়ে ঢুকে মাথা দিয়ে বের হয়ে যায়।’

শিমুলের মামাতো ভাই, পল্লী চিকিৎসক ডা. আবুল কালাম আজাদ এ ঘটনার জন্য দায়ী করেছেন শাহজাদপুর পৌর মেয়র হালিমুল হক মিরুকে।  তিনি বলেন, ‘পৌর মেয়র পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে শিমুলকে। আমরা মেয়র ও তার দুভাইয়ের ফাঁসি চাই।’

তবে এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন পৌর মেয়র মিরু।  তিনি দাবি করেন, ‘শিমুল আমার খুব আদরের ছিল। তার আচরণ বা ব্যবহারে আমি অসন্তুষ্ট ছিলাম না।  আমার বাড়িতে হামলার সময় ছবি তুলতে গিয়ে সে প্রতিপক্ষের ছোড়া ককটেলের আঘাতে গুরুতর আহত হয়।’

যদিও শুক্রবার রাতে ময়নাতদন্তে শিমুলের মাথায় গুলি পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন সিরাজগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. শেখ মনজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘তিন সদস্যের একটি চিকিৎসক দল রাতে শিমুলের মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেছেন। আমি নিজেও ময়নাতদন্তের সময় উপস্থিত ছিলাম। শিমুলের মাথায় একটি গুলি পাওয়া গেছে।’

শাহজাদপুরের অনেকের অভিযোগ, কয়েকজন সহকর্মী ও পৌরবাসীদের সঙ্গে মেয়রের পৌর ট্যাক্স বৃদ্ধির প্রতিবাদ করাই শিমুলের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল।  তবে এই অভিযোগও উড়িয়ে দিয়ে পৌর মেয়র মিরু বলেন, ‘শাহজাদপুরের কিছু মানুষ বর্ধিত ট্যাক্সের বিষয়ে রং-চং দিয়ে আমাকে বিপাকে ফেলার পাঁয়তারা করছে। সেই সঙ্গে শাহজাদপুরের পরিবেশ অস্থিতিশীল করারও চেষ্টা করছে।’

এ বিষয়ে শিমুলের গ্রাম মাদলার ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এই ঘটনার সঙ্গে ট্যাক্সের কোনও সম্পর্ক নেই। শিমুলকে পৌর মেয়র হালিমুল হক মিরু এবং তার ভাই পিন্টু ও মিন্টু পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। এটা সবাই জানে।’ তিনি আরও বলেন, ‘শাহজাদপুর পৌরসভা নির্বাচনের সময় তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। সে সময় মিরু বহিরাগত ভাড়াটে সন্ত্রাসী নিয়ে এসে ভোট সন্ত্রাস চালান। তার অনুগতরা সাবেক মেয়র বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ভিপি আব্দুর রহিমের নির্বাচনি ক্যাম্প ভাঙচুর ও সমর্থকদের মারধর করে। ছাত্রলীগ নেতা কাজলকেও মারধর করে তারা।’

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার দুপুরে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষ চলাকালে পৌর মেয়র হালিমুল হক মিরুর শটগানের গুলিতে শিমুল আহত হন।

শাহজাদপুরের দিলরুবা বাস টার্মিনাল থেকে উপজেলা সদর পর্যন্ত রাস্তার কাজ নিয়ে কালীবাড়ি এলাকায় শাহজাদপুর পৌর মেয়র মিরুর ছোট ভাই হাসিবুল ইসলাম পিন্টু পৌর আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ভিপি রহিমের শ্যালক ছাত্রনেতা বিজয়কে বেধড়ক মারধর করে। এতে তার হাত-পা ভেঙে যায়।

এ খবর ছড়িয়ে পড়লে দলের কর্মী-সমর্থক ও বিজয়ের মহল্লা কান্দাপাড়ার লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে দিলরুবা বাস টার্মিনাল এলাকায় গিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে। এক পর্যায়ে অবরোধকারীদের একটি অংশ মনিরামপুর এলাকায় অবস্থিত পৌর মেয়রের বাড়ি ঘিরে ইট-পাটকেল মারতে থাকে। এসময় মেয়র তার নিজের শটগান দিয়ে গুলি করলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত শিমুলের মাথায় ও মুখে গুলি লাগে। শুক্রবার ঢাকায় নেওয়ার পথে দুপুরে মারা যান তিনি।

ঢাকা জার্নাল, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৭।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.