সাঁওতাল পল্লীতে আগুন: আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জড়িত

জানুয়ারি ৩১, ২০১৭

ঢাকা জার্নাল : গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতাল পল্লীতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় স্থানীয়দের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েকজন সদস্য জড়িত ছিল উল্লেখ করে বিচারিক তদন্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টে জমা দেওয়া হয়েছে। সোমবার সংশ্লিষ্ট আদালতে এই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। মঙ্গলবার শুনানি শেষে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।

গত ১৪ ডিসেম্বর সাঁওতাল পল্লীতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় পুলিশের জড়িত থাকার অভিযোগ তদন্ত করে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। গাইবান্ধার মুখ্য বিচারিক হাকিমের প্রতি এই নির্দেশ দেওয়া হয়।

হাইকোর্টের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (প্রশাসন) সাব্বির ফয়েজ জানান, তিনি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবেন না। আদালতে কেউ জমা দিলে দিতে পারে।

বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। পাশাপাশি ওই ঘটনায় দায়ের হওয়া দুটি এজাহারকে সমান গুরুত্ব দিয়ে তদন্তের ব্যবস্থা করতে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজিকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। আদেশে বলা হয়, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এই তদন্ত করবেন। তদন্তের তত্ত্বাবধানে থাকবেন পুলিশ সুপারের নিচে নন এমন কোনও কর্মকর্তা।

প্রসঙ্গত, গত ৬ নভেম্বর গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় রংপুর চিনিকলের জমিতে আখ কাটাকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে তিনজন সাঁওতাল নিহত হন। এই ঘটনায় আহত হন অন্তত ২০ জন।

গত ১২ ডিসেম্বর সাঁওতালদের ঘরবাড়িতে প্রথম আগুন দিয়েছিল পুলিশ! (ভিডিও) শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় । প্রতিবেদনের সঙ্গে থাকা প্রায় সাড়ে তিন মিনিটের ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, পুলিশ সদস্যরা দলবল নিয়ে চিনিকলের জমিতে তোলা সাঁওতালদের ঘরের দিকে যাচ্ছে। ফাঁকা গুলি চালাতেও দেখা যায় তাদের। সাঁওতালদের ঘরের কাছে পৌঁছে তিনজন পুলিশ সদস্য একটি ঘরে লাথি মারে এবং ঘরের বেড়া টেনে ভাঙচুর করে। পরে এক পুলিশ সদস্য আগুন লাগিয়ে দেয়। অন্যরা ঘরের খড়ে আগুন দিতে সহায়তা করে। দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে ওঠে। ভিডিওতে পোশাক পরিহিত পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্যদেরও দেখা যায়। তাদের গায়ে ছিল বুলেট প্রুফ জ্যাকেট।

এদিকে সাঁওতাল পল্লীতে আগুনের ঘটনায় পুলিশ সদস্যদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী তাদের বিচার হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা হওয়ার বিষয়টি বিভিন্ন মাধ্যমে তিনি শুনেছেন। তবে তাদের কাছে এ প্রতিবেদন এখনও যায়নি। তবে কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। পুলিশের কেউ জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, বিচার হবে।’

ঢাকা জার্নাল, জানুয়ারি ৩০, ২০১৭।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.