‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে ৩ থেকে ২০ লাখ টাকা লেনদেন হয়’

ডিসেম্বর ১৮, ২০১৬

ঢাকা জার্নাল : দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক (প্রভাষক) নিয়োগের ক্ষেত্রে ৩ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেন হয় বলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ‘সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক নিয়োগ: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক ওই গবেষণায় দেশের ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। যার মধ্যে আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে এ ধরনের দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে সংস্থাটি।

রবিবার দুপুরে রাজধানীতে টিআইবির নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাবশালী শিক্ষক, ছাত্র নেতা, উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, ডিন, বিভাগীয় প্রধানদের প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয় অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যদের। এছাড়া শিক্ষকের সন্তান, স্বামী, স্ত্রী, শ্যালক, শ্যালিকা ও আত্মীয়দের নিয়োগ দেওয়ার ঘটনা প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে।
অনিয়ম দুর্নীতির কেস স্ট্যাডি তুলে ধরে গবেষণাপত্রে বলা হয়, প্রার্থীকে চাকরি দেওয়ার বিনিময়ে নিয়োগ সংশ্লিষ্ট একজন শিক্ষক বলেন, ‘আমার কিছু লোন আছে, ওই লোন তুমি শোধ করে দিলে আমার ও তোমার দুইজনেরই উপকার হয়।’

গবেষণায় উপচার্য, শিক্ষক নেতা, রেজিস্ট্রার অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারি, বিশেষজ্ঞ, ছাত্রনেতা, ক্ষমতাসীন দলের ও জনপ্রতিনিধিদের একাংশ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত বলে উল্লেখ করা হয়। নিয়োগের ক্ষেত্রে নিজ এলাকা বিবেচনা করা হয়। ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের চাপেও নিয়োগ দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ দিতে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পরীক্ষায় ফলাফল ইঞ্জিনিয়ারিং করে বেশি নম্বর দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তাকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

নিয়োগ বোর্ড গঠন, সুবিধামতো যোগ্যতা পরিবর্তন বা শিথিল করা, জবাবদিহি না থাকার মাধ্যমে এই অনিয়ম হচ্ছে বলে জানান টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘গবেষণায় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক নিয়োগে আইনী ও প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রভাষক নিয়োগের বিভিন্ন ধাপে অনিয়ম-দুর্নীতির ধরণ চিহ্নিত করা হয়েছে। এটি একটি গুণগত গবেষণা, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। গবেষণায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শুধু প্রভাষক নিয়োগের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’

গবেষণা ২০০১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় রয়েছে সাধারণ আটটি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে দু’টি, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি রয়েছে দু’টি। এসব বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা ও ঢাকার বাইরের এবং নতুন ও পুরাতন বিশ্ববিদ্যালয় উভয়ই রয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় প্রভাষক নিয়োগে পুর্ণাঙ্গ বিধিমালা নেই। যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে, তাতে সুনির্দিষ্ট ও স্বচ্ছ কাঠামো, নম্বর প্রদান পদ্ধতি নিয়োগের ক্ষেত্রে বাছাইয়ের প্রক্রিয়া বিধিমালাতে উল্লেখ নেই। প্রভাষক নিয়োগের জন্য ইচ্ছামতো চাহিদা তৈরি করা হয়, ইচ্ছামতো কম বা বেশি নিয়োগ দেওয়া হয়।

ট্রাস্টি বোর্ড সদস্য অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার উচ্চ শিক্ষা কমিশন গঠন করছে। আমি আইনের খসড়া দেখেছি। এটি সংসদে পাস হওয়ার পর কর্কর হলে এই অনিয়ম থাকবে না।’

প্রতিবেদনে এ অবস্থা থেকে উত্তরণে প্রভাষক নিয়োগে সুনির্দিষ্ট ও স্বচ্ছ বিধিমালা তৈরিসহ বিভিন্ন সুপারিশ করেছে টিআইবি।

সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য নিয়োগে বিধিমালা প্রণয়নে যোগ্যতার মানদণ্ড ও নিয়োগ প্রক্রিয়ার উল্লেখকরণ, নিয়োগ প্রক্রিয়া শিক্ষক সমিতির প্রভাবমুক্ত করা, ফলাফল ইঞ্জিনিয়ারিং বন্ধ করা, নিয়োগের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট যোগ্যতা নির্ধারণ এবং বহুল প্রচারিত পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তার প্রকাশ করা, আবেদনপত্রে প্রাথমিক বাছাইয়ের ক্ষেত্রে প্রার্থীদের যোগ্যতা গোপন না করে মেধাক্রওম অনুযায়ী তালিকা প্রস্তুত করা, আবেদন জমার স্বীকারোক্তিপত্র দেওয়া, স্বচ্ছ নিয়োগ কমিটি গঠন করা, মৌখিক প্রশ্ন জিজ্ঞাসার সময় অপছন্দের পার্থীকে অবান্তর প্রশ্ন না করা, নিয়োগ বিজ্ঞপিতে যতোজন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার কথা বলা থাকবে ততজনই নিয়োগ দেওয়া ইত্যাদি।

সংবাদ সম্মেলনে গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন টিআইবির উপ-নির্বাহী পরিচালক ড. সুমাইয়া খায়ের। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম।

ঢাকা জার্নাল, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৬।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.