স্কুলপর্যায়ে পৌঁছেছে ২০ কোটির বেশি বই

নভেম্বর ১৯, ২০১৬

bookঢাকা জার্নাল: আগামী ২০১৭ সালের প্রথমদিন সারাদেশের শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক পৌঁছে দেওয়ার কাজ এগিয়ে চলছে। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলার স্কুলপর্যায়ে ২০ কোটির বেশি বই পৌঁছেছে।

১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে সব গন্তব্যে এসব বই পৌঁছে দেওয়া হবে। এরপর বরাবরের মতো এবারো ১ জানুয়ারি বই উৎসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া হবে। এছাড়া এবারো সৃজনশীল পদ্ধতির জটিলতা নিরসনে শিক্ষকদের সহায়তার জন্য সরকার প্রথমবারের মতো শিক্ষাসহায়িকা গাইড তৈরি করেছে। এটিও যথাসময়ে শিক্ষকদের দেওয়া হবে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা শনিবার বলেন, ২০ কোটিরও বেশি অর্থাৎ মোট বইয়ের প্রায় ৬০ ভাগ বই ইতোমধ্যে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। অবশিষ্ট ১৬ কোটি বই আগামী ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের সংশ্লিষ্ট জেলা-উপজেলা এমনকি থানা পর্যায়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দেওয়া হবে।

তিনি জানান, ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি নতুন শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিন বই উৎসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া হবে। সরকার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মাঝে ৩৬ কোটি ২১ লাখ ৮২ হাজার ২৪৫টি পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ করবে।

এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, এবার গত বছরের তুলনায় দুই কোটি ৮৪ লাখ ১৯ হাজার ৪৭৩টি বেশি বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হবে। চলতি ২০১৬ সালে মোট ৩৩ কোটি ৩৭ লাখ ৬২ হাজার ৭৭২টি পাঠ্যপুস্তক বিতরণ হয়।

এনসিটিবি চেয়ারম্যান আরো জানান, প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, এসএসসি ভোকেশনাল, ইবতেদায়ী, দাখিল ও দাখিল ভোকেশনাল এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী চার কোটি ২৬ লাখ ৩৫ হাজার ৯২৯ জন শিক্ষার্থীর মাঝে এই বই বিতরণ করা হবে। চলতি বছর বই বিতরণ করা হয় এসব প্রতিষ্ঠানের মোট চার কোটি ৪৪ লাখ ১৬ হাজার ৭২৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে।

নারায়ণ চন্দ্র সাহা জানান, সৃজনশীল পদ্ধতির জটিলতা নিরসনে সরকার শিক্ষকদের সহায়তার জন্য প্রথমবারের মতো শিক্ষাসহায়িকা গাইড তৈরি করেছে। শিক্ষকরা বইটি অনুসরণ করলে সৃজনশীল পদ্ধতি পড়াতে ও প্রশ্নপত্র তৈরিতে তারা বেশ উপকৃত হবেন।

তিনি বলেন, প্রাথমিক স্তরের শিক্ষকদের জন্য ‘শিক্ষক নির্দেশিকা’ শিরোনামে ৬০ লাখ ১ হাজার ২৪টি এবং মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকদের জন্য ‘শিক্ষক ও শিক্ষাক্রম গাইড’ শিরোনামে ৪৬ লাখ ৬৬ হাজার ৬৬৪টি বই প্রস্তুত করা হয়েছে।

এদিকে শিক্ষা মন্ত্রলাণয় সূ্ত্র জানিয়েছে, বিশ্বে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যের বই বিতরণের ক্ষেত্রে সরকার রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।

মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, ২০১০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রাক-প্র্থামিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে বছরের প্রথম দিবসে মোট ২৬ কোটি ২ লাখ ২১ হাজার ৮৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৮৯ কোটি ২১ লাখ ১৮ হাজার ৮৯৫টি পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ করেছে।

সরকারিভাবে এত বই ছাপিয়ে বাঁধাই করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষার্থীর হাতে বছরের প্রথম দিনে বিতরণের ইতিহাস বিশ্বের কোথাও নেই।

এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেওয়ার সময়ও শিক্ষার্থীরা টাকা দিয়ে বই কিনত। কিন্তু বর্তমান সরকারের আমলে ২০১০ সাল থেকে প্রথম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থী বিনামূল্যে বই পাচ্ছে। এখন কেউ বলতে পারবে না যে, তারা আর বই পায় না।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ২০১০ সালে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়, সব শিশুকে স্কুলে নিয়ে আসা হবে। সে হিসেবে প্রথমে ১৯ কোটি বই দেওয়া হয়। এরপর তা বৃদ্ধি করে ২২ কোটি, পরে ২৪ কোটি এবং তারও পরে ২৭ কোটি বই বিতরণ করা হয়। ২০১৪ সালে ৪ কোটির বেশির শিক্ষার্থীকে ৩১ কোটির ওপর বই বিতরণ করা হয়। আগামী বছর এই সংখ্যা ৩৬ কোটি ছাড়াচ্ছে। পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন, বিতরণ ও ব্যবস্থাপনা পৃথিবীর আর কোথাও এভাবে সম্ভব হয়নি।

ঢাকা জার্নাল, নভেম্বর ১৯, ২০১৬।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.