নেত্রকোণায় আবার মন্দিরে হামলা, আটক ১

নভেম্বর ৫, ২০১৬

netrakonaঢাকা জার্নাল : দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির ও বাড়িঘরে হামলার ঘটনায় প্রশাসনের সমালোচনার মধ্যে নেত্রকোণায় দুদিনের মধ্যে আরেকটি মন্দিরে হামলা হয়েছে।

শনিবার ভোরে জেলা শহরের সাতপাই এলাকায় একতা সংঘের কালী মন্দিরে ওই হামলা চলাকালে এলাকাবাসী একজনকে ধরে পুলিশে দিয়েছে।

আটক ব্যক্তি সুমন ইসলামের (৪০) বাড়ি নরসিংদী জেলায় বলা হলেও বিস্তারিত পরিচয় জানা য়ায়নি।

একদিন আগে জেলার কলমাকান্দা উপজেলায় একটি পারিবারিক মন্দিরে ভাংচুরসহ তুলশীগাছ উপড়ানো ও শ্মশানে তছনছ করার ঘটনা ঘটে।

একতা সংঘের মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক অনিমেষ সরকার যীষু জানান, প্রতিদিনের মতো মন্দির সংলগ্ন নিজের বাসায় ভোররাতে কীর্তন করার সময় এক কিশোরের কাছ থেকে খবর পান মন্দিরে হামলা হচ্ছে।

আটক সুমন ইসলামকে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ আটক সুমন ইসলামকে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ “সঙ্গে সঙ্গে এলাকার নারী-পুরুষদের নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন লাগানোর সময় এক ব্যক্তিকে আটক করি।”

এ সময় মন্দিরের ভেতর থেকে প্যান্ট-শার্ট ও মাথায় টুপি পরা আরও চারজনের মতো যুবককে দৌড়ে পালিয়ে যেতে দেখেছেন দাবি তার।

নেত্রকোণা মডেল থানার ওসি আবু তাহের দেওয়ান স্থানীয়দের বরাত দিয়ে জানান, শনিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে একতা সংঘের কালী মন্দিরে তিন/চারজন মিলে মন্দিরের দরজা খুলে ভেতরে ঢোকে। তারা মন্দিরের কালী প্রতিমার মাথার চূড়া ও মহাদেবের হাত ভেঙে ফেলে এবং তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়।

“এ সময় এক কিশোর দেখতে পেয়ে এলাকায় খবর দেয়। পরে এলাকাবাসী গিয়ে মন্দিরের ভেতর থেকে একজনকে ধরে ফেলে। তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। বাকিরা দৌড়ে পালিয়ে গেছে।”

ওসি আরও জানান, আটক সুমনকে থানায় ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মুশফিকুর রহমান, পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরী, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান ওসি।

ঘটনার পরপর মন্দিরে যান নেত্রকোণা পৌরসভার সাবেক মেয়র প্রশান্ত কুমার রায়, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সভাপতি মঙ্গল সাহা রায়, সাধারণ সম্পাদক সুব্রত রায় মানিক, জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ সভাপতি সিতাংশু বিকাশ আচার্য্য, জেলা জাতীয় হিন্দু মহাজোট সভাপতি তপন সাহা ও সম্পাদক দেবদুলাল তালুকদার।

মঙ্গল সাহা রায় বলেন, “একের পর এক হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির ও বাড়িঘরে হামলা হচ্ছে। চলছে নির্যাতন। আমরা ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ।”

এসব বন্ধ না করলে কঠোর আন্দোলনে হুশিয়ারি দেন তিনি।

এর আগে বুধবার রাত ও বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যে কোনো এক সময় নেত্রকোণার কলমাকান্দা উপজেলার কৈলাটি ইউনিয়নের সাকুয়া ইন্দ্রপুর গ্রামে স্কুল শিক্ষক পরিচয় তালুকদারের পারিবারিক কালী মন্দিরে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা।

তারা মন্দিরের কালী প্রতিমা গুঁড়িয়ে দেয়। বাড়ির ভেতরে থাকা চারটি তুলসি গাছ উপড়ে ফেলে। তাছাড়া বাড়ির সামনে পুকুর পাড়ে থাকা পারিবারিক শ্মশানের চারটি স্মৃতিচিহ্ন খোঁড়াখুঁড়ি ও তছনছ করে।

গত কয়েক দিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, যশোর, বরিশাল, ফরিদপুর, ঠাকুরগাঁও, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে।

ঠাকুরগাঁওয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এক ইউপি চেয়ারম্যানকে আটক করেছে পুলিশ। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের ঘটনায় ৪৪ জনকে গ্রেপ্তার এবং তিন আওয়ামী লীগ নেতাকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

ঢাকা জার্নাল, নভেম্বর ০৫, ২০১৬।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.