স্বস্তি নিয়ে দিন শেষ করলো মুশফিকরা

অক্টোবর ২৮, ২০১৬

sportঢাকা জার্নাল : দিনটা পুরোপুরি হতে পারতো বাংলাদেশের। টেস্ট সিরিজে প্রথমবারের মতো টস জিতে মুশফিক ব্যাটিং নেওয়ায় তেমন আভাসই পাওয়া যাচ্ছিল! যেটা প্রমাণ করে দেখাচ্ছিলেন তামিম ইকবাল ও মুমিনুল হক। দ্বিতীয় উইকেটে এই জুটির কল্যাণেই এসেছে ১৭০ রান। এ পর্যন্তই সব কিছুই ঠিক-ঠাক যাচ্ছিল। তবে দলীয় ১৭১ রানে সেঞ্চুরি করে তামিম ফিরে গেলে এলোমেলো হয়ে যায় সবকিছু। ২ ‍উইকেটে ১৭১ রানে থাকা বাংলাদেশ এক পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়ায় ৬ উইকেটে ২০৫ রানে। এরপর ২২০ রানে শেষ হয় ‍বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস! পুরো এই স্কোরের ৭৭.২৭ শতাংশই এসেছে তামিম-মুমিনুল জুটিতে।

জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই উইকেট হারিয়েছে ইংল্যান্ড। দলীয় ১০ রানেই ফিরে গেছেন ওপেনার ডাকেট।  দ্বিতীয় ওভারে সাকিব আল হাসানের বলে মুশফিককে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। এরপর পঞ্চম ওভারে মিরাজ বোলিংয়ে আসলে থিতু হতে পারেননি অধিনায়ক অ্যালিস্টার কুকও।  এলবিডব্লুতে ফিরে যান কুক (১৪)। যদিও শুরুতে তাকে আউট দেননি কুমার ধর্মসেনা।  কিন্তু মুশফিক রিভিউ নিলে ধর্মসেনার সিদ্ধান্ত আর টেকেনি।  মাঝে কিছুক্ষণ দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন জো রুট ও গ্যারি ব্যালেন্স।  কিন্তু এই জুটিকে স্থায়ী হতে দেননি মিরাজ।  মুশফিকের হাতে তালুবন্দী করেন ব্যালেন্সকে (৯)।  এরপর ১২.৩ ওভারে বৃষ্টি নামলে প্রথম দিনের ১৪.২ ওভার বাকি থাকতেই বাকি খেলা পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। এর আগে ইংলিশদের সংগ্রহ ছিল ৩ উইকেটে ৫০ রান। তারা এখনও পিছিয়ে ১৭০ রানে।  তাই নিজেদের ব্যাটিং নিয়ে শুরুতে অস্বস্তি কাজ করলেও দিনের শেষ দিকে ইংলিশদের চাপে ফেলে স্বস্তি নিয়ে মাঠ থেকে বের হয়েছে মুশফিক বাহিনী।

তবে এই অর্জনের সঙ্গে ছিল বিসর্জনের মিছিল! ব্যাটিংয়ে ইনিংসের শেষ দিকে মাত্র ৩০ রান যোগ করতেই বাংলাদেশ হারিয়েছে ৮ উইকেট।  যেখানে মুমিনুল হককে দিয়ে শুরু হওয়া উইকেট পতনের মিছিলে যোগ দেন মাহমুদউল্লাহ, মুশফিকুর রহিম ও সাব্বির রহমান। মাহমুদউল্লাহ আউট হওয়ার পর পরই মুশফিক ৪ রান করে ফিরেছেন মঈন আলীর বলে। আর আগের টেস্টে হাফসেঞ্চুরির দেখা পাওয়া সাব্বির রহমান তো রানের খাতাই খুলতে পারেননি! বেন স্টোকসের বলে ধরা পড়েন তিনি উইকেটরক্ষক জনি বেয়ারস্টোর গ্ল্যাভসে।  এরপর ফিরে যান শুভাগত।  দলীয় ২১২ রানে ওকসের বলে বেয়ারস্টোর হাতে তালুবন্দী হন তিনি (৬)।  এরপর মঈন আলীর বলে এলবিডব্লু  হয়ে ফেরেন মিরাজ (১)।  যদিও আউটটি ছিল রিভিউতে।  শুরুতে আবেদন করেও ধর্মসেনার সাড়া পায়নি ইংল্যান্ড।  ফলে রিভিউ চাইলে আউট হয়ে ফেরেন মিরাজ।  তবে অপর প্রান্তে টিকে ছিলেন সাকিব আল হাসান।  কিন্তু প্রত্যাশা মতো কিছুই করে দেখাতে পারেননি।  ওকসের বলে বেয়ারস্টোর হাতে তালুবন্দী হয়ে ফেরেন তিনি।  এরপর কামরুল ইসলাম রাব্বি মঈন আলীর বলে রুটের হাতে ক্যাচ দিলে প্রথম ইনিংসে ২২০ রানেই থেমে যায় স্বাগতিকরা।

ইংল্যান্ডের উইকেট শিকারের নেতৃত্বে ছিলেন স্পিনার মঈন আলী ও পেসার ক্রিস ওকস। মঈন ৫ উইকেট নিলেও ওকস নিয়েছেন ৩টি। আর দুটি নিয়েছেন বেন স্টোকস। উইকেট কম পেলেও বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের ব্যথায় কাতর করেছেন স্টোকস।

শেষ দিকে এমনটি হলেও মধ্যাহ্ন ভোজন পর্যন্ত সব কিছুই ইতিবাচক ছিল টাইগারদের ব্যাটিংয়ে। বিরতি থেকে ফিরেই হাফসেঞ্চুরির দেখা পান মুমিনুল হক। ক্যারিয়ারের ১০তম টেস্ট হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন ৭২ বলে।  অপর দিকে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরির অপেক্ষায় ছিলেন তামিম।  মঈন আলীর ৪০তম ওভারে পর পর দুটি চার মেরেই কাঙ্ক্ষিত সেই ঘরোয়া সেঞ্চুরি পূরণ করেন তিনি।  এটি তার অষ্টম টেস্ট সেঞ্চুরি।  তবে এরপরের ওভারেই ফিরে যেতে হয় তামিমকে।  মঈন আলীর বলে লেগ বিফোর হন।  কুমার ধর্মসেনা আউট দিলেও তামিম ইকবাল রিভিউ নেন।  কিন্তু ব্যর্থ সেই রিভিউতে এলবিডব্লু  হয়েই বিদায় নেন ১০৪ রান করা তামিম।  তামিমের বিদায়ের পর থিতু হতে পারেননি মুমিনুলও। ৬৬ রানে মঈন আলীর বলে বোল্ড হয়ে বিদায় নেন তিনি।

দল হিসেবে বাংলাদেশ প্রথম দিনে আলো ছড়াতে না পারলেও আলো ছড়িয়েছে তামিমের দুর্দান্ত ব্যাটিং। যেই ব্যাটিংয়ে তুলে নেন সেঞ্চুরি। অবশ্য তামিমের ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এর আগে দুটি সেঞ্চুরি ছিল। যদিও এর একটিও ঘরের মাঠে ছিল না। ২০১০ সালে চট্টগ্রামে ৮৬ এবং মিরপুরে ৮৫ রানের ইনিংস ছিল ইংলিশদের বিপক্ষে।

বাকি সেশন বাদ দিলে প্রথম সেশনটি ছিল বাংলাদেশরই। এই সেশনেই মুমিনুল-তামিম দ্বিতীয় উইকেটে করেন ১১৭ রানের জুটি। যদিও এই সেশনে দিনের শুরুতে ফিরে গেছেন ওপেনার ইমরুল কায়েস (১)। তৃতীয় ওভারে ওকসের বলে কাট করতে গিয়ে পয়েন্টে ডাকেটের হাতে তালুবন্দী হন বাঁহাতি এই ওপেনার। আর এরপরেই জুটি গড়ে স্থিতি আনেন তামিম ও মুমিনুল।

গত টেস্টের মতো এবারও রিভিউ নিয়ে হয়েছে সার্কাস! বাংলাদেশের ইনিংসে ২৫.১ ওভারে ঘটে রিভিউ নেওয়ার ঘটনা। তামিমের ব্যাটে বল লেগেছে ভেবে আবেদন করে বসে ইংল্যান্ড। জবাবে সেই কুমার ধর্মসেনাই আঙুল তোলেন। তামিম পাল্টা রিভিউ নিলে দেখা যায় বল ব্যাটেই লাগেনি।

একই ওভারে আরও একটি ঘটনা ঘটে।  ২৫.৩ ওভারে স্টোকসের লাফিয়ে ওঠা বল ঠিকমতো ব্যাটে লাগাতে পারেননি তামিম।  বল গিয়ে লাগে তামিমের বুকে।  টিভি স্ক্রিনে দেখা যায় বলটি সজোরে আঘাত করে তামিমের বুকে।  তবে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসা নিয়ে কোনও ঝামেলা ছাড়াই খেলতে থাকেন তামিম।

ঢাকা জার্নাল, অক্টোবর ২৮, ২০১৬।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.