মেয়াদ বাড়ল ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের

অক্টোবর ২৬, ২০১৬

onehouseonefarmঢাকা জার্নাল : পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক আইন সংশোধন না করেই ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের মেয়াদ চার বছর বাড়িয়ে আট হাজার ১০ কোটি টাকার বরাদ্দ অনুমোদন করেছে সরকার।

এ প্রকল্পের তৃতীয় সংশোধনী মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায় বলে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান।

তার দাবি, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়টি পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে না। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের আওতায় ওই প্রকল্প চলবে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একনেক সভার পর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, “দেশে যতদিন দারিদ্র্য দূর না হবে, ততদিন এ প্রকল্প চলবে।”minister-kamal

সমন্বিত গ্রাম উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রতিটি বাড়িকে অর্থনৈতিক কার্যাবলির কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে গড়ে তোলার প্রয়াসে ১ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পটি নিয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার।

২০০৯ থেকে শুরু করে ২০১৪ সালে শেষের কথা থাকলেও পরে ব্যয় ১ হাজার ৪৯২ কোটি টাকা বাড়ানো হয়। এরপর দ্বিতীয় সংশোধনীতে ব্যয় ৩ হাজার ১৬২ কোটি টাকায় উন্নীত করে মেয়াদ ২০১৬ সালে জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

প্রকল্পের কর্মসূচি অব্যাহত রেখে একে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক আইন ২০১৪ পাস করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্স নেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী গত ২২ জুন ব্যাংকটির ১০০টি শাখা উদ্বোধন করেন।

পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক আইনের ৩৯ ধারায় বলা হয়, ২০১৬ সালের ৩০ জুনের পর একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প বিলুপ্ত হবে। বিলুপ্ত প্রকল্পের সব সম্পদ, ক্ষমতা, কর্তৃত্ব, অর্থ, কর্মসূচি এবং দায় পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের হাতে চলে যাবে।

এই আইনি জটিলতা কীভাবে মেটানো হবে সে ব্যাখ্যা না দিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, “এ প্রকল্পের দেখাশোনা করবে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক। বিলুপ্তির তো দরকার নেই।… একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প চলমান অবস্থায় পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের কাছে হস্তান্তর হবে।”

মুস্তফা কামাল বলেন, একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত সরকার প্রকল্পের অধীন এক একটি সমিতিকে সাপোর্ট দেবে। যে সমিতির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে, সেটি পল্লীসঞ্চয় ব্যাংকের সঙ্গে মিলে যাবে।

‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের সমিতিগুলো থেকে ৪৯ শতাংশ তহবিল সংগ্রহের মাধ্যমে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন জোগানের কথা ছিল। কিন্তু প্রকল্পটি বিলুপ্ত না করে তৃতীয় সংশোধনীর মাধ‌্যমে নতুন বরাদ্দের প্রস্তাব দেয় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ।

এরপর আইনি জটিলতা এবং প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লে সম্ভাব‌্য আর্থিক ক্ষতির কথা তুলে ধরে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক চেয়ারম্যান মিহির মজুমদার আপত্তি জানালেও তা ধোপে টেকেনি।

সরকারের এই সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, “প্রকল্প যদি বিলুপ্ত করা হয় তাহলে সমিতির লোকজন তাদের সঞ্চিত টাকা তুলে নিয়ে যাবে। তখন পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক টাকা পাবে কোথায়? তাই প্রকল্পটি চলমান অবস্থায় পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের কাছে হস্তান্তর করা হবে।”

এবার প্রকল্পটির ব্যয় ৪ হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৮ হাজার ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় সংশোধনীর তুলনায় ব্যয় বেড়েছে ১৫৩ শতাংশ। প্রকল্পের মেয়াদ বেড়েছে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত।

পরিকল্পনা কমিশনের একজন কর্মকর্তা বলেন, গত আগস্টে প্রকল্পটির পিইসি সভা হয়। সেখানে আইনি জটিলতার বিষয়টি তুলে ধরা হয়। কিন্তু পরিকল্পনা কমিশনের পরামর্শ না মেনে বাস্তবায়নকারী সংস্থা পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ প্রকল্পটি সংশোধনের জন্য একনেক সভায় তুলতে ‘বাধ্য করে’।

সাড়ে নয় হাজার কোটিতে ১০ প্রকল্প

পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, মঙ্গলবার একনেক সভায় ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের তৃতীয় সংশোধনীসহ মোট ১০টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যাতে ব‌্যয় হবে নয় হাজার ৪৪৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।

এই অর্থের পুরোটাই সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে যোগানো হবে বলে জানান মন্ত্রী।

অনুমোদন পাওয়া বাকি নয় প্রকল্প হল-

** মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শক্তিশালীকরণ প্রকল্প। ব্যয়: ৩৪৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা।

** যশোরে বিএএফএ বঙ্গবন্ধু কমপ্লক্সে নির্মাণ এর প্রথম সংশোধিত প্রকল্প। ব্যয়: ২৭১ কোটি ১৫ লাখ টাকা।

** ঢাকা সিএমএইচ এ ক্যান্সার সেন্টার নির্মাণ। ব্যয়: ৯৮ কোটি টাকা।

** পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে অফিসার/অন্যান্য পদধারী এবং কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ প্রকল্প। ব্যয়: ২৭১ কোটি ১৯ লাখ টাকা।

** গোবিন্দগঞ্জ-ছাতক-দোয়ারা বাজার সড়কের ছাতকে সুরমা নদীর ওপর সেতুর অবশিষ্ট কাজ সমাপ্তকরণ প্রকল্প। ব্যয়: ১১৩ কোটি টাকা।

** জামালপুরে পল্লী উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠাকরণ প্রকল্প: ব্যয়: ১২৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

** দেশের তিনটি উপকূলীয় জেলার চারটি স্থানে আনুষঙ্গিক সুবিধাদিসহ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র স্থাপন, প্রথম সংশোধতি প্রকল্প। ব্যয় ৫৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

** আড়িয়াল খাঁ নদীর ভাঙন থেকে হাজী শরীয়তউল্লাহ সেতু সংলগ্ন ঢাকা-মাওয়া-ভাংগা-খুলনা জাতীয় মহাসড়ক রক্ষা প্রকল্প। ব্যয়: ৫৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।

** রাজৈর-কোটালীপাড়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্প। ব্যয় ৯৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা।

ঢাকা জার্নাল, অক্টোবর ২৫, ২০১৬।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.