দুই জেলায় ১১ জঙ্গি নিহত

অক্টোবর ৮, ২০১৬

jongiঢাকা জার্নাল: গাজীপুর ও টাঙ্গাইলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে সন্দেহভাজন ১১ জঙ্গি নিহত হয়েছে।

নিহতদের মধ্যে নব্য জেএমবির সামরিক কমান্ডার আকাশ রয়েছে বলে দাবি করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

শনিবার ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত চলা অভিযানে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের হাড়িনাল পশ্চিমপাড়ায় সন্দেহভাজন দুই জঙ্গি ও নোয়াগাঁও পাতারটেকে ‘অপারেশন শরতের তুফান’ নামের অভিযানে সাত জঙ্গি নিহত হয়।

একইদিনে টাঙ্গাইল শহরের পৌর এলাকার কাগমারার মির্জামাঠের একটি তিনতলা বাড়িতে অভিযানে সন্দেহভাজন আরো দুই জঙ্গি নিহত হয়।

পাতারটেক এলাকার একটি বাড়িতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে গোলাগুলিতে আকাশসহ সাত জঙ্গি নিহত হয়। নিহতদের মধ্যে নব্য জেএমবির সামরিক শাখার প্রধান আকাশ ছাড়া বাকি জঙ্গিদের পরিচয় এখনো জানা যায়নি।

বিকেল পৌনে ৪টায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পাতারটেকে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। অভিযানকালে বেশকিছু অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কাউন্টার টেররিজম, সোয়াত ও গাজীপুর পুলিশসহ এই সফল অভিযান পরিচালনা করে আমরা নিশ্চিত, তামিম চৌধুরীর পরে যে জঙ্গিদের নেতৃত্ব দিত তার ছদ্ম হউক আর টাইটেল নাম হউক, তার নাম ছিল আকাশ। সে এখানে নিহত হয়েছে। নিহত এই সাতজনের মধ্যে সে একজন।’

আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘পুলিশ বাহিনী ও গোয়েন্দা বাহিনীর তৎপরতায় আমরা জঙ্গি, সন্ত্রাস কন্ট্রোলে নিয়ে আসছি। আমাদের যথার্থ কাজটি পুলিশ যথার্থভাবেই পালন করছে। একের পর এক জঙ্গি আস্তানা আমরা গুঁড়িয়ে দিচ্ছি। আজকে সাতজন জঙ্গি এখানে অবস্থান করছিল, এ তথ্য আমাদের পুলিশ বাহিনী তাদেরকে আত্মসমর্পণ করার জন্য অনুরোধ করে নির্দেশ দেয়। তারা আত্মসমর্পণ না করে উপর্যুপরি গুলি বর্ষণ শুরু করে। শুধু গুলিবর্ষণ করেই ক্ষান্ত হয়নি তারা গ্রেনেড নিক্ষেপ শুরু করে।

তিনি বলেন, পুলিশ বাহিনী, সোয়াত বাহিনী, কাউন্টার টেররিজম ও জেলা পুলিশ, পুলিশ সদরদপ্তর ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। এই গোলাগুলির মধ্যেও তাদের বারবার বলার পরও তারা আত্মসমর্পণ করেনি। আত্মসমর্পণ না করায় অভিযান চালানো হয়।

তিনি আরো বলেন, এ পর্যন্ত সাতটি মৃতদেহ পাওয়া গেছে। তিনটি অস্ত্র, একটি গ্যাস সিলিন্ডার, বেশকিছু চাপাতি উদ্ধার করা হয়েছে। এ অপারেশনে একজন পুলিশ অফিসার আহত হয়েছেন। হাতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন তিনি। তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পাতারটেকের ঐ বাড়িটি ঘিরে রাখে। পরে পুলিশ অভিযানে গেলে গোলাগুলি শুরু হয়।

বাড়িটি সৌদি প্রবাসী সোলাইমান সরকারের। দেখভাল করেন তার ভাই ওসমান গনি। ওসমান গনি জাঙ্গালিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার অবসরপ্রাপ্ত আরবি শিক্ষক ছিলেন।

টাঙ্গাইলে র‌্যাবের পাঁচ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে দুই জঙ্গি নিহত হয়েছে। সকালে মির্জামাঠের একটি তিনতলা বাড়িতে র‌্যাব এ অভিযান পরিচালনা করে।

পরে ওই বাড়ি থেকে একটি রিভলবার, একটি পিস্তল, ১২ রাউন্ড গুলি, ১০টি চাপাতি, দুটি ল্যাপটপ ও ৬৪ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।

টাঙ্গাইল র‌্যাব-১২ এর কোম্পানি অধিনায়ক অ্যাডিশনাল ডিআইজি মো. শাহাবুদ্দিন খান বিকেল ৪টায় টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু অডিটরিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে জানান, গত ২৭ সেপ্টেম্বর শহরের কাগমারা মির্জামাঠের পার্শ্ববর্তী আজাহার আলী মাস্টারের তিনতলা বাড়ির নিচতলার একটি রুম কলেজছাত্র পরিচয়ে ২০-২৫ বছর বয়সি দুই যুবক ভাড়া নেয়।

পরে সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব জানতে পারে ওই বাড়িতে জঙ্গি কার্যক্রম চলছে। বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে টাঙ্গাইল র‌্যাব-১২ এর ক্রাইম প্রিভেনশন কোম্পানি-৩ এর কোম্পানি কমান্ডার মো. মহিউদ্দিন ফারুকীর নেতৃত্বে র‌্যাব সদস্যরা সেখানে অভিযান চালায়। এ সময় আল্লাহু আকবর বলে জঙ্গিরা র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। র‌্যাবও পাল্টা গুলি চালালে দুই জঙ্গি নিহত হয়। র‌্যাব পুরো এলাকা ঘিরে রাখে।

পরে দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে র‌্যাবের বোমা নিষ্ক্রিয় দলসহ র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যরা বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে। এ সময় সেখান থেকে একটি রিভলবার, একটি পিস্তল, ১২ রাউন্ড গুলি, ১০টি চাপাতি, দুটি ল্যাপটপ ও ৬৪ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।

বাড়িওয়ালা আজাহার উদ্দিন মাস্টার জানান, গত ২৭ সেপ্টেম্বর ওই যুবকরা ছাত্র পরিচয়ে বাসার নিচতলার একটি রুম ভাড়া নেয়। তাদের কাছে ছবি ও ঠিকানা চাইলে তারা জানায়, ২-১ দিনের মধ্যেই দেবে। এরই মধ্যে শনিবার র‌্যাব সদস্যরা বাসায় এসে জিজ্ঞাসা করতেই র‌্যাবের এক সদস্যকে রুমের বাইরে থাকা এক জঙ্গি জাপটে ধরে। পরে তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। পরে র‌্যাবের ওপর অপর জঙ্গিরা রুমের ভেতর থেকে গুলি চালায় ও র‌্যাবও পাল্টা গুলি চালায়।

 ঢাকা জার্নাল, অক্টবর ০৮, ২০১৬।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.