‘জেতা ম্যাচ’ হারল বাংলাদেশ

অক্টোবর ৮, ২০১৬

eng-winঢাকা জার্নাল : ইংল্যান্ডের দেওয়া ৩১০ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে একপর্যায়ে বাংলাদেশের দরকার ছিল ৫২ বলে ৩৯ রান। হাতে ৬ উইকেট।

তখনো উইকেটে ১০৮ রানে অপরাজিত ইমরুল কায়েস, ৭৯ রানে ব্যাটিংয়ে সাকিব আল হাসান। এমন পরিস্থিতিতেও জিততে পারল না বাংলাদেশ!

স্নায়ুচাপে ভুগে আর তালগোল পাকিয়ে মাত্র ১৭ রানে শেষ ৬ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের ইনিংস থামল ২৮৮ রানে! প্রায় জেতা ম্যাচটা বাংলাদেশ হারল ২১ রানে।

প্রস্তুতি ম্যাচে করেছিলেন দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি। তামিম ইকবালের সঙ্গে সৌম্য সরকারের বদলে ওপেনিংয়ে নেমে শুরুটাও দারুণ করেন ইমরুল কায়েস। বাঁহাতি ব্যাটসম্যান রানের খাতাই খোলেন ছক্কা হাঁকিয়ে। ক্রিস ওকসের করা ইনিংসের তৃতীয় বলটি দারুণ ফ্লিকে গ্যালারিতে নিয়ে ফেলেন। ওই ওভারের শেষ বলে মারেন চার। ৩১০ রান তাড়া করতে নামা বাংলাদেশ প্রথম ওভারে তোলে ১১।

ইনিংসের অষ্টম ওভারে ডেভিড উইলির তৃতীয় বলটিও ডিপ মিডউইকেটের ওপর দিয়ে আছড়ে ফেলেন ইমরুল। এই ওভারের শেষ বলে তামিম হাঁকান চার। তখন ৮ ওভারে বাংলাদেশের স্কোর বিনা উইকেটে ৪২।

বাংলাদেশ শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন অভিষিক্ত জ্যাক বল। ইনিংসের দশম ও তার প্রথম ওভারের পঞ্চম বলে জেমস ভিন্সকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তামিম ইকবাল (৩১ বলে ১৭)। উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৪৬ রান। ওভারের শেষ বলে চার মেরে রানের খাতা খোলেন তিন নম্বরে নামা সাব্বির রহমান।

ইমরুলকে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে দলকে ভালোই এগিয়ে নিচ্ছিলেন সাব্বির। কিন্তু বলের ওভারে উইলির দুর্দান্ত এক ক্যাচে বিদায় নিতে হয় তাকে। আগের বলেই মিডঅন দিয়ে দর্শনীয় একটি চার মেরেছিলেন। পরের বলটি তুলে মেরেছিলেন ডিপ মিডউইকেটের ওপর দিয়ে। ছক্কাই হতে পারতো। ক্যাচ ধরে বাউন্ডারির দিকে চলে যাচ্ছিলেন ফিল্ডার উইলি। তবে শেষ মুহূর্তে বল বাতাসে ভাসিয়ে বাউন্ডারি লাইনের বাইরে এক পা ফেলে আবার ভেতরে এসে ক্যাচটি ধরেন তিনি। ১১ বলে ৩ চারে ১৮ রান করেন সাব্বির।

এরপর মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে জুটি বেঁধে ফিফটি তুলে নেন ইমরুল। দুজন মিলে দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন। কিন্তু লেগ স্পিনার আদিল রশিদের বলে সুইপ করতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে দ্বাদশ খেলোয়াড় হিসেবে ফিল্ডিং করা স্যাম বিলিংসকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ (২৫)। ভেঙে যায় ৫০ রানের জুটি।

খানিক বাদে সাজঘরে ফেরেন নতুন ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্রিজে আসা মুশফিকুর রহিমও। ওই রশিদের বলে কাউকর্নারে বিলিংসের হাতে ধরা পড়েন মুশফিক (১২)। ১৫৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে তখন অনেকটা বিপদেই স্বাগতিকরা।

এর পরেই ইমরুল-সাকিবের দারুণ জুটিতে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। ইনিংসের ৩৭তম ওভারে ইমরুল তুলে নেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরি। ইমরুলের শট ধরেছিলেন বোলার উইলি। কিন্তু সেখান থেকে উইলি থ্রো করেন, যা স্টাম্পে লেগে চলে যায় উইকেটের পেছন হয়ে বাউন্ডারি লাইনের ওপারে। চার, সেই সঙ্গে ইমরুলের সেঞ্চুরি। শুরু থেকেই খেলে সাকিব ৩৯ বলে পূর্ণ করেন ফিফটি। এই দুজনের ব্যাটে ৪০ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ২৫৬।

শেষ ১০ ওভারে বাংলাদেশের জয়ের জন্য প্রয়োজন পড়ে ৫৪ রান, হাতে ৬ উইকেট। ৪২তম ওভারে জ্যাক বলের পরপর দুই বলে সাকিব আর মোসাদ্দেক হোসেনের বিদায়ের পরই পথ হারায় স্বাগতিকরা। হাতে টান পড়া সাকিব মিডউইকেটে উইলির হাতে ধরা পড়েন। তিনি ৫৫ বলে ১০ চার এক ছক্কায় খেলেন ৭৯ রানের ইনিংস। সাকিবের বিদায়ে ভেঙে যায় ১১৮ রানের জুটি। পরের বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান মোসাদ্দেক।

পরের ওভারে রশিদের বলে বাটলারকে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান অধিনায়ক মাশরাফিও। তখনো ৪৩ বলে বাংলাদেশের চাই ৩৬ রান, হাতে ৩ উইকেট। বাংলাদেশ ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে দলীয় ২৮০ রানে ইমরুল স্টাম্পড হয়ে ফিরে গেলে। রশিদের ওয়াইড বল উঠে এসে মারতে গিয়ে বাটলারের হাতে স্টাম্পড ইমরুল (১১৯ বলে ১১২)। এরপর দ্রুতই শফিউল আর তাসকিন আহমেদ ফিরলে ২৮৮ রানেই শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস।

অভিষেকেই ৫১ রানে ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হন ইংলিশ পেসার জ্যাক বল।

এর আগে মিরপুরে শুক্রবার টস জিতে ব্যাট করতে নেমে বেন স্টোকসের সেঞ্চুরি, বেন ডাকেট আর জস বাটলারের ফিফটিতে ৮ উইকেটে ৩০৯ রান করে ইংলিশরা।

১০০ বলে ৮ চার ও ৪ ছক্কায় ১০১ রান করেন ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি করা স্টোকস। ৩৮ বলে ৪ চার ও ৩ ছক্কায় ৬৩ রান করেন অধিনায়ক বাটলার। অভিষিক্ত ডাকেটের ব্যাট থেকে আসে ৬০ রান।

বাংলাদেশের পক্ষে মাশরাফি বিন মুর্তজা, শফিউল ইসলাম, সাকিব আল হাসান নেন ২টি করে উইকেট। মাশরাফি ১০ ওভারে রান দিয়েছেন ৫২, শফিউল ৯ ওভারে ৫৯, সাকিব ১০ ওভারে ৫৯।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড: ৫০ ওভারে ৩০৯/৮
বাংলাদেশ ৪৭.৫ ওভারে ২৮৮
ফল: ইংল্যান্ড ২১ রানে জয়ী
ম্যাচসেরা: জ্যাক বল

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.