চাল বিতরণে অনিয়ম হলে ব্যবস্থা : প্রধানমন্ত্রী

অক্টোবর ৬, ২০১৬

pmঢাকা জার্নাল: সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, হতদরিদ্রদের জন্য দশ টাকা কেজি মূল্যের চাল বিতরণ কর্মসূচি অব্যাহত রাখা হবে। এই চাল বিতরণে কোনো অনিয়ম হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বুধবার বিকেলে দশম জাতীয় সংসদের দ্বাদশ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তরকালে আওয়ামী লীগের মীর শওকত আলী বাদশাহ এমপির এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন। জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে দিনের কার্যসূচি শুরু হয়। মাগরিবের নামাজের বিরতির পর সংসদে সভাপতিত্ব করেন ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতি ৫০০ জনের জন্য একজন ডিলার নিয়োগ করা হয়েছে। ডিলার ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা হতদরিদ্রদের তালিকা করে সেই অনুযায়ী চাল বিতরণ করবে। এই তালিকা প্রস্তুতকালে কোনো গড়মিল বা অনিয়ম যেন না থাকে সংসদ সদস্যরা সেই তালিকা যেন পর্যবেক্ষণও পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখেন। সরকারি কর্মকর্তারাও যেন পরীক্ষা করে দেখেন। যদি কেউ তালিকায় অনিয়ম করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ডিলারদের ডিলারশিপ বাতিল করা হবে। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যাদের প্রয়োজন তাদের নাম না থেকে যদি স্বচ্ছল কারও নাম থাকে তাহলে ঐ স্বচ্ছলদের নাম বাতিল হবে এবং অস্বচ্ছলদের নাম দেওয়া হবে।

২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ১০ টাকা কেজি চাল দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল না উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের আগে নির্বাচনী বক্তৃতায় দশ টাকা কেজি চালের কথা বলেছিলাম। তারই ধারাবাহিকতায় অস্বচ্ছল, হতদরিদ্রদের মাঝে ১০ টাকা কেজি মূল্যে চাল বিতরণের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগের ইস্রাফিল আলমের অপর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১০ টাকা কেজি চাল বিতরণ কর্মসূচি দীর্ঘদিন পর্যন্ত রাখার সিদ্ধান্ত আছে। ১৯৯৬ সালে যখন ক্ষমতায় আসি তখন হতদরিদ্রদের মাঝে স্বল্পমূল্যে ও বিনামূল্যে চাল সরবরাহ করে যাই। ১৯৯৮ সালের বন্যার পর ২০ কেজি করে চাল বিনামূল্যে ৫৫ লাখ মানুষের মাঝে ৯ মাস বিতরণ করেছি। তাই যতদিন প্রয়োজন ১০টাকা মূল্যের এই চাল বিতরণ কর্মসূচি অব্যাহত রাখব। যদিও অদূর ভবিষতে মানুষের আর্থিক সক্ষমতা বাড়ায় এই কর্মসূচি লাগবে না। তবে যারা শারীরিকভাবে অক্ষম, বয়োঃবৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের মাঝে এই বিতরণ অব্যাহত রাখবো।

লক্ষ্মীপুর-৪ আসনের মো. আবদুল্লাহ-এর এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, কোস্টগার্ডসহ অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা মাদক অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সারাদেশে মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার ও জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।

প্রধানমমন্ত্রী বলেন, যুবসমাজকে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকাশক্তি থেকে বিরত রাখার লক্ষে ইতোমধ্যে ক্রীড়া পরিদফতর দেশের তৃণমূল পর্যায়ে বাছাইকৃত প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। এর ফলে দেশের তৃণমূল থেকে উঠে আসবে প্রতিভাবান খেলোয়াড়। দেশের প্রতিটি উপজেলায় খেলার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে উপজেলা পর্যায়ে একটি করে মিনি স্টেডিয়াম নির্মিত হবে। ইতোমধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে। মিনি স্টেডিয়াম নির্মিত হলে তৃণমূল পর্যায়ে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে প্রশিক্ষিত ও সম্ভাবনাময় খেলোয়াড় তৈরি হবে। মাদক নির্মূলে সংস্কৃতি, শিক্ষা এবং প্রাথমিক গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

বগুড়া-৫ আসনের হাবিবুর রহমান এমপির এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদ রোধসহ জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান এবং সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষার মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, জনগণের মৌলিক ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে দৃঢ প্রতিজ্ঞ। শেখ হাসিনা বলেন, আইনশৃঙ্খলা উন্নতি এবং সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসীদের নির্মূল বর্তমান সরকারের একটি রাজনৈতিক অঙ্গীকার। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে অব্যাহতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। জঙ্গিবাদ দমনে পুলিশের নজরদারি ও তৎপরাতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। চিহ্নিত ও নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের সদস্যদের হালনাগাদ তালিকা প্রস্তুত পূর্বক গ্রেফতারের জন্য অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

মানিকগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের তারকা চিহ্নিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী সংসদকে জানান, বর্তমান সরকার রূপকল্প-২০২১ সামনে রেখে অগ্রসর হচ্ছে। সে কারণে তার দৃষ্টি কেবল এক বছরে সীমাবদ্ধ নয়। আওয়ামী লীগ ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ পেরিয়ে একটি শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ, সুখী এবং উন্নত জনপদে পরিণত করার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’ শীর্ষক নির্বাচনী ইশতেহারে ২০১৪ তে দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে বিশ্বের প্রথম সারির উন্নত দেশগুলোর সমপর্যায়ে উন্নীত করার রূপকল্প অঙ্কিত হয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের দারিদ্র্যের হার ২০১৫ সালের মধ্যে ১২.৯ শতাংশে কমিয়ে আনা হয়েছে। ২০২০ সালের নাগাদ তা ৮.৯ শতাংশে কমিয়ে আনা পরিকল্পনা রয়েছে।

ঢাকা জার্নাল, অক্টোবর ০৫, ২০১৬।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.