জঙ্গি আস্তানার ‘জাহাজবাড়ি যেন ভুতুড়ে বাড়ি’

সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৬

kollanpur-homeঢাকা জার্নাল : রাজধানীর কল্যাণপুরের ৫ নম্বর সড়কের জাহাজবাড়ি নামে পরিচিত ৫৩ তাজ মঞ্জিলে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের ২ মাস পার হয়েছে মঙ্গলবার। অভিযানের পরের দিন সংশ্লিষ্ট বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়াদের আটক করে পুলিশ। পরে ভাড়াটিয়াদের ছেড়ে দিলেও কেউ উঠেনি সেই বাড়িতে। ফাঁকাই রয়ে গেছে এই বাড়িটি।

জঙ্গি আস্তানার এ বাড়িকে এখন ‘জাহাজ বাড়ি যেন ভুতুড়ে বাড়ি’ বলে মন্তব্য করেছেন মহল্লার এক প্রবীণ বাসিন্দা। শাহীন আল হাসান নামে ওই বাসিন্দা জানান, তাজ মঞ্জিলের সামনের বাড়িটির মালিক ও বাসিন্দা তিনি নিজেই। ১৯৬২ সালে তার পরিবার এখানে উঠেন। জন্মের পর থেকে এখানেই তাদের বসবাস। বর্তমানে বাড়ির নিচে একটি মুদির দোকান পরিচালনা করছেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘২৬ জুলাইয়ের অভিযানের ঘটনায় কল্যাণপুরের এ এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে যে ভীতি ও আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে তা অনেকটা কেটে গেছে। মানুষ ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে ওঠেছে। কিন্তু এখনো জঙ্গি আস্তানার জাহাজ বাড়ি যেন ভুতুড়ে বাড়ি। বর্তমানে এই বাড়িতে পুলিশ ছাড়া কেউ প্রবেশ করতে পারেনা।’

শাহীন আল হাসান জানান, এখন আমরা বাড়িওয়ালারা বাড়ি ভাড়ার ক্ষেত্রে নিজ দায়িত্বে সকল তথ্য চেক, ক্রস চেক করে তবেই ভাড়া দিচ্ছি। ভাড়াটিয়া তথ্য ফরম পূরণ করে থানায় জমা দিচ্ছি।

৫৩ তাজ মঞ্জিলের পাশেই ৫২ হোল্ডিং এ রয়েছে, শিশু কল্যাণ কেজি এন্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল। স্কুল ছুটি দিয়ে বেরিয়ে যাবার সময় একজন শিক্ষিকা নাম প্রকাশ না করে পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘ঘটনা জানার পর আমরা শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকগণ ভীষণ টেনশনে ছিলাম। আমাদের স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও কমে যায়। তবে ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। এখন আমরা পূর্বের অবস্থানে ফিরে যেতে পারলেও বাড়িটির দিকে তাকালে হঠাৎ বুকটা ধপ করে ওঠে।’

কথা হয় ওই এলাকার রিকশা চালক আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে। তিনি পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘আমি কল্যাণপুরেই রিকশা চালাই। ঘটনার দিনও এলাকায় ছিলাম। তারপর থেকে আমার বয়সী অপরিচিত কাউকে দেখলেই ভয় ভয় লাগতো। কেমন যেনো জঙ্গি জঙ্গি মনে হত। কিন্তু এখন আর সেই ভয় অতটা নেই। কিন্তু জাহাজ বাড়ির সামনে দিয়ে যাত্রী নিয়ে প্রতিদিন কমবেশি যাতায়াত করি। বাড়ির সামনে আসলেই মনের ভেতর কিছু একটা হয়। কেমন যেনো লাগে।’

সরেজমিনে বেলা দুইটায় জাহাজবাড়ির সামনে গিয়ে দেখা মিলে একজন অফিসারের নেতৃত্বে চার পুলিশ সদস্যের সঙ্গে। এসময় ডিউটি ইনচার্জ মিরপুর থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) সুব্রত কুমার রায় পরিবর্তন ডটকমকে জানান, এ বাড়িতে অভিযানের পর থেকে মালিক পক্ষ বা ভাড়াটিয়া হিসেবে কোনো বাসিন্দা নেই। বাড়িটি এখনো পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। দিন রাত ২৪ ঘণ্টাই পুলিশ পাহাড়া থাকে বাড়ির গেটে। কবে বাড়িটি মালিক পক্ষকে হস্তান্তর করা হবে তা জানাতে পারেননি এ কর্মকর্তা।

এদিকে ঘটনার দুইমাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত মামলার প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি পুলিশ। তবে কল্যাণপুরের অভিযান থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও আলামতের সূত্র ধরে জঙ্গি দমন কার্যক্রম অনেক দূর এগিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

বিশেষ করে জঙ্গিদের মাস্টার মাইন্ড তামিম আহমেদ চৌধুরীকে তিন সহযোগীসহ নারায়ণগঞ্জে এবং মিরপুর ও আজিমপুরে মেজর জাহিদসহ গুরুত্বপূর্ণ জঙ্গি নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। অভিযানে তারা নিহতও হয়েছেন।

জাহাজবাড়ি ঘটনায় নিহত ৯ জনের মধ্যে  ৮ জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেলেও ১ জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কারণ হিসেবে পুলিশ সূত্র জানায়, ছবি দেখে কেউ তার পরিচয় নিয়ে এগিয়ে আসেনি। এছাড়া তার আঙুলের ছাপে কোনো জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া যায়নি।

রাজধানীর কল্যাণপুরের ৫ নম্বর সড়কের ‘জাহাজ বিল্ডিং’ নামে পরিচিত ওই বাড়িতে গত ২৬ জুলাই ভোরে পুলিশ অভিযান চালায়। ওই অভিযানে নিহত সবাই জামাতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (নব্য জেএমবি) গ্রুপের সদস্য বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ঢাকা জার্নাল, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৬।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.