স্কুলছাত্রের খোলা চিঠির জবাবে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি

সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৬

patuakhaliঢাকা জার্নাল: পটুয়াখালীর এক স্কুলছাত্রের খোলা চিঠির জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পায়রা নদীতে ব্রিজ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। নদী পারাপারে জনসাধারণের দুর্ভোগ লাঘবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে গত ১৫ আগস্ট চিঠি লিখে একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানায় পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র শীর্ষেন্দু বিশ্বাস। সেই চিঠির জবাবে খরস্রোতা পায়রা নদীর ওপর একটি ব্রিজ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শীর্ষেন্দুর গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠিতে যাওয়ার সময় উত্তাল পায়রা নদী পারি দিতে হয়। মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ নদী পাড় হয়। অনেক সময় নৌকা অথবা ট্রলার ডুবে যাওয়ার মত ঘটনা ঘটে সেখানে। এসব সমস্যা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে পায়রা নদীর ওপর একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানায় শির্ষেন্দু।  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিঠি হাতে পেয়ে উচ্ছ্বসিত হন। ফিরতি জবাবে তিনি ওই স্থানে একটি সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন।

শীর্ষেন্দু বিশ্বাস তার চিঠিতে উল্লেখ করেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সালাম ও শুভেচ্ছা নেবেন। আমি দেশের একজন সাধারণ নাগরিক। নাম শীর্ষেন্দু বিশ্বাস। বাবা বিশ্বজিৎ বিশ্বাস, মা শীলা রাণী সন্নামত। আমি পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির একজন নিয়মিত ছাত্র। আমার দাদু অবিনাস সন্নামত একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। আমি আপনার পিতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকীতে উপস্থিত ছিলাম। আমি আপনার পিতার শৈশবকাল নিয়ে রচনা লিখে তৃতীয় স্থান অধিকার করি। আমার গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি। আমাদের মির্জাগঞ্জ নদী পারি দিয়ে বাড়িতে যেতে হয়। এ নদীতে প্রচণ্ড ঢেউ। মানুষ ভয় পায়। এখানে কখনও নৌকা কখনও বা ট্রলার ডুবে যায়। এতে করে আমার থেকে ছোট ভাই-বোনরা তাদের মা-বাবাকে হারায়। আমি আমার মা-বাবাকে অনেক ভালোবাসি। তাদের হারাতে চাই না। তাই আপনার কাছে একটাই অনুরোধ যে আপনি আমাদের জন্য একটু কষ্ট করে মির্জাগঞ্জ নদীতে ব্রিজের ব্যবস্থা করুন। আজ  আর  নয়।

ইতি, আপনার দেশের একজন সাধারণ নাগরিক, শীর্ষেন্দু বিশ্বাস।’

চিঠি পেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৮ সেপ্টেম্বর স্বাক্ষর দিয়ে উত্তর পাঠিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘স্নেহের শীর্ষেন্দু, তুমি শুধু দেশের একজন সাধারণ নাগরিক নও, দেশের ভাবিষ্যত প্রজন্ম এবং দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নেওয়ার অগ্রজ সৈনিক। আমি জানি পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার পায়রা নদীটি অত্যন্ত খরস্রোতা। নিজের মা-বাবাসহ অন্যান্য পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এই নদী কেন্দ্রিক তোমার নিরাপত্তা সচেতনতা আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি বুঝতে পারি তোমার বীর মুক্তিযোদ্ধা দাদুর প্রভাব রয়েছে তোমার ওপর। মির্জাগঞ্জের পায়রা নদীতে একটি সেতু নির্মাণ করা হবে বলে তোমাকে আশ্বস্ত করছি।’

চিঠির সমাপ্তিতে প্রধানমন্ত্রী শীর্ষেন্দুসহ পরিবারের সদস্যদের মঙ্গল কামনা করেন।

শীর্ষেন্দুর মা শীলা রাণী সন্নামত সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার এখনও বিশ্বাস হয় না যে প্রধানমন্ত্রী আমার ছেলের চিঠি পড়েছেন।  আমি প্রধানমন্ত্রীকে হাজার হাজার প্রণাম জানাই। আমি খুবই গর্বিত।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সিদ্দিকুর রহমান জানান, আনুষ্ঠানিকভাবে   সোমবার সকাল ১১টায় জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক শীর্ষেন্দুর হাতে চিঠিটি হস্তান্তর করবেন। ৮ সেপ্টেম্বর লেখা প্রধানমন্ত্রীর চিঠিটি ২০ সেপ্টেম্বর স্কুলে পৌঁছায় বলে তিনি জানান।

পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক একেএম শামিমুল হক ছিদ্দিকী জানান, একটি শিশুর চিঠি পেয়ে উচ্ছ্বসিত ও আনন্দিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী যে মহানুভবতা দেখিয়েছেন তাতে আমরা গর্বিত ও আনন্দিত। আমাদের জেলার একটি শিশুর চিঠিতে মির্জাগঞ্জের একটি বড় নদীর ওপর প্রধানমন্ত্রীর ব্রিজ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি পেয়ে সবাই আনন্দিত। আমরা তার কাছে কৃতজ্ঞ।

ঢাকা জার্নাল, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৬।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.