শীর্ষেন্দুর চিঠির জবাব দিলেন প্রধানমন্ত্রী

সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৬

patuakhaliঢাকা জার্নাল: পটুয়াখালীর এক শিশু শিক্ষার্থী শীর্ষেন্দু বিশ্বাসের (৯) লেখা চিঠির জবাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ খবরে ওই শিশু শিক্ষার্থীকে নিয়ে পটুয়াখালীতে চলছে আলোচনার ঝড়।

১৩ আগস্টের একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে শীর্ষেন্দু সব ভয়কে দূরে ঠেলে পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার পায়রা নদীতে ব্রিজ নির্মাণের অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি চিঠি লিখে ফেলে। তার চিঠির জবাবে ওই এলাকায় একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী হাইস্কুলের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ও শহরের পুরান বাজার এলাকার বিশ্বজিৎ বিশ্বাস ও শীলা রানী স্বণ্যামতের একমাত্র সন্তান শীর্ষেন্দু বিশ্বাস।

মোবাইল ফোনে শীর্ষেন্দুর মা শীলা রানী জানান,  ১৩ আগস্ট স্বামী-সন্তানসহ বাবার বাড়ি ঝালকাঠির কাঠালিয়া উপজেলার আওরাবুনিয়া থেকে পটুয়াখালীর উদ্দেশে রওনা দেন তারা। এসময় পায়রা ও বিষখালী নদীতে প্রচণ্ড ঢেউ ছিলো। পায়রা নদী পার হওয়ার সময় বাতাস বইলে প্রচণ্ড ঢেউয়ের মধ্যে তারা নদীটি পারি দেন। এসময় তাদের শীর্ষেন্দু প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যায়।

এরপর ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে রচনা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ শেষে প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি চিঠি লেখে সে।

তিনি বলেন, চিঠিতে আমার বাবা (শীর্ষেন্দুর দাদু) একজন মুক্তিযোদ্ধা এ বিষয়টি উল্লেখ করে এবং প্রধানমন্ত্রীর বাবা শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকীতে রচনা প্রতিযোগিতায় তার পুরস্কার পাওয়ার কথা উল্লেখ করে।

চিঠিতে সে বাবা-মাকে ভালোবাসার কথা জানিয়ে লেখে, আমাদের গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি। মির্জাগঞ্জ নদী পার হয়ে আমাদের যেতে হয়। ওই নদীতে প্রচণ্ড ঢেউ কখনো নৌকা ডুবে যায়, কখনো কখনো ট্রলার ডুবে যায়। আর এ দুর্ঘটনায় অনেকেই প্রাণ হারিয়েছেন বলে সে তার বাবা মাকে হারাতে চায়না উল্লেখ করে।

ছেলেটির মা জানান, চিঠি লেখার পর তার বাবার সঙ্গে গুগলে সার্চ দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঠিকানা বের করে সে একটি প্যাকেটে চিঠিটি ভরে তার হাতে দেন।

প্রথমে গুরুত্ব না দিয়ে চিঠিটি পাঠাননি তিনি। পরে অভিমান করে খাওয়া বন্ধ করে দেয় সে। তখন তিনি মিথ্যা বলেন, এরপর ছেলে রশিদ দেখতে চাওয়ায় বাধ্য হয়েই ২৭ আগস্ট চিঠিটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঠিকানায় পাঠান। তখন তিনি বুঝতেও পারেননি চিঠিটি প্রধানমন্ত্রী দেখবেন।

তিনি আরো বলেন, এরপর একদিন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ফোন এলে চিঠি পাওয়ার বিষয়টি তিনি নিশ্চিত হন। এসময় তারা ঠিকানা জানতে চাইলে শীলা রানী নিজের ঠিকানা দিতে চান কিন্তু তারা শীর্ষেন্দু বিশ্বাসের ঠিকানা চান।

এরপর তিনি প্রধানমন্ত্রীর সেই চিঠি পাওয়ার বিষয়টি স্কুলের মাধ্যমেই জানতে পারেন। যা আগামীকাল ২৬ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসকের উপস্থিতিতে শীর্ষেন্দু বিশ্বাসের হাতে দেওয়া হবে।

প্রধানমন্ত্রী ওই চিঠির জবাবে শীর্ষেন্দুর পরিবার, স্কুল ও এলাকার সবাই উচ্ছ্বসিত।

স্কুল সূত্রে জানা যায়, চিঠিতে নৌকায় করে নদী পার হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে শীর্ষেন্দু বিশ্বাসের উদ্বেগের প্রশংসা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী চিঠিতে পায়রা নদী যে অত্যন্ত খরস্রোতা সে বিষয়ে তিনি অবগত আছেন উল্লেখ করে শীর্ষেন্দুকে সেখানে একটি ব্রিজ নির্মাণের আশ্বাস দেন।

স্কুল থেকে আরো জানা যায়, ৮ সেপ্টেম্বর লেখা প্রধানমন্ত্রীর চিঠিটি ২ দিন আগে স্কুলে এসে পৌঁছায়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে স্কুলের প্রধান শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর লেখা চিঠি সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় শীর্ষেন্দুর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হবে, যেখানে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক উপস্থিত থাকবেন।

শীর্ষেন্দুর বাবা পটুয়াখালী শহরের একটি এনজিওতে কর্মরত এবং তার মা জেলা সমবায় কার্যালয়ে কর্মরত।

ঢাকা জার্নাল, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৬

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.