জালিয়াতি ঠেকাতে কঠোর নিরাপত্তা ঢাবি ভর্তি পরীক্ষায়

সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৬

duadmissiontestঢাকা জার্নাল : প্রতিবছর জালিয়াতি আর অসদুপায়ের নতুন নতুন ফন্দি বের হওয়ার খবরের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ‌্যালয়ে এবার ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়েছে কঠোর নিরাপত্তার মধ‌্যে।

বিশ্ববিদ‌্য‌ালয় ক‌্যাম্পাস ও বাইরের মোট ৭৩ কেন্দ্রে শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা হয়, যাতে অংশ নেয় ৩৪ হাজার ৬১৬ জন শিক্ষার্থী।

মোবাইল ফোনসহ টেলিযোগাযোগ করা যায় এমন যে কোনো ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ ছিল নিষিদ্ধ। আর বিষয়টি নিশ্চিত করতে ভর্তিচ্ছুদের হলে ঢোকার আগে সার্চ করা হয়েছে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে।

জালিয়াতি ঠেকানোর পাশাপাশি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রগুলোতে মোতায়েন ছিলেন ২৭০ জন পুলিশ সদস‌্য। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের রোভার স্কাউট ও বিএনসিসি বিপুল সংখ্যক সদস্য এ কাজে নিয়োজিত ছিলেন।

পরীক্ষা চলার সময় প্রস্তুত ছিল ভ্রাম্যমাণ আদালত। উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, অসুদপায় অবলম্বন করে ধরা পড়লে কেন্দ্র থেকে পাঠানো হবে সরাসরি জেলে।

তবে শেষ পর্যন্ত জালিয়াতির কোনো খবর না আসায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

গত বছর ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ক্রেডিট কার্ডের মতো দেখতে একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্রসহ এক ভর্তিচ্ছু ধরা পড়েন। পরে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তাকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

টিভি থেকে নেওয়া ছবি টিভি থেকে নেওয়া ছবি ব্যাংকের এটিএম কার্ডের মত দেখতে ওই যন্ত্রের সঙ্গে এই জালিয়াতিতে ব্যবহার করা হয় তারবিহীন ‘ব্লুটুথ’ ইয়ারপিস। যাতে সিম যুক্ত করে মোবাইল ফোনের মত ব্যবহার করা যায়। আকারে ছোট হওয়ায় অন্য কারও দৃষ্টি আকর্ষণ না করে সহজেই তা কানের সঙ্গে আটকে রাখা যায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল ও কলেজ, গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ, ঢাকা সিটি কলেজ, আজিমপুর গার্লস স্কুল অ‌্যান্ড কলেজ এবং বদরুন্নেছা মহিলা কলেজে ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র হয়েছে এবার।

সকালে বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, ফটকে অবস্থান নিয়ে আছেন পুলিশ সদস‌্যরা। প্রবেশপত্র দেখে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি করে পরীক্ষার্থীদের হলে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে।

কলাভবনের সামনে ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা পরীক্ষার্থীদের সহায়তার জন্য তথ্যকেন্দ্র সাজিয়ে বসেছিলেন। পরীক্ষার হল ও আসন খুঁজে বের করাসহ প্রয়োজনীয় বিভিন্ন তথ্য সেবা দিয়েছেন তারা।

পরীক্ষার হল পরিদর্শন শেষে উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক সাংবাদিকদের বলেন, “কলাভবন ও কার্জন হলসহ বড় কয়েকটি কেন্দ্র পরিদর্শন করেছি। সেখানে ১/২জন করে ভতিচ্ছু অনুপস্থিত রয়েছে।”

টিভি থেকে নেওয়া ছবি টিভি থেকে নেওয়া ছবি পরীক্ষা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক এম আমজাদ আলী সাংবাদিকদের বলেন, “এবার পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কোনো ধরনের জালিয়াতি ঘটনা ঘটেনি। ডিএমপি পুলিশ বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করেছেন। তাদের ধন্যবাদ জানাই।”

তিনি বলেন, “জালিয়াতি ঠেকাতে এবং নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ মেটাল ডিটেক্টর ব্যবহার করেছে, যাতে কোনো ধাতব ডিভাইস নিয়ে কেউ হলে ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে।”

জালিয়াত চক্রের প্রলোভনে সাড়া না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে অভিভাবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এমসিকিউ উত্তরপত্র কম্পিউটার ছাড়া কেউ পড়তে পারবে না। সুতরাং খাতা জালিয়াতির সুযোগ নেই।

শাহবাগ থানা পুলিশের পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ বলেন, “পরীক্ষা হলে যাতে নাশকতা না ঘটে এবং পরীক্ষার্থীরা যাতে কোনো ডিভাইস নিয়ে হলে যেতে না পারে, সেজন্য পুলিশ মেটাল ডিটেক্টর ব্যবহার করেছে। জনস্বার্থেই এ ব‌্যবস্থা।”

পরীক্ষার সময় দায়িত্ব পালন করা নির্বাহী ম্যাজিট্রেট আয়েশা হক সাংবাদিকদের বলেন, অসদুপায় যারা অবলম্বন করতে চায়, আগে তারা বই বা চিরকুট নিয়ে হলে যেতে। এখন জালিয়াতির ধরন বদলে গেছে।

“এখন তারা ইলেট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে অপরাধ করেছে। পরীক্ষায় জালিয়াতি আইনে সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডের বিধান আছে। তারপরও তারা শিক্ষার্থী বলে অপরাধে ধরন বিচার করে আমরা সাজা দিয়ে থাকি।

ঢাকা জার্নাল, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৬।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.