সুন্দরবনের নীচে রামপাল সভ্যতার সন্ধান লাভ

সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৬

maskawthমাসকাওয়াথ আহসান । । সুন্দরবনের করাল গ্রাসে হারিয়ে গেছে রামপাল নগর সভ্যতার ঐশ্বর্য। প্রত্ন গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে প্রাচীন গ্রীসের এথেন্স নগর সভ্যতার অনেক আগেই ভারতবর্ষের দক্ষিণ-পূর্বে গড়ে উঠেছিলো রামপাল নগর সভ্যতা। এটি ছিলো কয়লাভিত্তিক একটি সভ্যতা। অতি প্রাচীনকালে কয়লা জ্বালানী ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উতপাদন করা হতো এই নগরীতে। তৌফিসিয়াস নামে একজন বিজ্ঞানী ও অর্থ শাস্ত্রবিদ এই বিদ্যুৎ উতপাদনের জনক। লিবারেল আর্টসের প্রতিটি শাখায় তার ব্যুতপত্তি ছিলো। তিনিই প্রথম রামপাল নগরীর প্রতিটি মানুষকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন, কয়লার মতো গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী দিয়ে দাঁত মেজে এর মজুদ না কমিয়ে তা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব।

প্রত্ন গবেষণায় জানা যায়,কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উতপাদনের ফলে পুরো রামপাল সভ্যতাটিই নানাভাবে উপকৃত হয়েছিলো। নগরীর নারীদের মুখমণ্ডলের ত্বক কয়লায় বাষ্পে খুবই মসৃণ হয়ে পড়ায় তারা অনিন্দ্য সুন্দর হয়ে উঠেছিলো। কথা সাহিত্যিক বংকিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়-এর কথাশিল্পে বর্ণিত কপালকুণ্ডলা রামপাল সভ্যতার শেষ বংশধর বলে মনে করছেন অনেক গবেষক।

রামপাল সভ্যতায় কাব্য চর্চার নজির চোখে পড়ে। কাব্যচর্চার রামপাল ঘরানাটিকে কয়লা-কাব্য বলা হয়। এসময়ের উল্লেখযোগ্য কবিদের মাঝে বিটুস্টোটল ছিলেন প্রধানতম। তার লেখা “কয়লা-অমৃতচরিত” কাব্য কয়লা বিদ্যুতে উজ্জ্বল রামপাল নগরীর নয়নাভিরাম সৌন্দর্য্যের প্রামাণিক বয়ান হয়ে আজো রয়ে গেছে। কয়লার মধ্যে জীবনের যে গভীর সত্য লুকিয়ে আছে তার অনুসন্ধান কবি করেছেন অনুপম ছন্দে।

রামপাল নগরীর দার্শনিকদের মধ্যে আরাস্টোফেনিস উল্লেখযোগ্য। রামপাল নগরীর বিদ্যুৎ সভ্যতার উত্থানে যে রেনেসাঁর অভ্যুদয় ঘটেছিলো তা ব্যাপক ভাবে আরাস্টোফেনিস-এর “পোড়াও কয়লা; মুছে দাও দিবানিশির পার্থক্য” দর্শন প্রভাবিত। প্রাচীন রামপাল নগরীতে কয়লা বিদ্যুৎ উতপাদনের কারণে দিনরাত্রির কোন পার্থক্য ছিলো না। সবসময় স্টেডিয়ামের মতো উতসবের ঐন্দ্রজাল বিরাজ করতো সেখানে। স্টেডিয়ামের মাঝখানে বসে আরাস্টোফেনিস দিকভ্রান্ত তরুণদের হিতোপদেশ দিতেন। প্রত্ন অনুসন্ধানে জানা যায় রামপালনগরীর কিছু তরুণ এই কয়লা বিদ্যুতকেন্দ্রের বিরুদ্ধে অরণ্য সভ্যতা গড়ে তোলার ষড়যন্ত্র করেছিলো। মূলতঃ সেই বিপথগামী তরুণেরাই গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সুন্দরবন সৃষ্টি করে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ সভ্যতার অবসান ঘটায়। এ বিষয়টি আরাস্টোফেনিসের আত্মজীবনীতে উল্লেখ রয়েছে।

অবশ্য উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা বলছেন অন্যকথা। তারা মনে করেন রামপাল সভ্যতার কাল হয়েছে কয়লার অতিরিক্ত ব্যবহার। ভূপৃষ্ঠের নীচে বৃক্ষ চাপা পড়েই যেহেতু ক্রমে ক্রমে কয়লায় রুপান্তরিত হয়; তাই প্রতিটি কয়লা খণ্ডের মধ্যেই থেকে যায় বৃক্ষ হয়ে ওঠার বাসনা।ফলে কয়লা বিদ্যুতের রেনেসায় মাতোয়ারা রামপালনগরীর চিন্তকেরা বুঝে উঠতে পারেননি অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উতপাদনে নিয়ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন হওয়ায় নগরীর ভূ-গর্ভস্থ কয়লাগুলো আবার নবজীবন পেতে শুরু করেছে। অন্যদিকে মানুষের বাঁচার জন্য দরকার অক্সিজেন। কিন্তু নিয়ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে মানুষ পূর্ণাঙ্গ গাছ হতে না পারলেও শ্বাসমূলে পরিণত হতে থাকে।

কবি বিটুস্টোটল তার জীবন সায়াহ্নে লেখা এক কবিতায় উল্লেখ করেছেন, কী করে চোখের সামনে কয়লাগুলো বৃক্ষ হয়ে গেলো; এমনকি সুন্দরী নারীরাও; অথচ আমাদের মতো কয়লাপ্রেমী পুরুষগুলো কেমন শ্বাসমূল হয়ে রয়ে গেলো; স্বার্থপর এই সুন্দরী বৃক্ষরাও। উহার নাম দিলাম, সুন্দরবন।

আরাস্টোফেনিসের সর্বশেষ বর্ণনায় পাওয়া যায়, একসময়ের আলোকজ্জ্বল রামপালনগরী আজ ছেয়ে গেছে সবুজ বনানীতে; আমি হয়ে আছি শ্বাসমূল; কিছু শ্বাসমূলের উচ্চতা ৪ ফিট আট ইঞ্চি। তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ঘুরছে বনানীতে।

লেখক, সাংবাদিক ও শিক্ষক।

ঢাকা জার্নাল, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৬।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.