এত হাড়-চামড়া-শিং যায় কোথায়?

সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৬

harঢাকা জার্নাল : কোরবানির ঈদ সামনে রেখে এবারও প্রায় এক হাজার মণ পশুর হাড় সংগ্রহের লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। শুধু হাড়ই নয়, পশুর রক্ত, নাড়িভুঁড়ি, শিং, দাঁত, যৌনাঙ্গ সংগ্রহে মাংস ব্যবসায়ীরা তিন-চার গুণ অতিরিক্ত শ্রমিক নিয়োগ করেছেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, এবার যেসব গবাদিপশু কোরবানি দেওয়া হয়েছে, এর মধ্যে গরু-মহিষই রয়েছে ৫৫ লাখ।

বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির তথ্য অনুযায়ী, গত বছর শুধু কোরবানির পশু থেকে এক হাজার মণ হাড়, ছয় হাজার কেজি যৌনাঙ্গ এবং পাঁচ শ মণ গোল্লা (নাড়িভুঁড়ি বিশেষ) সংগ্রহ করা হয়েছিল। সাধারণভাবে সমিতি সারা দেশ থেকে মাসে আড়াই শ মণ হাড় সংগ্রহ করতে পারে। সারা বছরের এক-তৃতীয়াংশ সংগ্রহ আসে কোরবানির সময়। এ কারণে এ সময় বর্জ্য সংগ্রহে লোকবল বাড়ানো হয়।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ১৭০ কোটি টাকার পশুর হাড়, যৌনাঙ্গ ও গোল্লা বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের পশুর বর্জ্যের বড় বাজার হলো থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, চীন ও জাপান।

মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বলেন, ‘বিদেশে পশুর বর্জ্যের চাহিদা অনুযায়ী আমরা রপ্তানি করতে পারি না। আমাদের লক্ষ্য একটি পশুর বর্জ্যও যেন নষ্ট না হয়। দেশের বেশির ভাগ মানুষ পশুর বর্জ্যের গুরুত্ব সম্পর্কে জানে না। বিষয়টি নিয়ে প্রচার চালাতে আমি ব্যক্তিগতভাবে “জীবন বাঁচাতে, জীবন সাজাতে পশুর বর্জ্য অপরিহার্য” স্লোগান লিখে লিফলেট (প্রচারপত্র) বিতরণ করছি।’

রবিউল বলেন, পশুর বর্জ্য সংগ্রহে গরু-মহিষকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়। গরুর আকার অনুসারে একটি গরু থেকে ৫ থেকে ১০ কেজি হাড় সংগ্রহ করা যায়। মহিষ থেকে পাওয়া যায় ২০ কেজি। একটি ছাগল থেকে পাওয়া যায় ৫-৬ ছটাক হাড়। আশা করা যায়, গতবারের মতো অথবা গতবারের চেয়ে বেশি পরিমাণে হাড়সহ বর্জ্য এবার সংগ্রহ করা সম্ভব হবে।

সমিতি সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ৫৫ লাখ গরু ও মহিষ এবং ৩০-৩৫ লাখ ছাগল কোরবানি হয়ে থাকতে পারে। গত বছর কোরবানির গরু-মহিষের সংখ্যা ছিল ৫৭ লাখ। সংখ্যায় কম হলেও বিভিন্ন পর্যায়ের প্রক্রিয়া শেষে গতবারের মতোই এক হাজার মণ হাড়সহ অন্যান্য বর্জ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। লোকজনের খাবারের পর ফেলে দেওয়া হাড় ডাস্টবিনসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহের জন্য কোরবানির সময় অতিরিক্ত শ্রমিক নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া চামড়া থেকে আসা বর্জ্য সংগ্রহ করা হবে বিভিন্ন ট্যানারি থেকে।

জানা গেছে, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও চীনে গরু-মহিষের যৌনাঙ্গ অত্যন্ত দামি ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সেখানে একেকটি যৌনাঙ্গ ৬-৭ ডলারেও বিক্রি হয়। গরু-মহিষের দাঁত ও হাড় থেকে ক্যাপসুলের কাভার তৈরি হয়। ট্যানারি থেকে পাওয়া উচ্ছিষ্ট চামড়া জুতার সোল এবং প্রক্রিয়াজাত করা চামড়ার ফেলে দেওয়া অংশ থেকে সিরিশ কাগজ তৈরি হয়।

রক্ত থেকে তৈরি হয় মুরগি ও পাখির খাবার। রক্ত সংগ্রহের পর তা সেদ্ধ করা হয় এবং শুকিয়ে গুঁড়ো করা হয়। পরে সেই গুঁড়োর সঙ্গে শুঁটকি মাছ, সয়াবিন তেল ও জব মিলিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে দানাদার খাবার তৈরি করা হয় মুরগি ও পাখির জন্য। চর্বি দিয়ে সাবান তৈরি হয়। শিং থেকে আগে অডিও-ভিডিও ফিল্ম তৈরি হতো। এখন এর চাহিদা কমে যাওয়ায় শিং থেকে বোতাম ও চিরুনি বেশি তৈরি হয়।

মহিষের শিংয়ের ডগা থেকে জাপানে এক ধরনের খেলনা তৈরি করা হয়। গরু ও মহিষের নাড়ি প্রক্রিয়া করে মানুষের খাবারও তৈরি করা হয়। জাপানে এই নাড়িভুঁড়ি দিয়ে ‘শোস্যাট রোল’ নামে এক ধরনের খাবার বানানো হয়। এই খাবার জাপানে বেশ জনপ্রিয়।

রবিউল আলম বলেন, পশুর সব বর্জ্যই রপ্তানিযোগ্য। এ সম্পর্কে সরকার ও দেশবাসীকে সচেতন করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে অনেকবার সমিতির পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে। তবে আলোচনার জন্য কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

তিনি বলেন, ‘আমরা যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছি, যাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি, তাদের পক্ষে যতটুকু সম্ভব পশুর বর্জ্য রক্ষা করে বিদেশে রপ্তানি করছি। এ খাতে নজর দিলে কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।’

ঢাকা জার্নাল, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৬।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.