আমি চাই না এদেশের মানুষের মধ্যে ‘দুস্থ’ শব্দটা থাকুক: প্রধানমন্ত্রী

সেপ্টেম্বর ৭, ২০১৬

pm kuriঢাকা জার্নাল: বাংলাদেশের মানুষ আর না খেয়ে মারা যাবে না, দারিদ্র্য ও ক্ষুধায় কেউ কষ্ট পাবে না। বাংলাদেশ হবে দারিদ্র্যমুক্ত দেশ। কুড়িগ্রামের চিলমারীতে বুধবার ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির’ উদ্বোধন করে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখার সময় এ প্রত্যয় ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চিলমারী থানাহাট এ ইউ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বুধবার দুপুরে আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশে ১০ টাকার চাল সাড়ে তিন টাকা দরে নামিয়ে এনেছিলেন তিনি। কিন্তু তাকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে সোনার বাংলা গড়ে তোলার সেই স্বপ্ন কেড়ে নেওয়া হয়। পরবর্তী সরকার  সেই কাজ আর বাস্তবায়ন করেনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর ১৯৮৪ সালে দেশে ফিরে এসে সারাদেশ ঘুরে ঘুরে সাধারণ মানুষের দুঃখ দুর্দশা নিজের চোখে দেখেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘ তখনই আমি শপথ নেই যদি কখনও ক্ষমতায় যেতে পারি এদেশের একটা মানুষও না খেয়ে মরবে না। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর আমরা সে প্রতিশ্রুতি পূরণে অনেকদূর এগিয়েছিলাম। এবার আমরা শপথ নিয়েছি এদেশের একটা মানুষও আর না খেয়ে মরবে না। আমি চাই না এদেশের মানুষের মধ্যে ‘দুস্থ’ শব্দটা থাকুক।’

সভাস্থ‌লে ফা‌তেমা বেগম না‌মে সু‌বিধা‌ভোগী এক নারীর হা‌তে কার্ড ও চাল তু‌লে দেওয়ার মাধ্যমে এই  কর্মসূ‌চির উদ্বোধন ক‌রেন। প্রধানমন্ত্রী মোট ১৫ জন সু‌বিধা‌ভোগী নারী ও পুরু‌ষের হা‌তে এই  কার্ড ও চা‌লের ব্যাগ তু‌লে দেন।

এর মাধ্য‌মে নির্বাচনী ইশ‌তেহা‌রে ঘো‌ষিত ১০ টাকা দ‌রে চাল প্রদা‌নের ঘোষণার সফল বাস্তবায়ন ঘটা‌লেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হা‌সিনা। এ কর্মসূচির স্লোগান রাখা হয়েছে ‘শেখ হাসিনার বাংলাদেশ, ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ’।

খাদ্য মন্ত্রণাল‌য়ের উদ্যো‌গে এ কর্মসূচির আওতায় দেশের ৫০ লাখ হতদরিদ্র পরিবার ১০ টাকা কেজিতে প্রতিমাসে ৩০ কেজি করে চাল পাবে। প্রতি বছর মার্চ ও এপ্রিল এবং সেপ্টেম্বর, আক্টোবর, নভেম্বর এই পাঁচ মাস খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় চাল পাবে হতদরিদ্র পরিবারগুলো। এর ফ‌লে সরকার‌কে প্র‌তি বছর দুই হাজার একশ কো‌টি টাকা ভর্তু‌তি দি‌তে হ‌বে। প্র‌তি কে‌জি‌ চাল ৩৭ টাকা দ‌রে কি‌নে ১০ টাকা দ‌রে হতদ‌রিদ্র‌দের হাতে তু‌লে দেওয়ার মধ্য দি‌য়ে প্র‌তি কে‌জি চা‌লের ওপর ২৭ টাকা ভর্তু‌কি প্রদান কর‌ছে সরকার।

 

খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলা‌মের সভাপ‌তি‌ত্বে ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠা‌নে অারও উপ‌স্থিত ছি‌লেন কৃ‌ষিমন্ত্রী ম‌তিয়া চৌধুরী, সংস্কৃ‌তিমন্ত্রী অাসাদুজ্জামান নূর, স্থানীয় সরকার প্র‌তিমন্ত্রী ম‌শিউর রহমান রাঙ্গা, সমাজকল্যাণ প্র‌তিমন্ত্রী  নূরুজ্জামান আহমেদ, অাওয়ামী লী‌গের সাংগাঠ‌নিক সম্পাদক খা‌লিদ মাহমুদ চৌধুরী এম‌পি, কু‌ড়িগ্রাম-৪ অাস‌নের স্থানীয় সংসদ সদস্য রুহুল অা‌মিন এম‌পি, জেলা অাওয়ামী লী‌গের সভাপ‌তি অা‌মিনুল ইসলাম মঞ্জু মণ্ডল, সাধারণ সম্পাদক জাফর অালী, চিলমারী উপ‌জেলা প‌রিষদ চেয়ারম্যান ও উপ‌জেলা অাওয়ামী লী‌গের সভাপতি শওকত অালী সরকার ‌বীর‌বিক্রম সহ কেন্দ্রীয় ও জেলা অাওয়ামী লী‌গের নেতারা।

বুধবার  এর আগে সকাল   সা‌ড়ে দশটায় হেলিকপ্টার যো‌গে কু‌ড়িগ্রা‌মের চিলমারী উপ‌জেলার থানাহা‌টে উপ‌স্থিত হন প্রধানমন্ত্রী।

উল্লেখ্য, কুড়িগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, কুড়িগ্রামে ১ লাখ ২৫ হাজার ২শ ৭৯ টি পরিবার এ কর্মসূচির আওতায় চাল পাবে। এর ম‌ধ্যে শুধু চিলমারী উপ‌জেলা‌তেই ৮ হাজার ২১ প‌রিবার এই  খাদ্য সহায়তা পা‌বে। এছাড়া সদরে ১৭ হাজার ৭২২টি, নাগেশ্বরীতে ২৪ হাজার ২০টি, ভুরুঙ্গামারীতে ১৩ হাজার ৯৮৫টি, ফুলবাড়ীতে ৯ হাজার ২৯৮টি, রাজারহাটে ১০ হাজার ৬০২টি, উলিপুরে ২৪ হাজার ২০৮টি, রৌমারীতে ১২ হাজার ৬৮৫টি ও রাজীবপুর উপজেলায় ৪ হাজার ৭৩৮টি কার্ড বিতরণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। চাল বিক্রির জন্য জেলায় ২৪৭ জন সম্ভাব্য ডিলারের মধ্যে ১২৬ জনকে ইতোমধ্যে নিযুক্ত করা হয়েছে।

ঢাকা জার্নাল, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০১৬।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.