স্মার্টকার্ডে যেসব সুবিধা পাওয়া যাবে

সেপ্টেম্বর ৬, ২০১৬
smcVision Led ad on bangla Tribuneঢাকা জার্নাল : আগামী মাস (অক্টোবর) থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডির স্মার্টকার্ড বিতরণ শুরু হচ্ছে। উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর তিন স্তরের ২৫টি নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সম্বলিত এই স্মার্টকার্ডে ভোটারদের সব তথ্য সংরক্ষিত থাকবে। টু-ডি বারকোড যুক্ত যন্ত্রে পাঠযোগ্য এই কার্ড সহজে নকল করা সম্ভব হবে না। বর্তমানে প্রচলিত লেমিনেটেড জাতীয় পরিচয়পত্রে প্রাপ্ত সুবিধার বাইরে অসংখ্য কাজে ব্যবহার করা যাবে এ কার্ডটি। অনেক ধরনের নাগরিক সেবা পেতেও বাধ্যতামূলকভাবে এই কার্ডের দরকার হবে।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন।

ভবিষ্যতের চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখেই সেই ধরনের সুযোগ-সুবিধা রেখেই এই স্মার্টকার্ড তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এনআইডি অণুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দিন। কার্ডের মানের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কার্ডের গুণ ও ব্যবহারগত মানের দিক থেকে এটি এখন বিশ্বের সাথে এক নম্বর। এটি আন্তর্জাতিকভাবে সার্টিফাইড একটি কার্ড।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে বিশ্বের ৫০টির মতো দেশের নাগরিকদের উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) রয়েছে। ইউরোপের দেশগুলো ছাড়াও সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াতেও স্মার্টকার্ডের প্রচলন আছে। নির্বাচন কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, বাংলাদেশের স্মার্টকার্ড বর্তমান প্রচলিত বিশ্বের যেকোনও দেশের চেয়ে উন্নত মানের।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বের যেসব দেশে বর্তমান উন্নত ধরনের জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে, তার সবগুলোর সঙ্গে তুলনা করে সর্বোচ্চ প্রযুক্তিগত সুবিধাযুক্ত করে বাংলাদেশের স্মার্টকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে।

এনআইডি সূত্রে জানা যায়, ৩টি স্তরে যে ২৫টি নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য রয়েছে, এর মধ্যে প্রথমস্তরের তথ্যগুলো খালি চোখে দেখা ‍যাবে। দ্বিতীয় স্তরের তথ্যগুলো দেখতে প্রয়োজন পড়বে ম্যানিফাইং গ্লাসের মতো কোনও যন্ত্রের। আর তৃতীয় স্তরে ল্যাবরেটরিতে ফরেনসিক করতে হবে।

যেসব সুবিধা থাকছে স্মার্টকার্ডে

স্মার্টকার্ড হবে ১০ অংকের। আগের মতো ১৩ কিংবা ১৬ ডিজিটের লম্বা লাইন থাকছে না। দেখতে অনেকটা ব্যাংকের এটিএম কার্ডের আদলেই তৈরি করা হচ্ছে এটিকে। স্মার্টকার্ডের ১০ ডিজিট ব্যবহার করে দেশের একজন নাগরিক তার মৃত্যু পর্যন্ত নাগরিকদের সব রকমের সুযোগ-সুবিধা নিতে পারবেন।

নতুন এনআইডি কার্ডধারী একজন নাগরিক দেশে যেসব সুবিধা পাবেন, তার মধ্যে রয়েছে ড্রাইভিং লাইসেন্সপ্রাপ্তি ও নবায়ন, আয়কর শনাক্তকরণ (TIN) নম্বরপ্রাপ্তি, পাসপোর্টপ্রাপ্তি ও নবায়ন, চাকরির আবেদন, স্থাবর সম্পত্তি কেনাবেচা, টিআইএনপ্রাপ্তি, বিয়ে রেজিস্ট্রেশন, ব্যাংকহিসাব খোলা ও ঋণপ্রাপ্তি, শেয়ার-বিও অ্যাকাউন্ট, সরকারি বিভিন্ন ভাতা উত্তোলন, সরকারি কর্মচারীদের বেতন ও অবসরপ্রাপ্তদের পেনশন উত্তোলন, সরকারি ভর্তুকি, সহায়তা ও সাহায্যপ্রাপ্তি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি, বিমানবন্দনে ‍আগমন ও বহির্গমন সুবিধা, শেয়ার আবেদন ও বিও অ্যাকাউন্ট খোলা, ট্রেড লাইসেন্সপ্রাপ্তি, যানবাহন রেজিস্ট্রেশন, বিয়ে ও তালাক রেজিস্ট্রেশন, বিমা স্কিম, ই-গভর্নেন্স, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ, বিভিন্ন ধরনের ই-টিকিটিং, মোবাইল সংযোগ, হেলথকার্ড, ই-ক্যাশ, ব্যাংক লেনদেন ও শিক্ষার্থীদের ভর্তির কাজ ছাড়াও আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় কাজ করা যাবে।

প্রচলিত এসব কাজের বাইরেও আরও অনেক কাজে স্মার্টকার্ড ব্যবহার করা যাবে বলে এনআইডি অণুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দিন জানিয়েছেন।  উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখন ই-গেটিং পদ্ধতি চালু রয়েছে। সেখানে আমাদের এই কার্ডগুলো ব্যবহার করা যাবে। আবার ধরুন, ভবিষ্যতে সার্ক দেশগুলো ভিসা উঠিয়ে দিয়ে এই ই-গেটিং চালু করলো। তখন কিন্তু আমাদের এর জন্য নতুন করে প্রস্তুত নিতে হবে না। আমাদের এই কার্ডই তখন গ্রহণযোগ্য হবে।’

কার্ডের মান সম্পর্কে সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দিন বলেন, ‘আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আমাদের কার্ডটি যাতে গ্রহণযোগ্য হয় এবং ব্যবহার করতে পারি, তার জন্য আমরা ২০ ধরনের সনদ নিয়েছি। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এটি সার্টিফাইড একটি কার্ড।’

স্মার্টকার্ড প্রসঙ্গে আরো যা জানালো ইসি

স্মার্টকার্ড অনলাইন ও অফলাইন উভয় প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করা যাবে বলে এনআইডি মহাপরিচালক সুলতানুজ্জামান জানিয়েছেন। তিনি জানান, নাগরিকের তথ্য যাচাইয়ের জন্য বর্তমানে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের সাথে ইসির চুক্তি রয়েছে। স্মার্টকার্ড চালু হয়েছে এই অনলাইনের তথ্য যাচাইয়ের পাশাপাশি অফলাইনেও তথ্য যাচাই করা যাবে। এজন্য ইসি থেকে একটি সফটওয়্যার ফ্রিতে সরবরাহ করা হবে এবং ওই সফটওয়্যারের মাধ্যমে যে কেউ ভোটারদের তথ্য যাচাই করতে পারবেন। এক্ষেত্রে চাকরিদাতা কোনও প্রতিষ্ঠান বায়োডাটা না নিয়ে কেবল আইডি কার্ডের নম্বর পেলে যেকোনও ব্যক্তির তথ্য পেতে পারবে, যা অনেক বেশি নিরাপদ ও সহজতর হবে।

এছাড়া আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্মার্টকার্ড ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে এনআইডি মহাপরিচালক বলেন, ‘অনেক দেশ তাদের দেশ ভ্রমণে ই-গেটিং পদ্ধতি চালু করেছে। সেখানে পাসপোর্টের পরিবর্তে নাগরিকের আইডি কার্ড পারমিট করা হয়। এক্ষেত্রে আমাদের কার্ডটি গ্রহণযোগ্য হবে। আবার ভবিষ্যতে সার্ক কান্ট্রি বা আসিয়ান যদি ভিসার পরিবর্তে ই-গেটিং চালু করে, তাহলে তার জন্য নাগরিকদের যে মানের কার্ড প্রয়োজন হবে, আমাদের স্মার্টকার্ডটি সেই মানেরই করা হয়েছে। অর্থাৎ আমরা এমন কিছু কম্পোনেন্ট যুক্ত করেছি, যেটি ভবিষ্যতে কোনও পদ্ধতি চালু হলে যেন কাজে লাগানো যায়।’

স্মার্টকার্ড অফলাইনে ব্যবহারের সুযোগ থাকবে উল্লেখ করে সুলতানুজ্জামান বলেন, ‘বর্তমানে ৪০টির মতো প্রতিষ্ঠানের সাথে ইসির তথ্য বিনিময়ের চুক্তি রয়েছে।’

ঢাকা জার্নাল, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০১৬।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.