হ‌ুমায়ূন আহমেদের ‘দেবী’ নকল করে ছবি নির্মাণ: আইনি লড়াইয়ে কলকাতা যাচ্ছেন শাওন

আগস্ট ৩০, ২০১৬

saonঢাকা জার্নাল:নন্দিত কথা সাহিত্যিক হ‌ুমায়ূন  আহমেদের জনপ্রিয় উপন্যাস ‘দেবী’র কাহিনি হুবহু নকল করে ‘ইএসপি, একটি রহস্য গল্প’ শীর্ষক একটি চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে ভারতে। ছবিটি পরিচালনা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্র নির্মাতা শেখর দাস। গত ২১ আগস্ট ভারতীয় চ্যানেল ‘জি বাংলা সিনেমায়’ ছবিটির ওয়ার্ল্ড টিভি প্রিমিয়ার হয়। এরপরই এদেশের দর্শকরা ছবিটিকে  ‘দেবী’ উপন্যাসের নকল বলে দাবি করেনে এ নিয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা কথা বলেছেন, হ‌ুমায়ূন আহমেদের  স্ত্রী, অভিনেত্রী ও নির্মাতা মেহের আফরোজ শাওন।

২১ আগস্ট ছবিটি প্রচারের পরপর আমি ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে ম্যাসেজ ও বন্ধুদের ফোন থেকে জানতে পারি। সেদিন আমি একটি অনুষ্ঠানে থাকায় ঘটনার পুরোটা বুঝতে পারিনি। পরে সেদিন গভীর রাতে উপন্যাস নকল করে ছবি তৈরির বিষয়টি নিশ্চিত হই।

আমি পুরো ছবিটি দেখেছি, প্রচারের পরদিনই। ইউটিউবে ছবিটি এখনও আসেনি। আমি টরেন্ট ডাউনলোড করে ছবিটি নামিয়ে দেখি। দেখে রীতিমতো হতভম্ব হয়ে পড়ি। একদম হুবহু নকল। কোথাও বলার সুযোগ নেই যে, কাহিনিটি কাকতালীয়। শুধু একটি জায়গা বদলানো হয়েছে, সেটি হচ্ছে ‘দেবী’ উপন্যাসে নীলু বাড়িওয়ালার মেয়ে থাকে, রানু ভাড়াটিয়ার স্ত্রী। এখানে রানু বাড়িওয়ালা আর নীলু পেয়িংগেস্ট হিসেবে থাকে। এটুকু বদল ধর্তব্যের মধ্যে কিছু না।

এটি কাকতালীয় হওয়ার কোনও কারণ নেই। একেবারে প্রতিটি ডায়লগ ও সিকোয়েন্স ‘দেবী’ উপন্যাস থেকে চুরি করা। প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি আচরণ। পরিচালক শেখর দাস বাংলাদেশের পাঠকদের বোকা ভেবে অপমান করেছেন। আমার বিশ্বাস তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে এটি করেছেন।

হ্যাঁ, তার ‘কালের রাখাল’ ও ‘নেকলেস’ ছবি আমি দেখেছি। দুটো ছবিই ভীষণ দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে এবং বহু পুরস্কার পেয়েছে। রবীন্দ্রনাথের গল্প অবলম্বলে তিনি ‘যোগাযোগ’ ছবি নির্মাণ করে বেশ গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সম্মান অর্জন করেছেন।

এখন তিনি যদি বলেন, এটা শিবাশিস রায়ের গল্প। বাংলাদেশের নন্দিত লেখক হ‌ুমায়ূন আহমেদের লেখা তিনি পড়েননি বা জানেন না, তাহলে আমি বিশ্বাস করব না।

আমি আইনি লড়াইয়ের কথাই ভাবছি। আমি নিজে বাংলাদেশ ফিল্ম প্রডিউসার অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউটরের সদস্য। এই সংগঠনের সভাপতি নাসিরউদ্দিন ঢিলু আমাকে কলকাতার একটি সংগঠনের কথা বলেছেন, যারা কপিরাইট আইন নিয়ে কাজ করে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আইনি ব্যবস্থায় যেতে বলেছেন তিনি।

আমি কলকাতা বইমেলার জন্য পূর্বনির্ধারিত শিডিউল অনুযায়ী কলকাতায় যাচ্ছি। এরমধ্যে এই ঘটনা এসে পড়ায় একসঙ্গেই দুটো কাজ করব। এটি অধিক গুরুত্ব দিয়ে করব। হ‌ুমায়ূন  আহমেদের পরিবারের সদস্য হিসেবে শুধু নয়, তার একজন ভক্ত ও একজন সাধারণ পাঠকের দৃষ্টিকোণ থেকেই আমি এই লড়াইয়ে নামছি। পরিবারের সদস্য হিসেবে আমার আলদা দায় তো রয়েছেই।

আমি এই মুহূর্তে নুহাশপল্লীতে আছি, ঈদ নাটকের শ্যুটিং নিয়ে। আজ রাতেই ঢাকা ফিরব। কাল সারাদিন আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে কিভাবে কাজ করতে পারি, সে প্রসঙ্গে জানব। এছাড়া আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করব। ৩১ তারিখ আমি কলকাতায় রওনা হব। বলিউড সিনেমা ‘মার্ডার’এ বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড দল মাইলসের গান নকল হওয়ার পর একজন বাংলাদেশি আইনজীবীর সহায়তায় আইনি লড়াই চালিয়েছিল দলটি। আমি তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। সঙ্গত কারণেই তার নামটি এখন জানাচ্ছি না। তার থেকেই সহায়তা নেব। পাশাপাশি কলকাতার কপিরাইট ভিত্তিক সেই সংগঠনের সঙ্গে কথা বলব।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আন্দোলনগুলো খুব কাজে দেয়, তবে আমি এখনও কোনও ফেসবুক ইভেন্ট বা ভিন্ন কোনও উপায় নিয়ে ভাবছি না। বুঝতেও পারছি না এটি কতটুকু সহায়ক হবে এই লড়াইয়ে। তবে হ‌ুমায়ূন  আহমেদের অন্য কোনও ভক্ত যদি ইভেন্ট খোলে, তাতে আমার পূর্ণ সমর্থন থাকবে। আমার বিশ্বাস এদেশের হ‌ুমায়ূনভক্তরা আমার সঙ্গেই থাকবেন। শুধু হ‌ুমায়ূনভক্ত নন আমি মনে করি বাংলাদেশের মানুষ আমার পাশে থাকবেন। এটি যদি হ‌ুমায়ূন আহমেদের উপন্যাসের নকল না হয়ে অন্য কারও লেখাও হতো, তার বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ হতো, সে কাতারে একজন পাঠক হিসেবে আমি থাকতাম। আমার বিশ্বাস সবাই এই লড়াইয়ে আমার পাশে থাকবেন।

আমি তো জানি না প্রচলিত আইনে কী ধরনের শাস্তি রয়েছে কপিরাইট আইন ভঙ্গের জন্য। তবে আমি চাই সর্বোচ্চ শাস্তি হোক। পরিচালককে ক্ষমা চাইতে হবে। আমি ছবিটি ব্যান হোক এই দাবি করব। আসলে অন্যায়ের কোনও দেশ নেই। বাংলদেশের চলচ্চিত্র নির্মাতা যে অন্যায় করেছেন, ভারতও তাই করেছেন শেখর দাস। তাই শাস্তিটিও যথাযথ হোক।

সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে এই নকলের বিরুদ্ধে একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠুক এমন প্রত্যাশা করছি।সৌজন্যে: বাংলা ট্রিবিউন

ঢাকা জার্নাল, আগষ্ট ৩০, ২০১৬।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.