মঙ্গলবার মীর কাসেমের রিভিউয়ের রায়

আগস্ট ২৯, ২০১৬

Mir-kashem-ali-ঢাকা জার্নাল: একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশনের চেয়ারম্যান মীর কাসেম আলীর রিভিউয়ের রায় ঘোষণা হবে মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট)। সোমবার (২৯ আগস্ট) বিকেলে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মঙ্গলবারের (৩০ আগস্ট) কার্যতালিকার শীর্ষে রয়েছে মামলাটি। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ রিভিউয়ের রায় ঘোষণা করবেন।

এর আগে আপিলে দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে মীর কাসেমের করা আবেদনের ওপর রবিবার (২৮ আগস্ট) উভয়পক্ষের শুনানি শেষ হয়। ওইদিনই ৩০ আগস্ট মামলাটির রায়ের দিন নির্ধারণ করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

আসামীপক্ষে রিভিউ শুনানিতে অংশ নেন মীর কাসেমের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। শুনানিতে মীর কাসেমের ফাঁসির দণ্ড পুনর্বিবেচনা চান তিনি। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে অংশ নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার আর্জি জানান।

মীর কাসেম আলীর মামলাটি গত ২৫ জুলাই রিভিউ শুনানির জন্য উঠেছিল। ওই দিন তার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন দুই মাস সময়ের জন্য আবেদন করলে আদালত এক মাস সময় মঞ্জুর করে ২৪ আগস্ট শুনানির দিন নির্ধারণ করেন।

সেদিন মীর কাসেমের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন পুনরায় সময় আবেদন করলে তা নাকচ করে দেন আদালত। ওইদিন রিভিউ আবেদনের ওপর প্রথম দিনের মতো শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। কিছুক্ষণ শুনানির পর ২৮ আগস্ট পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করে আদালত। সে অনুযায়ী রবিবার (২৮ আগস্ট) রিভিউ আবেদনটি আবার শুনানির জন্য উঠে। আর সেদিনই উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত ৩০ আগস্ট রায়ের দিন নির্ধারণ করেন।

গত ১৯ জুন মীর কাসেম আলী আপিলে মৃত্যুদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেন। ৮৬ পৃষ্ঠার আবেদনে ১৪টি যুক্তি দেখিয়ে ফাঁসির দণ্ড থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন তিনি। ওই আবেদনের ওপর শুনানির দিন ধার্য করতে ২১ জুন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী আবেদনের ওপর শুনানির জন্য ২৫ জুলাই দিন ধার্য করে তা পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন।

একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০১২ সালের ১৭ জুন রাজধানীর মতিঝিলে তার মালিকানাধীন দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকার কার্যালয় থেকে গ্রেফতার করা হয় জামায়াতের এই ব্যবসায়ী নেতাকে। পরের বছর ৫ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার। ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর ট্রাইব্যুনালের রায়ে মীর কাসেম আলীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

সেই রায়ের বিরুদ্ধে মীর কাসেম সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ আপিল করেন। গত ৮ মার্চ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ ট্রাইব্যুনালে মীর কাসেম আলীকে দেওয়া মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। তবে ট্রাইব্যুনাল দু’টি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দিলেও আপিল বিভাগ একটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন।

মীর কাসেমের বিরুদ্ধে আনীত ১৪টি অভিযোগের মধ্যে তার আপিল আংশিক মঞ্জুর করে ৪, ৬ ও ১২ নম্বর অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হয়েছে। আর ২, ৩, ৭, ৯, ১০, ১১ ও ১৪ নম্বর অভিযোগে আপিল নাকচ করে ট্রাইব্যুনালের রায়ই বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।

এরমধ্যে ১২ নম্বর অভিযোগ থেকে এই জামায়াত নেতা মৃত্যুদণ্ড থেকে অব্যাহতি পেলেও ১১ নম্বর অভিযোগ সর্বোচ্চ সাজাই বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। ৬ জুন এই আপিলের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।

ট্রাইব্যুনাল থেকে লাল কাপড়ে মোড়ানো মৃত্যু পরোয়ানাসহ কারাগারে পাঠায় ট্রাইব্যুনাল। সেই মৃত্যু পরোয়ানা মীর কাসেম আলীকে পড়ে শোনায় কারা কর্তৃপক্ষ।

আইন অনুযায়ী, রায় প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে তা পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করার সুযোগ ছিল মীর কাসেমের সামনে। সেই অনুযায়ী ১৯ জুন তিনি রিভিউ আবেদন করেন। রিভিউতে তার আবেদন খারিজ হলে আর কোনো আইনি প্রতিকার তার থাকবে না।

সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করতে পারবেন। সেই আবেদন গৃহীত না হলে সরকারের নির্বাহী আদেশে কারা কর্তৃপক্ষ দণ্ড কার্যকর করবে।

মীর কাসেম আলী ষষ্ঠ ব্যক্তি যিনি মানবতাবিরোধী অপরাধে আপিলেও চূড়ান্তভাবে মৃত্যুদণ্ড পেয়েছেন। এর আগে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লা এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।

ঢাকা জার্নাল, আগষ্ট ২৯, ২০১৬।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.