ভবদহ এলাকাকে ‘দুর্গত এলাকা’ ঘোষণার দাবি

আগস্ট ১৯, ২০১৬

jassoreঢাকা জার্নাল : যশোরের ভবদহ স্লুইচ গেট দিয়ে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে জেলার তিন উপজেলার শত শত গ্রাম। স্লুইচ গেট উচ্ছেদ করে জলবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে মানুষ আবারো আন্দোলনে রাজপথে নেমেছেন।

জলবদ্ধ এলাকার মানুষ সমস্যার স্থায়ী সমাধান চেয়ে সভা-সমাবেশ করছেন। তারা ভবদহ এলাকে ‘দুর্গত এলাকা’ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন তারা।

এসব সভা-সমাবেশ ও স্মারকলিপিতে তারা দ্রুত জলাবদ্ধতা নিরসন, ভবদহ এলাকাকে ‘দুর্গত এলাকা’ ঘোষণা করে পর্যাপ্ত ত্রাণ সরবরাহ এবং ভবদহ স্লুইচগেট উচ্ছেদ করে সব নদ-নদীতে আন্তঃসংযোগ পুনঃস্থাপনের দাবি জানিয়েছেন।

ভবদহ জলাবদ্ধতা নিরসন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম সরদার জানান, অতিবৃষ্টিতে ভবদহ স্লুইচ গেট দিয়ে পানি পার না হতে পারায় অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুরের বিশাল এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। দীর্ঘ দিন এলাকার জনগণের দাবিকে উপক্ষো করে ওয়াপদাসহ স্বার্থান্বেষী মহল ভবদহের ২১ ও ৯ কপাটের গেটগুলো বন্ধ করে দিয়েছেন। তারা পরিকল্পিতভাবে শ্রীনদী ভরাট করেছেন। জলাবদ্ধতার জন্য এখন তারা বিল কপালিয়ায় টিআরএম প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়াকে দায়ী করছেন।

তিনি বলেন, ‘প্রকৃত সমস্যা সৃষ্টিকারী ওয়াপদাকে আড়াল করে সমস্যার দায় অন্য কারো ওপর চাপানো হচ্ছে। তারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার পায়তারা করছেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে নিচু বিল চিহ্নিত করে একইসঙ্গে একাধিক বিলে অবাধ জোয়ার-ভাটা সৃষ্টির ব্যবস্থা করতে হবে। এতে করে এলাকার নদ-নদীগুলোর আন্তঃসংযোগ ও নদীর সঙ্গে খাল-বিলের সংযোগ পুনঃস্থাপন হলে ভবদহের সমস্যা সমাধান হবে। তা ছাড়া ভবদহের দুঃখ ঘোচানো সম্ভব হবে না।’

কৃষক সংগ্রাম সমিতি যশোর জেলা শাখার যুগ্ম সম্পাদক কামরুল হক লিকু বলেন, ‘ভবদহ এলাকায় ব্যাপকভাবে মাছের চাষের ঘের গড়ে উঠলেও পানি নামার কোনো ব্যবস্থা সেখানে রাখা হয়নি।

এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে যশোর কালেক্টরেটে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে জলাবদ্ধ এলাকার মানুষ মানববন্ধন করে।

তারা ভবদহ এলাকার পানি সরিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানান। একইসঙ্গে আমডাঙ্গা খাল সংস্কার করে এবং  বিল কপালিয়ায় টিআরএম প্রকল্প চালুর মাধ্যমে পানি নিষ্কাশনের দাবি জানান।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির উপদেষ্টা ইকবাল কবীর জাহিদ, ইলাহদাদ খান, জিল্লুর রহমান ভিটু, গাজী আব্দুল হামিদ ও অন্যরা।

বুধবার বিকেলে জেলার অভয়নগর উপজেলার ভবদহ এলাকার মশিহাটি বাজারে কৃষক সংগ্রাম সমিতি এক সমাবেশ করে। সমাবেশ থেকে ভবদহের ২১ ও ৯ কপাটের গেটের মধ্যবর্তী মাটির বাঁধ উচ্ছেদ করে নিচু বিল চিহ্নিত করা এবং একাধিক বিলে অবাধ জোয়ার-ভাটা সৃষ্টির ব্যবস্থা করার দাবি জানানো হয়।

মঙ্গলবার অভয়নগর উপজেলা শহরের নওয়াপাড়া বাজারের নূরবাগ রেলগেটে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি এক সমাবেশ করে।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, বিগত দুই বছর বিল কপালিয়ায় টিআরএম চালু করতে না পারায় পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ শ্রীনদী ভরাট হয়ে গেছে। এ অবস্থায় বর্ষায় ভবদহ এলাকার গ্রামের পর গ্রামে পানি উঠেছে। ডুবে গেছে ৪০ হাজার মাছের ঘের। হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল এখন পানির নিচে। হাজারো বাড়ি প্লাবিত হওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।

একই দিন বিকেলে নওয়াপাড়া ইনস্টিটিউট অফিস কক্ষে এলাকার চেয়ারম্যান ও সুধীজনদের সমন্বয়ে জলাবদ্ধতাবিষয়ক সভা হয়। সভায় অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক বাবুলের সভাপতিত্বে আশু পানি নিষ্কাশনের দাবিতে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।

দাবি আদায়ের লক্ষ্যে শনিবার বেলা ১১টায় প্রেসক্লাব, যশোরে সংবাদ সম্মেলন, রোববার সকাল ১০টায় অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি নেওয়া হয়।

এদিকে বৃহস্পতিবার যশোরের জেলা প্রশাসক ড. হুমায়ূন কবীর বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে ড্রেজার মেশিন দিয়ে নদী খননের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছেন।

ঢাকা জার্নাল, আগস্ট ১৯, ২০১৬।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.