স্থায়ী কমিটি নিয়ে চাপে খালেদা

আগস্ট ১৮, ২০১৬

Khaledaঢাকা জার্নাল : দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির পদ বাড়ানোর দাবিতে প্রচণ্ড চাপে আছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

স্থায়ী কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতাকে স্থান করে দিতে এবং কট্টরপন্থী একটি অংশের নিরঙ্কুশ আধিপত্য কমিয়ে অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য রক্ষায় দলের ভেতর থেকেই তার ওপর এ চাপ আসছে।

স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী তিন সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, এমকে আনোয়ার ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া কুমিল্লার সন্তান। একই জেলার এ তিন নেতা স্থায়ী কমিটিতে থাকলেও ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলা মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জের কেউ ঠাঁই পাননি। ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ এ তিন জেলার একমাত্র প্রতিনিধি শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন।

কাউন্সিলের আগে থেকেই স্থায়ী কমিটির সম্ভাব্য সদস্য হিসেবে প্রবীণ এই রাজনীতিকের নাম জোরে-সোরে উচ্চারিত হচ্ছিল। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, অভিজ্ঞ রাজনীতিক ও পার্লামেন্টারিয়ান, সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী, স্বাধীন বাংলাদেশে সরকারি দলের প্রথম চিফ হুইপ শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনকে স্থায়ী কমিটিতে না নেওয়ায় জেলাগুলোর নেতাকর্মীরা হতাশ।

কমিটি ঘোষণার পর থেকেই ওই তিন জেলার নেতারা ভিড় করছেন শাহ মোয়াজ্জেমের বাসায়। তারা খালেদা জিয়ার কার্যালয় ও নয়াপল্টনে বিক্ষোভেরও চিন্তা-ভাবনা করছেন।

কিন্তু শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের শেষ কথা- পদ যদি তার ভালো না লাগে, তবে ছেড়ে দেবেন। তবুও পদের জন্য অনুসারী নেতাকর্মীদের বিক্ষোভ করতে দেবেন না।

বিএনপিতে আলাদা বলয় তৈরি করেছেন মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও রুহুল কবির রিজভী। এ বলয়টি দলের ‘কট্টরপন্থী’ বলয় বলে পরিচিতি।

এবারের কমিটিতে আগের পদ (স্থায়ী কমিটির সদস্য) ধরে রেখেছেন আব্বাস-গয়েশ্বর। সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদটিসহ দফতরের দায়িত্বও ফের বর্তেছে রিজভীর ওপরে।

মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস ও ছোট ভাই মির্জা খোকন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের মেয়ে, ছেলের বউ ও বিয়াইও ঢুকে পড়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে।

আব্বাস-গয়েশ্বরের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ঢাকার সাবেক মেয়র, মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা পদোন্নতি পাননি। তার আত্মীয়-স্বজন, অনুসারীরাও ঢুকতে পারেননি কোনো পদে।

সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন, ঢাকার রাজনীতিতে সাদেক হোসেন খোকা বিএনপির জন্য বড় ফ্যাক্টর। এই খোকাই আওয়ামী লীগ প্রধানের সঙ্গে নির্বাচন করে ঢাকার একটি আসনে জয়লাভ করেছিলেন। তাকে কোণঠাসা করে রাখলে ঢাকার রাজনীতিতে খেই হারাবে বিএনপি। সুতরাং স্থায়ী কমিটির সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে হলেও খোকাকে নিতে হবে এই এলিট ফোরামে।

বিশ্লেষকরা বলছেন- স্থায়ী কমিটিতে নিজের সাবেক পিএস সালাহউদ্দিন আহমেদকে ঠাঁই দিয়ে বহু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছেন খালেদা জিয়া। অন্যদিকে আব্দুল্লাহ আল নোমানকে বঞ্চিত করে চট্টগ্রামে বিএনপির রাজনীতিতে বিভেদ তৈরি করেছেন তিনি।

নোমানের জুনিয়ররা ৬ বছর আগেই স্থায়ী কমিটিতে ঢুকেছেন। এবারের কমিটিতেও তারা আছেন। অথচ বিগত আন্দোলনে রাজপথ দাঁপিয়ে বেড়ানো নোমানকে এবারও স্থায়ী কমিটিতে নেননি খালেদা জিয়া।

সূত্রমতে, পরীক্ষিত এই নেতাকে স্থায়ী কমিটিতে নেওয়ার ব্যাপারেও প্রচণ্ড চাপ আছে বিএনপির হাইকমান্ডের ওপরে। চট্টগ্রামের রাজনীতিতে অত্যন্ত জনপ্রিয় নোমানকে স্থায়ী কমিটিতে ঠাঁই দিতে এর আকার বড় করতে হলেও খালেদা জিয়াকে সেটি করতে হবে।

এছাড়া নারী কোটা পূরণের জন্য সেলিমা রহমানকে স্থায়ী কমিটিতে নেওয়া আবশ্যক বলে মনে করছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা।

কিন্তু ১৯ সদস্য বিশিষ্ট স্থায়ী কমিটিতে এই মুহূর্তে শূন্য পদের সংখ্যা দুই। অথচ কম করে হলেও আরো চারজন নেতাকে ঠাঁই দিতে হবে স্থায়ী কমিটিতে। এক্ষেত্রে ১৯ থেকে বাড়িয়ে ২১ সদস্য বিশিষ্ট করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই বিএনপির চেয়ারপারসনের হাতে।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, স্থায়ী কমিটিতে পদের সংখ্যা বাড়ানোর ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে এ ব্যাপারে প্রচণ্ড চাপ আছে।

ঢাকা জার্নাল, আগস্ট ১৮, ২০১৬।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.