বঙ্গবন্ধুর ৬ খুনিকে ফেরত আনায় অগ্রগতি নেই

আগস্ট ১৫, ২০১৬

bangabandhu+Killerঢাকা জার্নাল : জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার দায়ে মৃত‌্যুদণ্ড নিয়ে বিদেশি পালিয়ে থাকা ছয়জনকে ফেরত আনার আলোচনা চললেও তাতে কোনো অগ্রগতি নেই।

ছয় বছর আগে পাঁচজনের দণ্ড কার্যকরের পর থেকে বাংলাদেশ পুলিশ পলাতক ছয় আসামির বিষয়ে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিস জারি করে রেখেছে। তাদের মধ্যে পাঁচজনের অবস্থান সম্পর্কে ‘প্রায় নিশ্চিত’ হয়েছে পুলিশ।

বঙ্গবন্ধুর হত‌্যার ৪১তম বার্ষিকীর আগের দিন রোববার এই খুনিদের ফেরতে উদ‌্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ইন্টারপোলের বাংলাদেশ শাখা ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) থেকে অগ্রগতির কোনো তথ‌্য মেলেনি।

এনসিবির দায়িত্বে থাকা সহকারী মহাপুলিশ পরিদর্শক রফিকুল গনি বলেন, “এ মুহূর্তে নতুন কোনো অগ্রগতি নেই।”

ছয়জনের মধ‌্যে পাঁচজনের অবস্থান ‘প্রায় নিশ্চিত’ হওয়া গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “রিসালদার মোসলেমউদ্দিনের অবস্থান এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।”

অন‌্য পাঁচজন হলেন- আব্দুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, এম রাশেদ চৌধুরী, এ এইচ এম বি নূর চৌধুরী ও আব্দুল মাজেদ। তারা সবাই সাবেক সেনা কর্মকর্তা।

গত বছর সেপ্টেম্বরে বঙ্গবন্ধুকন‌্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে জানিয়েছিলেন, রশিদ লিবিয়াতে থেকে পাকিস্তানে অবস্থান নিয়েছে, ডালিমও রয়েছেন পাকিস্তানে। অন্যরা যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় রয়েছেন।

sheakh Mujib
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুবিবুর রহমান

কানাডার টরন্টোতে থাকা নূর চৌধুরীকে ফাঁসিতে ঝোলাতে দেশটি ফেরত পাঠাবে না বলে ইতোমধ‌্যে জানিয়েছে। লস এঞ্জেলেসে থাকা রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাঠাতেও যুক্তরাষ্ট্র অনীহ।

আব্দুল মাজেদ সেনেগালে রয়েছেন বলে তথ‌্য রয়েছে পুলিশের কাছে। তার বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান।

২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১২ জনের মধ্যে পাঁচজন সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মুহিউদ্দিন আহমদ (আর্টিলারি), বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিনের (ল্যান্সার) ফাঁসি কার্যকর হয়।

পলাতক থাকা আজিজ পাশা ২০০১ সালের মাঝামাঝি জিম্বাবুয়েতে মারা যান বলে পুলিশ জানিয়েছে।

পাঁচজনের দণ্ড কার্যকরের পর সরকারের মন্ত্রীরা অসংখ‌্য বার বলেছেন যে পলাতক খুনিদের ফিরিয়ে এনে দণ্ড কার্যকর করা হবে। তবে তার জন‌্য জোর তৎপরতা কখনও দেখা যায়নি।

পুলিশ কর্মকর্তা রফিকুল গণিও একই সুরে বলেন, “পলাতকদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে চেষ্টা চলছে। এ ব্যাপারে ইন্টারপোল এবং কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা চলছে।”

এই চেষ্টায় কবে নাগাদ সফলত আসতে পারে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।”

নূর চৌধুরীকে ফেরতে দেন-দরবার চালানো হলেও কানাডা সরাসরিজানিয়ে দিয়েছে, মৃত‌্যুদণ্ড কার্যকরের শঙ্কা থাকলে কাউকে তারাফেরত দেয় না।

যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার অবস্থানের সমালোচনা করে শেখ হাসিনাসংসদে বলেছিলেন, “সভ্য দেশ হয়েও তারা কেন খুনিদের আশ্রয়দেয়, জানা নেই।”

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক রোববার (১৪ আগস্ট) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “কানাডারআইন অনুসারে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে জটিলতা বেশি। তারা আমাদের সাজা কমানোর বিষয়ে বলেছিল। কিন্তু সর্বোচ্চ আদালতের রায় কমানো যায় না বলে আমরা কানাডাকে জানিয়েছি। এখন তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।”

Bangabandhu
বাঙালি জাতির জনক

যুক্তরাষ্ট্র থেকে রাশেদ চৌধুরীকে ফেরতের বিষয়ে আলোচনা অব‌্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।

“বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে আদালতের রায় কার্যকর না করা পর্যন্ত এ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে,” বলেন আনিসুল হক, যিনি বঙ্গবন্ধু হত‌্যামামলার প্রধান কৌঁসুলির দায়িত্বে ছিলেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার চার বছরের মধ‌্যে ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত‌্যা করে একদল সেনা সদস‌্য। তারপর বিচারের পথও রুদ্ধ করে দেওয়া হয়।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর বিচারের পথ খোলে; মামলার পর বিচার শুরু হলেও বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় যাওয়ার পর ফের শ্লথ হয়ে যায় মামলার গতি।

আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার পর মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করে দণ্ডিত পাঁচজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

হত‌্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচারে মৃত‌্যুদণ্ড হলেও জাতির জনকের হত‌্যার ষড়যন্ত্রকারীরা বিচারের আওতায় আসেনি বলে আওয়ামী লীগ নেতারাই বলে আসছেন। এর পেছনের আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রও অনুদ্ঘাটিত বলে তারা বলছেন।

ঢাকা জার্নাল, আগস্ট ১৫, ২০১৬।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.