জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে সংস্কৃতি শিক্ষা ও চর্চা জোরদার হচ্ছে

আগস্ট ১০, ২০১৬

IMG_20160809_151236ঢাকা জার্নাল: ‘জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে সাংস্কৃতিক জাগরণ’ শীর্ষক যৌথ বৈঠকে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর জানিয়েছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং সাংস্কৃতিক কর্মীদের সহায়তায় সংস্কৃতি চর্চা তৃণমূলে পৌঁছে দেওয়া হবে।

মঙ্গলবার (০৯ আগস্ট) বিকেলে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান এবং বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের নিয়ে বৈঠক করেন তিনি।

সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে জঙ্গিবাদ রুখতে দেশের স্কুল-কলেজসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংস্কৃতি চর্চা জোরদারে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নিয়ে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিক্ষাবিদসহ বিশিষ্টজনদের মাধ্যমে সমন্বিত এ উদ্যোগ গ্রহণ করবে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, ‘জঙ্গি সন্ত্রাসীদের ধারাবাহিক কর্মকাণ্ডে আমরা উদ্বিগ্ন। আর বিলম্ব করা, উদাসীনতা দেখানোর সুযোগ নেই। তৃণমূল পর্যন্ত সংস্কৃতি চর্চা নিয়ে যেতে আমরা কর্মসূচি নেবো। জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিল্পকলা একাডেমি, গণগ্রন্থাগার এবং সাংস্কৃতিক কর্মীদের সহায়তা নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগে এসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবো’।

‘কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে আমরা নবীণ প্রজন্মকে প্রকৃত বাঙালি এবং মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবো’।

ছায়ানট, উদীচী হামলাসহ পুরোহিত ও ধর্মযাজক হত্যা, গুলশান, শোলাকিয়া ও কল্যাণপুরের সর্বশেষ হামলাকে ধারাবাহিক হামলা হিসেবে তুলে ধরেন সংস্কৃতিমন্ত্রী।

আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘সংস্কৃতি মানে শুধু গান-বাজনা নয়, শিক্ষার্থীদের মধ্যে বোধ তৈরির লক্ষ্য নিয়ে কর্মসূচি নেওয়া হবে। শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নিয়ে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে চেতনা জাগাতে চাই, জঙ্গিবাদ প্রশ্রয় যেনো না পায়’।

গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশ্যে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘আমরা এখন একটা সংকটের মধ্যে আছি। জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় এখন সারাদেশেই আন্দোলন চলছে। আমরা সমন্বিত কার্যক্রম চালু করবো। সংস্কৃতির শিক্ষা ছাড়া শিক্ষা অসম্পূর্ণ। সংস্কৃতি শিক্ষার অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই প্রাইভেট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল, কলেজ, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং মাদ্রাসায় সংস্কৃতিক চর্চা জোরদার করা হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অভিভাবক, স্থানীয় ব্যক্তি, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের নিয়ে সভা করবে। সারাদেশের সব কাজের সমন্বয় করা হবে’।

শিক্ষামন্ত্রী জানান, ‘জঙ্গিবাদ না ঘটলেও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতো। আমরা দ্রুত সাংস্কৃতিক কর্মর্কাণ্ডের মাধ্যমে জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করতে চাই’।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘জঙ্গিবাদের যেনো আর উত্থান না ঘটতে পারে। জাতি হিসেবে আমাদের সেই দায়িত্ব রয়েছে। দেশে ৬৫ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিক শিক্ষা দিতে চাই। সব শিক্ষার মধ্যেই কিছু গলদ আছে। বিদ্যালয়ের পাশাপাশি পরিবারকেও ভূমিকা রাখতে হবে’।

বৈঠকে জানানো হয়, সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে জঙ্গিবাদ রুখতে স্কুল-কলেজের পাঠ্যসূচিতে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম যুক্ত করা ও বাধ্যতামূলকভাবে পরীক্ষায় নম্বরের ব্যবস্থাসহ স্বেচ্ছাসেবক তৈরি করা হবে।

সাংস্কৃতিক জাগরণ সৃষ্টি করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশাত্ববোধ সৃষ্টির লক্ষ্যে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

শিক্ষা ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে পাঠ্যসূচিতে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা হবে। প্রতিটি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলকভাবে সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা হবে। প্রয়োজনে এ বিষয়ে নম্বরের ব্যবস্থা রাখা হতে পারে।
মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে সোনার বাংলা গঠনের লক্ষ্যে যুবকদের স্বেচ্ছাশ্রমে উদ্বুদ্ধ করা হবে। এক্ষেত্রে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় তরুণদের স্বেচ্ছাশ্রমে উৎসাহিত করতে প্রথাগত বা গতানুগতিক প্রক্রিয়ার বাইরে সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রন্থাগারিকদের দিয়ে সংস্কৃতি চর্চার পরিসর বৃদ্ধি করতে চায় মন্ত্রণালয়। এজন্য জেলায় জেলায় শিল্পকলা একাডেমির প্রশিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং সরকারি গণগ্রন্থাগারের মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সংস্কৃতি চর্চার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে।

জেলা-উপজেলার সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকেও সমন্বয় করা হবে। শিক্ষাবিদ, কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক, আবৃত্তিকারদের নিয়েও কাজ করবে সরকার।

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিক্ষাবিদসহ বিশিষ্টজনদের বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। আমন্ত্রিতদের মধ্যে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, বরেণ্য নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আবুল মোমেন, সৈয়দ দুলাল, তৌফিক হাসান ময়না, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল আকতারুজ্জামান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গোলাম কুদ্দুস, হাসান আরিফ, বিশ্বজিৎ রায়, যাত্রশিল্প উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দে, চিত্রনায়ক ফারুক আহমেদ, অভিনেতা ড. ইনামুল হক, ড. মুহাম্মদ সামাদ, মনিরুজ্জামান এবং মফিদুল হক উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনা করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার। সেখানে উঠে আসে আসে সংসদে আইন পাস করে কোনো ধর্মীয় বা সামাজিক ভাষণে ভিন্ন ধর্ম বা সম্প্রদায়ের মানুষের বিরুদ্ধে কটাক্ষপূর্ণ বা হেয় করে কোনো বক্তব্য দেওয়া যাবে না।

সকল স্কুল মাদ্রাসায় অ্যাসেম্বলির সময় জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার পর পাঁচ মিনিট কোনো বাঙালি বা বিদেশি মনীষীর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি বা তার বাণী ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে তুলে ধরা, স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতি বছর ০১ থেকে ০৭ ফেব্রুয়ারি সাংস্কৃতিক সপ্তাহের আয়োজন করা।

সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক সপ্তাহ পালন বাধ্যতামূলক করা, কোনো প্রতিষ্ঠান ব্যর্থ হলে তাদের অনুদান বা সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া, সকল ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পরিষদ দফতরে পাঠাগার স্থাপন, পাঠক্রমে সংস্কৃতি পরিচয় অন্তর্ভুক্ত করা, স্কুল-কলেজে সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের জন্য মহড়ার সুযোগ এবং বিজ্ঞান ও বিতর্ক ক্লাস, দেশব্যাপী শিশু-সংগঠনের প্রসার, অনুদানপ্রাপ্ত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর অন্তত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করা।

ঢাকা মহানগরীতে সংস্কৃতি চর্চা বৃদ্ধিতে শিল্পকলা একাডেমির আঞ্চলিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, রবীন্দ্র সরোবরকে খাবার স্টলমুক্ত করা, ছবির হাট চালু, মিরপুর, উত্তরা, যাত্রাবাড়ি, মোহাম্মদপুর ও লালবাগ ইত্যাদি জায়গায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের স্থান নির্ধারণ।

এ বছরই জঙ্গিবাদবিরোধী আন্তর্জাতিক সম্মেলন ও সর্বধর্ম সম্মেলনের আয়োজন ছাড়াও ১ জুলাইকে সম্প্রীতি দিবস ঘোষণা ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বৃদ্ধি।

দীর্ঘ বৈঠকের পর সন্ধ্যায় মন্ত্রণালয়ের তথ্য কর্মকর্তা মোল্লা আহমদ কুতুবুদ-দ্বীন জানান, কোন বিষয় কখন করা হবে- সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত পরে নেওয়া হবে।

ঢাকা জার্নাল, আগস্ট ০৯, ২০১৬

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.