পরিবারের দাবি রুমা মানসিক ভারসাম্যহীন

জুলাই ২২, ২০১৬

Gulshan Ladyঢাকা জার্নাল : রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে নরসিংদীর শিবপুরের চরখোপি গ্রাম থেকে রুমা আক্তার (৩৫) নামের এক নারীকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

হলি আর্টিজানের বাইরের সিসিটিভি ফুটেজে চিহ্নিত করা সন্দেহভাজন চারজনের মধ্যে একজন নারীও ছিল। রুমা আক্তারই সেই নারী কিনা সে ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে এখনো পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।

এদিকে রুমার পরিবার জানিয়েছে, গুলশান হামলার সময় রুমা ঘটনাস্থলের আশপাশে ছিলেন। তবে পরিবারের দাবি, রুমা মানসিক ভারসাম্যহীন।

জানা গেছে, ঢাকা থেকে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল শিবপুরের সাধারচরে গিয়ে একটি নম্বরে ফোন দেয়। ফোনটি রিসিভ করেন রুমার বোনের ছেলে স্থানীয় চরসিন্ধুর বাজারের চা বিক্রেতা সোহেল। এ সময় স্থানীয়দের সহযোগিতায় ফোনে সোহেলকে ডেকে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে উপস্থিত গোয়েন্দারা জিজ্ঞেস করেন, সে রুমা নামে কাউকে চেনে কি না। উত্তরে সে জানায়, রুমা সম্পর্কে তার খালা হয়।পরে তাকে সঙ্গে নিয়ে রুমার বাড়ি যায় ডিবি সদস্যরা। সেখান থেকে রুমাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়।

আটককৃত রুমা পলাশ উপজেলার চরসিন্ধুর ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন বুদু মিয়ার ছোট মেয়ে।

রুমা আক্তারের দুই বিয়ে হলেছিল। বর্তমানে তিনি স্বামী পরিত্যক্তা। শ্রাবণ খান নামে তার ১৫ বছরের একটি ছেলে আছে। তাকে বাবার কাছে রেখে তিনি ঢাকার বিভিন্ন বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ করেন। বাড্ডার নতুন বাজার এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকতেন তিনি।

গুলশানে জঙ্গি হামলার সময় তিনি হলি আর্টিজান বেকারির আশপাশ এলাকায় ছিলেন বলে স্বীকার করেছেন তার বোন সাবিনা।

সাবিনা আক্তার বলেন, ‘স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ির পর থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন রুমা। একাধিক বার তাকে ডাক্তার দেখানো হয়েছে, কিন্ত ভালো হয়নি। রুমা বিভিন্ন বাসায় বুয়ার কাজ করে। ৬ মাস আগে তিনি গৃহকর্মীর ভিসায় দুবাই যান। ভালো না লাগায় তিন মাস পর দেশে ফেরেন। পরে ঢাকার বাড্ডায় একটি বাসায় গৃহকর্মীর কাজ নেন।’

মানসিক ভারসাম্যহীন রুমা কখনো কখনো নিজের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও করেছে বলে জানান সাবিনা আক্তার। তিনি দাবি করেন, রুমা পাগল।

গুলশানের ঘটনায় গত ১৯ জুলাই র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) হলি আর্টিজানের বাইরের সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করে। ফুটেজে ঘটনার রাতে আর্টিজান বেকারির আশপাশে সন্দেহজনকভাবে চারজনকে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। যাদের একজন নারী। আটক করা রুমা আক্তারই ভিডিও ফুটেজের সেই নারী- বিষয়টি স্বীকার করলেও রুমার বড় বোন সাবিনা আক্তার দাবি করেন, রুমা জঙ্গি নয়। গুলশান হামলার রাতে ৭৯ নম্বর সড়ক দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। সে সময় গোলাগুলির শব্দ পেয়ে তিনি সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থানের পর বাড়ি ফেরেন।

এদিকে গুলশানের ঘটনায় নিজের মেয়ে গ্রেপ্তার হওয়ায় বিব্রত রুমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন বুদু মিয়া। তবে রুমা জঙ্গি হামলার ঘটনায় জড়িত না বলে তিনি মনে করেন। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে তিনি জানান, ঘটনার সঙ্গে যদি রুমা জড়িত থাকে এবং প্রকৃত অপরাধী হয় তবে তার যেকোনো শাস্তি মেনে নিব।

স্থানীয়রা জানায়, স্বামী-সংসার হারানোর পর থেকে রুমা অস্বাভাবিক আচরণ করেন। একাধিকবার আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছেন তিনি।

শিবপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইমাম হোসেন বলেন, ‘আটকের বিষয়টি শুনেছি, তবে বিস্তারিত কিছুই জানি না।’

উল্লেখ্য, গত ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে কয়েকজন বন্দুকধারী ঢুকে দেশি ও বিদেশি নাগরিকদের জিম্মি করে। এ ঘটনায় ১৭ বিদেশি, তিন বাংলাদেশি, ছয় সন্ত্রাসী ও দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ মোট ২৮ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন পুলিশ সদস্য।

ঢাকা জার্নাল, জুলাই ২২, ২০১৬।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.