হামলা হয় স্যারের কথায়!

জুলাই ১৫, ২০১৬

Sorifulঢাকা জার্নাল: তাকে জঙ্গিরা ডাকে ‘স্যার’ নামে। রাজধানীর গুলশান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া হামলার নেপথ্য কারিগর ওই একজন কথিত ‘স্যার’।

জঙ্গি প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে জেহাদী বয়ান, দু’হামলার পরিকল্পনা, সরঞ্জামাদি সরবরাহ থেকে শুরু করে সব রকমের খরচই বহন করতো ‘স্যার’ নামের ওই বিশেষ ব্যক্তি। তবে তার প্রকৃত নাম জানাতে পারেনি শোলাকিয়া হামলায় অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে আটক আত্বস্বীকৃত জঙ্গি শফিউল ওরফে শরিফুল ওরফে ডন।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এ জঙ্গি ময়মনসিংহ র‌্যাব-১৪’কে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য দিয়েছে।

র‌্যাবের দায়িত্বশীল একটি সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বর্বরোচিত ওই দু’জঙ্গি হামলার কুশীলব ওই স্যার ও আরো কয়েক জঙ্গিকে গ্রেফতারে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ তৎপর রয়েছে বলেও জানিয়েছে সূত্রটি।

র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে শফিউল জানিয়েছে, গুলশান ও শুলাকিয়ায় হামলাকারীরা তারই সতীর্থ। তারা সবাই একই গুরুর শিষ্য। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের কোন এক অজ্ঞাত স্থানে ওই স্যারের নিয়ন্ত্রণেই রমজানের দু’দিন আগে শফিউলসহ ৭ জঙ্গি প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে অংশ নিয়েছিলো। চোখ বেঁধে ও ওয়েল্ডিং’র দোকানের কর্মচারীদের ব্যবহৃত কালো চশমা পড়ে তাদের সেই অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় তাদের জেহাদী বয়ানও প্রদান করেন ওই কথিত ‘স্যার’।

একই সঙ্গে ৭জন প্রশিক্ষণ নিলেও গুলশান মিশনে তাদের ৫ জনকে দায়িত্ব দেয়া হয়। আর শফিউল ও আবীরকে সরাসরি গত ২ জুলাই (শনিবার) পাঠানো হয় কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায়। সেখানে আকাশ নামের তাদের এক সতীর্থ গুরুদয়াল কলেজের শিক্ষার্থী হিসেবে এক অবসরপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তার বাড়ি ভাড়া নেন।

এরপর তাদের সঙ্গে এসে যোগ দেন আরো কয়েকজন। শোলাকিয়া মিশনের ৩ দিন আগে গত ৪ জুলাই (সোমবার) শফিউল ও আবীরদের সঙ্গী হন ওই কথিত ‘স্যার।’ ঈদের আগের দিন ৬ জুলাই (বুধবার) শফিউল ও আবীর শোলাকিয়া মাঠে গিয়ে রেকী করেন, জিজ্ঞাসাবাদে জানান আটক এ দেশীয় জঙ্গি।

ঈদের দিন সকাল সাড়ে ৭টার দিকে শফিউল ও আবীরের হাতে শক্তিশালী হাত বোমা, চাপাতি, পিস্তল ও চাইনিজ কুড়াল তুলে দেয়া হয়। তাদের দু’জনকে অ্যাকশনে পাঠিয়ে তাদের সঙ্গেই ওই কথিত স্যারসহ ৩ জঙ্গি ভাড়া বাসা থেকে বেরিয়ে যান, জানিয়েছে দায়িত্বশীল ওই সূত্রটি।

জিজ্ঞাসাবাদে শরিফুল স্বীকার করেছে, শোলাকিয়া হামলার তাদের টার্গেট ছিল দু’টি। শোলাকিয়ার ইমাম ফরিদ উদ্দিন মাসুদ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা। স্যারের নির্দেশমতো মিশনে গিয়ে আবীর নিহত হলেও গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আটক হন শফিউল ওরফে শরিফুল।

তবে জঙ্গি প্রশিক্ষণের শুরু থেকে হামলার দিন পর্যন্ত ওই ৭জনের কাউকেই মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে দিতেন না ওই কথিত স্যার। এমন দাবি করেছে শফিউল ওরফে শরিফুল।

গুলশান ও শোলাকিয়া হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ও অর্থদাতা কারা এ সম্পর্কেও নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছে না আটক শফিউল। র‌্যাবের ধারণা, ওই স্যার ও অন্য জঙ্গিদের আটক করতে পারলেই বেরিয়ে আসবে পরিকল্পনাকারী ও অর্থদাতার নাম।

তবে শরিফুল কথিত ওই স্যারের সম্পর্কে নির্দিষ্ট করে কোন তথ্যও দিতে পারছেন না।

এসব বিষয়ে ময়মনসিংহ র‌্যাব-১৪’র কমান্ডিং অফিসার (সিও) লে: কর্ণেল মো: শরীফুল ইসলাম জানান, কোন রকম চাপ প্রয়োগ ছাড়াই আটকত জঙ্গি শফিউল ওরফে শরিফুল ওরফে ডনকে স্বাভাবিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার দেয়া তথ্যমতে ঘটনার কুশীলব ও অন্যান্য জঙ্গিদের গ্রেফতারে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

ঢাকা জার্নাল, জুলাই ১৫, ২০১৬

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.