`ওদের’ প্রকৃত বন্ধুই সুরাইয়া হেনা

জুন ২১, ২০১৬

Henaঢাকা জার্নাল: কণা, বিন্দু, বৈশাখী। এরাও এবার ঈদে নতুন জামা-জুতো চায়। কিন্তু কে দেবে এসব ঈদ উপহার? আপাতত সব আবদার তাদের একমাত্র বন্ধু সুরাইয়া হেনার কাছে। তবে কীভাবে এতো বন্ধুর মন রক্ষা করবেন হেনা।

লেখাপড়ারসহ সব খরচ দেন বাবা। চাকরি করে উপার্জনও হয় ১৬ হাজার টাকা। তার পরেও মাসের শেষে কোনো টাকাই থাকে না কাছে। অথচ ওদের সব আবদার যেনো তার কাছেই।

সোমবার (২০ জুন) সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) চত্বরে ঢাবি অধিনস্থ হোম ইকোনোমিক্স কলেজের আর্ট অ্যান্ড ক্রিয়েটিভ স্টাডিজ বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সু্রাইয়া হেনার কাছে নতুন জামা-জুতোর আবদার জানায় একদল ছিন্নমুল পথশিশু। ভাবনায় পড়েন হেনা।

Hena 2কনা, বিন্দু, বৈশাখী ছাড়াও দাবি নিয়ে হাজির হয় মিলি, জয়া, শাহীদা, শাহীনুর ও পুতুলী। সবার আবদার একটিই। ঈদে নতুন জামা ও জুতো চাই।এখানেই শেষ নয়, বেশ কয়দিন পরে দেখা, তাই ওদের সঙ্গে সময়ও কাটাতে হবে তাকে। নাছোড় এই শিশুরা এক পর্যায়ে আটকে দেয় সুরাইয়া হেনাকে।

বেশ কিছু সময় শিশুদের সঙ্গে কাটান সুরাইয়া হেনা। ওদের সঙ্গে ছবিও তোলেন। এক পর্য‍ায়ে ব্যাগের টাকাগুলো শিশুদের দিয়ে শূন্য হাতেই বাসার দিকে রওনা দেন তিনি।

টিএসসিতে ফুল বিক্রি করা কেরানীগঞ্জের গৃহবধূ সালমা বলেন, সবার মাইয়া যদি এমন হইতো, তাহলে আর কোনো শিশুর দু:খ থাকতো না। সবার ঘরেই যেনো এমন মাইয়া জন্মায়।

suraiaবাগেরহাট জেলার কচুয়া থানার ঝালোডাঙ্গা গ্রামের বাবা হেমায়েত হোসেন এবং মা লাকী বেগমের একমাত্র মেয়ে সুরাইয়া হেনা। বাবার চাকরির কারণে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রাথমিক ও হাইস্কুলে লেখাপড়ার সুযোগ হয় তার। রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় থাকার সময় ভর্তি সংকটের কারণে এনজি পরিচালিত দরিদ্র বাচ্চাদের স্কুলেও পড়তে হয় তাকে।

সেই সময় থেকে ছিন্নমুল পথশিশুদের সঙ্গে ভাব জমে তার। খিলগাঁও মডেল হাইস্কুল থেকে ২০১৩ সালে এসএসসি পাস করার পর বাবা-মায়ের সঙ্গে বাগেরহাট চলে যান হেনা। এরপর রাজধানীর ছিন্নমূল শিশু বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি দুই বছরেরও বেশি সময়।

২০১৫ সালে বাগেরহাটের বেলায়েত হোসেন ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে আবার রাজধানীতে ফিরে আসেন হেনা। গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের আর্ট অ্যান্ড ক্রিয়েটিভ স্টাডিজ বিভাগে অনার্সে ভর্তি হন। আর সেই থেকে শাহবাগ, টিএসসি এলাকার ছিন্নমূল পথ শিশুরাই ওর পরম বন্ধু হয়ে ওঠে।

ছিন্নমূল পথশিশুরা তার বন্ধু হলো কীভাবে জানতে চাইলে সুরাইয়া হেনা বলেন, গরিব বাচ্চাদের স্কুলে পড়ার সময় দেখেছি, ওদের কেউ আদর করে না। বড়লোকদের ছিমছাম বাচ্চাদের অনেকেই আদর করে, কোলেও নেয়। কিন্তু এসব বাচ্চাদের দিকে কেউ ফিরেও চায় না। এসব দেখে ওই শিশুদের জন্য আমার মায়া হতো। যদিও আমি ওই সময় শিশুই ছিলাম।

Suraia-2হেনা বলেন, খিলগাঁও তালতলায় অনেক শিশু ছিল যারা স্কুলেই যেতো না। আমি তাদের খোঁজ-খবর নিতাম। বাবার কাছ থেকে নিয়ে তাদের চকলেট বিস্কুট খাওয়ার টাকা দিতাম। এখন নানা-নানির বাসায় দক্ষিণ বনশ্রীতে থাকি। চাকরি ও ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে টিএসসি এল‍াকায় পথশিশুদের সঙ্গে সময় কাটাই। ওরা আমাকে খুব ভালবাসে। আমাকে পেলেই ঘীরে ধরে। ওদের বিভিন্ন বায়না মেটাবার চেষ্টা করি। ওদের নিয়ে একসঙ্গে না খেলে ওরা ছাড়ে না। তাই মাঝে মধ্যে ওদের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়াও করি।
লেখাপড়ার পাশাপাশি আমি একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করি। বেতনের টাকার বড় অংশ খরচ করি। বেতনের টাকার বড় অংশ পথশিশুদের জন্য খরচ করি। এবার ওরা ঈদে নতুন জামা-জুতো চেয়েছে।

হেনার বন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অনামিকা সরকার বলেন, ও একটু পাগলাটে ধরনের। কিন্তু মন খুব ভাল। নিজের লেখাপড়ার দিকে যতনা খেয়াল, তার চেয়ে বেশি দরদ পথশিশুদের প্রতি। পথশিশুদের সঙ্গে যখন থাকে তখন আমাদের পাত্তাই দেয়না। আমরা সবাই ওকে খুব ভালবাসি। রিপোর্ট করেছেন এস এম আববাস।

সৌজন্যে বাংলানিউজ।

ঢাকা জার্নাল, জুন ২১, ২০১৬

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.