গণপূর্ত অধিদপ্তরে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

জুন ১৩, ২০১৬

imagesঢাকা র্জানাল: গণপূর্ত অধিদপ্তরের (পিডব্লিউডি) সাবেক প্রধান প্রকৌশলী কবীর আহমেদ ভূঞা, ঢাকা অঞ্চল-১এর বর্তমান অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামসহ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অন্য মন্ত্রণালয়ের কাজ সংগ্রহের নামে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের থেকে কয়েক কোটি টাকা আদায় ও আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অভিযুক্ত অন্য কর্মকর্তাদের মধ্যে পিডব্লিউডি কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী একেএম মনিরুজ্জামানের নামও রয়েছে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ কাজের একটি অংশ আনতে ঘুষ দেওয়ার জন্য মাঠ পর্যায়ের নির্বাহী প্রকৌশলীদের থেকে এই টাকা

কোন কোন কর্মকর্তা আত্মসাৎ করা এ অর্থের পরিমান প্রায় পাঁচ কোটি টাকা বলে দাবি করলেও একটি অংশ দাবি করেছেন আত্মসাৎ করা অর্থের পরিমান প্রায় ৭৫ লাখ টাকা।

তবে আত্মসাতের ঘটনার দায়ে অভিযুক্তরা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাদের মতে, সংস্থাটিতে কর্মরত প্রতিপক্ষ তাদের হেনস্থা ও হেয় করতেই এ ধরণের প্রচারণা চালাচ্ছেন। এ ধরণের কোন ঘটনা সংস্থাটিতে ঘটেনি, তারাও এর সঙ্গে জড়িত নন।

যদিও সরকারি আবাসন সমস্যার সমাধানে কর্মরত সংস্থাটির বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী হাফিজুল ইসলাম মুন্সি এবং কর্মকর্তা সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের চৌধুরী অভিযোগের কথা স্বীকার করেছে।

কাদের চৌধুরী, যিনি বর্তমানে ঢাকা অঞ্চল-১ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর দায়িত্বে রয়েছেন, অভিযোগ করেন, গত ২০১৪ ও ২০১৫ সালে প্রধান প্রকৌশলী থাকা অবস্থায় কবীর ভূঞা যেকোন মূল্যে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রায় ২৪,০০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ কাজ সংস্থাটির অধীনে আনার উদ্যোগ নেন।

বিভিন্ন সরকারি ভবন নির্মাণের দায়িত্ব স্বাভাবিকভাবে গণপূর্ত অধিদপ্তর পালন করলেও প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন নির্মানের কাজটি সাধারণত: স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) করে থাকে। গত বছর পিডব্লিউডি কাজটি না পেলেও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ইইডি) কাজটির অংশ বিশেষ নির্মাণের দায়িত্ব পায়।

তার অভিযোগ অনুযায়ী, কবীর ভূঞা সেই সময় কাজটি পেতে মন্ত্রণালয়সহ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বিভিন্ন কর্মকর্তাকে ঘুষ দেওয়ার জন্য মাঠ পর্যায়ে কর্মরত নির্বাহী প্রকৌশলীদের থেকে টাকা আদায় করার উদ্যোগ নেন। এ সময় প্রায় পৌঁণে পাঁচ কোটি টাকা আদায় হয়। আদায় করা ওই টাকা পিডব্লিউডি কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং প্রধান প্রকৌশলীর স্টাফ অফিসারের কাছে জমা রাখা হয়।

কাজ আনতে পারলেও প্রধান প্রকৌশলীসহ অন্য কর্মকর্তারা আদায় করা এই টাকা ফেরৎ না দিয়ে আত্মসাৎ করেন। সর্বশেষ থাকা প্রায় ৭৫ লাখ টাকাও প্রধান প্রকৌশলী কবীর ভূঞা বিদায়ের সময় নিয়ে যান বলে অভিযোগ করেন কাদের চৌধুরী।

এ বিষয়টি কবীর ভূঞার দায়িত্ব পালন শেষে নতুন প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব গ্রহণের পর সংবর্ধণা অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থাপন করেন এবং আদায় করা ওই টাকার হিসাবসহ তা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান। তবে প্রায় ছয়মাসেও বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী তা আত্মসাতকারীদের থেকে আদায় করে ফিরিয়ে দেওয়ার কোন উদ্যোগ নেননি।

কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি ও ঢাকা অঞ্চল-১ এর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামানও এই টাকা আদায় এবং তার সদস্য নির্বাহী প্রকৌশলীদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার কোন উদ্যোগ নেননি।

এ ব্যাপারে রফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলার জন্য তার দপ্তরে একাধিকবার গিয়েও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তার স্টাফ অফিসার একেএম সোহরাওয়ার্দী পরে দেখার সময় জানাবেন বলে আশ^াস দিলেও পরবর্তীতে এই প্রতিবেদকের ফোন ধরা থেকে বিরত থাকেন।

তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পরিকল্পনা) মনিরুজ্জামান তার দপ্তরে এই প্রতিবেদককে বলেন, টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অবান্তর। পিডব্লিউডিতে প্রধান প্রকৌশলীর পদ দখল নিয়ে দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের জের হিসেবে এ বিষয়টি বেশি প্রচার পাচ্ছে। তবে প্রাথমিক শিক্ষার কাজ নেওয়ার জন্য নির্বাহী প্রকৌশলীদের থেকে টাকা আদায়ের বিষয়ে শুনেছি।

সব প্রধান প্রকৌশলীরাই কাজ আনার চেষ্টা করে থাকেন। এজন্য কখনো কখনো টাকাও আদায় করা হয়। এক্ষেত্রে টাকা আদায় করা হলেও তার পরিমান পাঁচ কোটি নয় বলে তিনি দাবি করে বলেন, একটি পক্ষ প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে এ প্রচারণা চালাচ্ছেন। বর্তমান প্রধান প্রকৌশলীকে এসব বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

ঢাকা র্জানাল,জুন ১৩, ২০১৬।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.