৭৮৬ কোটি থেকে প্রায় সাড়ে ৪শ’ গুণ বাড়ছে বাজেটের আকার

জুন ২, ২০১৬

Budget-ঢাকা জার্নাল: বিশ্বের পরাক্রমশালী বেশ কয়েকটি দেশের সক্রিয় বিরোধিতা ও অর্থনৈতিক নিশ্চয়তার বিষয়টি ভবিষ্যতের হাতে ছেড়ে দিয়ে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যেমে জন্ম নেওয়া স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বাজেট পেশ হয় ১৯৭২ সালে।

ওই সময়ের অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ ঘোষিত বাজেটের আকার ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা। ৪৪ বছর পর বৃহস্পতিবার (০২ জুন) পেশ হতে যাওয়া বাংলাদেশের ৪৫ তম বাজেটের সম্ভব্য আকার ৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা।

অর্থাৎ ৭৮৬ কোটি থেকে প্রায় সাড়ে ৪শ’ গুণ বেড়ে বাজেটের আকার হতে যাচ্ছে ৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা।

টানা ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে একাত্তরে স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফেরেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়।

এরপর ওই বছরের জুনে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ জাতীয় সংসদে বাংলাদেশের প্রথম বাজেট পেশ করেন। পরে আরও দু’টি বাজেট পেশ করেন তিনি।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা এবং একই বছর ৩ নভেম্বর তাজউদ্দিন আহমেদসহ জাতীয় চার নেতাকে জেলখানায় হত্যার পর সামরিক সরকার ও তাদের ছত্রছায়ায় পরবর্তী সরকার দেশ শাসন করে।

সেই সময় দেশে জাতীয় সংসদ সচল না থাকায় অধ্যাদেশ আকারে বাজেট পেশ করে সামরিক সরকার।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার উৎখাতের পর সেনা-সমর্থিত খন্দকার মোশতাকের শাসন‍ামলে সে সময়ের অর্থাৎ ১৯৭৫-১৯৭৬ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী ড. আজিজুর রহমান।

এরপর প্রধান সামরিক প্রশাসক হিসেবে দু’টি এবং গণভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর আরও একটিসহ মোট ৩টি বাজেট জিয়াউর রহমানের আমলে ঘোষিত হয়।

এরমধ্যে ড. এম এন হুদা একটি এবং ১৯৮০-১৯৮১ ও ১৯৮১-১৯৮২ অর্থবছরে পরপর দুইটি বাজেট পেশ করেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান।

জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর এইচ এম এরশাদ ক্ষমতা গ্রহণ করেন ১৯৮২ সালে। তার শাসনামলে আবুল মাল আবদুল মুহিত ১৯৮২-১৯৮৩ ও ১৯৮৩-১৯৮৪ এ দুই অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেন।

এরপর ১৯৮৪-১৯৮৫ থেকে ১৯৮৭-১৯৮৮ অর্থবছর পর্যন্ত পরপর ৪ বার বাজেট ঘোষণা করেন এম. সায়েদুজ্জামান। ১৯৮৮-১৯৮৯ এবং ১৯৯০-১৯৯১ অর্থবছরে মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল মুনিম দুইবার বাজেট পেশ করেন।

এরমধ্যে ১৯৮৯-১৯৯০ অর্থবছরে বাজেট উপস্থাপন করেন ড. ওয়াহিদুল হক।

আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ দেশের সব রাজনৈতিক শক্তির ধারাবাহিক আন্দোলনের ফলে ১৯৯১ সালে এরশাদ সরকারের পতন হয়। প্রবর্তিত হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের।

ওই সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বিএনপি সরকার গঠন করলে এম সাইফুর রহমান ফের অর্থমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পান।

১৯৯১-১৯৯২ অর্থবছর থেকে ১৯৯৫-১৯৯৬ অর্থবছর পর্যন্ত মোট ৫টি বাজেট পেশ করেন তিনি।

পরবর্তীতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হলে অর্থমন্ত্রী হন এসএএমএস কিবরিয়া। ১৯৯৬-১৯৯৭ থেকে ২০০১-২০০২ অর্থবছর পর্যন্ত টানা ছয়টি বাজেট পেশ করেন তিনি।

২০০১ এর নির্বাচনের পর বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারে আবারও অর্থমন্ত্রী হন এম সাইফুর রহমান। তিনি ২০০২-২০০৩ অর্থবছর থেকে ২০০৬-২০০৭ অর্থবছর পর্যন্ত পাঁচটি বাজেট পেশ করেছেন।

এরপর ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা নিলে ২০০৭-২০০৮ ও ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন অর্থউপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।

টানা দুই বছর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে দেশ পরিচালিত হবার পর ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট সরকার ক্ষমত‍ায় এলে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পান আবুল মাল আবদুল মুহিত।

২০০৯-২০১০ অর্থবছর থেকে চলতি ২০১৫-২০১৬ অর্থবছর পর্যন্ত টানা ৬টি বাজেট পেশ করেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (০২ জুন) ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করলে সেটি হবে দেশের ৪৫তম বাজেট। আর আবুল মাল আবদুল মুহিতের হবে দশম বাজেট।

ঢাকা জার্নাল, জুন ০২, ২০১৬।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.