প্রাণহানি বাড়লেও সিল মারা কমেছে : সিইসি

মে ২৯, ২০১৬

Rakibঢাকা জার্নাল : ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা বাড়লেও আগের রাতে ব্যালট পেপারে সিলমারা কমেছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ।

ইউপি নির্বাচনের পঞ্চম ধাপে আজ শনিবার দেশের ৭১৭টি ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ শেষে বিকেলে রাজধানীর নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মিডিয়া সেন্টারে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান।

সিইসি বলেন, ‘পঞ্চম ধাপে সিল মারার ব্যাপারে উন্নতি হয়েছে। আহত-নিহতের সংখ্যা বেড়েছে। আমরা যত কঠোর হই না কেন, সহিংসতা কমিয়ে আনা সম্ভব নয়, যদি জনগণের মানসিকতার পরিবর্তন না হয়।’

সিইসি বলেন, ‘৭১৭টি ইউপিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ পর্যায়ের বেশকিছু জায়গায় হানাহানির ঘটনা ঘটেছে। ভোটগ্রহণ বন্ধও করা হয়েছে কয়েকটি কেন্দ্রে। বৃষ্টি উপক্ষো করে ব্যাপক ভোটার উপস্থিতি ছিল। বিশেষ করে মহিলা ভোটারদের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। সহিংসতায় কয়েক জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। ঠাকরগাঁওয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় দুজন পোলিং কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। এজন্য গভীর শোক প্রকাশ করছি। তাদের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘ইসি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করেছে। টিভি খবরও মনিটরিং করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন মাধ্যম থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমাদের নির্দেশনা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শক্ত অবস্থানের কারণে কোথাও আগের রাতে সিল মারার ঘটনা ঘটেনি। যেখানে অনিয়ম হয়েছে সেখানে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সহিংসতার কারণে কোথাও কোথাও কেন্দ্র বন্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়াও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুলিও করেছে।’

কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু করতে প্রত্যেক ধাপেই সকল ব্যবস্থা নিয়েছি। এবারও পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োগ করা হয়েছে। ভোটের পরেও তাদের দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছাড়াও কেউ যাতে পক্ষপাতমূলক আচরণ না করে সেজন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ায় কোথাও অনিয়ম সহ্য করা হবে না। অনিয়ম করে লাভ হবে না। অনিয়মের প্রতিবেদন পাওয়ার সাথে সাথে কেন্দ্র বন্ধ করা হয়েছে এবং সশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সিইসি বলেন, ‘৬ হাজার ৮৮৪ টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৫৩টি এ পর্যন্ত বন্ধ করা হয়েছে। রিপোর্ট পেলে আরো বন্ধ করা হবে। অনিয়মের কারণে একজন সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ১৪০ জনকে দুই লাখ টাকার বেশি জরিমানা এবং একজনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনে পর্যাপ্ত সংখ্যক বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। প্রার্থী, দল পর্যবেক্ষক ও বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। একই সাথে সামনের নির্বাচনে স্বতঃস্ফূর্ত অংশ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’

সিইসিকে পদত্যাগে বিএনপির আহ্বানের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘উনারা রাজনৈতিক দল। উনাদের বক্তব্যের ভিত্তিতে আমার কিছু বলার নেই। উনাদের কিছু অভিযোগ জেনারালাইজড। আমরা সেগুলো নিয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিই। আরো সতর্ক থাকার জন্য এসপি, ডিসিকে নির্দেশনা দিই।’

সিইসি বলেন, ‘মারা গেছেন যারা তাদের হিসাব আপনারা রাখছেন। আমাদের কাছেও হিসাব আছে। সারা দেশে সহিংসতার আবহ বিদ্যমান। জমিজমা নিয়েও সহিংসতা করছে মানুষ। নির্বাচন নিয়েও হচ্ছে। আমি বিস্মিত হচ্ছি-কেন এমন করেন! প্রত্যেক পর্যায়ে কোনো অভিযোগ থাকলে ট্রাইব্যুনালে যেতে পারেন। হাইকোর্ট যেতে পারেন। কোনো জায়গায় কারো মাথায় লাঠি মারার কোনো দরকার নেই।’

তিনি বলেন, ‘যারা দেখা করতে আসেন সবাইকে বলি, পুলিশকে বলেন। তারা কেস না নিলে ম্যাজিস্ট্রেটকে বলেন। বিচারের মাধ্যমেই সমস্যার নিষ্পত্তি হবে। আগেও বলেছি এ নির্বাচনে (ইউপি) ঘনিষ্ট পরিবেশ বিদ্যমান। এখানে ভাই-ভাইয়ের, স্বামী-স্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা করছে। তাই কনটেস্ট হবে। কিন্তু জনগণ যাকে রায় দেবেন তিনি নির্বাচিত হবেন। এ নিয়ে মারামারি করার যুক্তি নেই। এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’

পঞ্চম ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে সিইসি বলেছিলেন এই ধাপে নির্বাচন আরো সুষ্ঠু হবে। এই ব্যাপারে সাংবাদিকরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন,  ‘আগে বলেছিলাম, এটা আমাদের আশা। পুলিশ থেকে শুরু করে র্যা ব, আনসার, একটা কেন্দ্রে আটটা করে অস্ত্র, ২২ জনের মতো ফোর্স, এতো ঘন পরিবেশে সবকিছু আমরা করেছি। সার্বক্ষণিক টেলিফোন করছি। সেন্ট্রাল থেকে সেল করা হয়েছে। মুহূর্তে মুহূর্তে সংবাদ নেওয়া হচ্ছে। এখন সহিংসতা যদি ঘটে, মানুষ যদি মনে করেন অন্যের মাথায় বাড়ি মেরে জয়ী হবো, এই মানসিকতা কন্ট্রোল করা দুরূহ।’

তিনি বলেন, ‘আমরা কঠোর থেকে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। মনমানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। আজকাল জানের কোনো দাম নাই। এসব ক্ষেত্রে সন্ত্রাসীদের ধরপাকড় করা ও অস্ত্র উদ্ধার করার কথা বারবার বলি। এ দুটো ভাল করতে পারলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিন্তু অনেক অস্ত্র উদ্ধার করছে। ওটা নরমাল নিউজ। ওটা ওভাবে আসে না। তারা নিজের জানের তোয়াক্কা না করে দায়িত্ব পালন করছে।’

এ সময় নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ, মো. শাহ নেওয়াজ, ইসি সচিব সিরাজুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব মোখলেছুর রহমান ও জনসংযোগ পরিচালক এসএম আসাদুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।

দেশের প্রায় সাড়ে চার হাজার ইউপিতে এবার ছয় ধাপে ভোটগ্রহণ করছে নির্বাচন কমিশন। আগামী ৪ জুন ষষ্ঠ ধাপের ভোটগ্রহণের মধ্য দিয়ে ইউপি নির্বাচন সমাপ্ত হবে।

ঢাকা জার্নাল, মে ২৮, ২০১৬।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.