পবিত্র শবে বরাত আজ

মে ২২, ২০১৬

Sobe_boratঢাকা জার্নাল: মুসলমানদের সম্প্রদায়ের সৌভাগ্যের রজনী পবিত্র শবে বরাত আজ। ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ মহান আল্লাহর রহমত ও নৈকট্য লাভের আশায় নফল নামাজ আদায়, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আসকার ও মিলাদ মাহফিলসহ এবাদত-বন্দেগীর মধ্য দিয়ে সারারাত অতিবাহিত করবেন। মহিমান্বিত এ রজনীতে মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করবেন।

‘শবে বরাত’ হচ্ছে আল্লাহ প্রদত্ত অনুরূপ এক বরকতময় সুবর্ণ সুযোগ। পবিত্র শবে বরাতের অর্থ হচ্ছে ভাগ্য রজনী। এই রাতে আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ মু’মীনদের উপর বর্ষিত হয়। মুসলমানদের বিশ্বাস, মহিমান্বিত এই রাতে মহান আল্লাহতায়ালা মানুষের ভাগ্য অর্থাৎ তার নতুন বছরের ‘রিজিক’ নির্ধারণ করে থাকেন।

বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতে এ রাতটি শবেবরাত হিসাবে অধিক পরিচিত। ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রকাশিত `ইসলামী বিশ্বকোষ` গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে যে, `ইরান ও ভারতীয় উপমহাদেশে এ মাসের একটি রজনীকে `শব-ই-বরাত` বলা হয়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কোন কোন দেশের কোন কোন অঞ্চলে শবেবরাত ভিন্ন নামে পরিচিত। আরব বিশ্বের মানুষ এ রাতকে `লাইলাতুন নিসফে মিন শাবান` বলেন।

হিজরি সালের শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতটিই হচ্ছে মহিমান্বিত এই পবিত্র শবেবরাত। আজকের রাতটিই হচ্ছে সেই রাত। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে এই রাতটি বিশেষভাবে তাৎপর্যমন্ডিত। কুরআন শরীফ-এর ভাষায় ‘শবে বরাতকে’ ‘লাইলাতুম মুবারাকাহ বা বরকতময় রজনী’ এবং হাদীস শরীফ-এর ভাষায় শবে বরাতকে ‘লাইলাতুন নিছফি মিন শাবান বা শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

যে পাঁচটি রাতে বিশেষভাবে দোয়া কবুল হওয়ার ওয়াদা করা হয়েছে তার মধ্যে শবে বরাতের রাত একটি, মহা নবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই পাঁচ রাত্রিতে দোয়া নিশ্চিতভাবে কবুল হয়ে থাকে। (১) রজব মাসের প্রথম রাতে, (২) শবে বরাতের রাতে, (৩) ক্বদরের রাতে, (৪) ঈদুল ফিতরের রাতে, (৫) ঈদুল আযহার রাতে।’ (মা-ছাবাতা বিসসুন্নাহ)

পবিত্র শবেবরাত উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। প্রদত্ত বাণীতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, ‘মাহে রমজান ও সৌভাগ্যের আগমনী বার্তা নিয়ে পবিত্র শবেবরাত আমাদের মাঝে সমাগত। এই পবিত্র রজনী মানব জাতিকে আল্লাহ তা’য়ালার বিশেষ অনুগ্রহ ও ক্ষমালাভের অপার সুযোগ এনে দেয়। ইসলাম শান্তি ও কল্যাণের ধর্ম। মানুষের ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির জন্য ইসলামের সুমহান আদর্শ আমাদের পাথেয়।’

অপরদিকে প্রদত্ত বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকল প্রকার ধর্মান্ধতা ও কূপমন্ডুকতা পরিহার করে শান্তির ধর্ম ইসলামের চেতনাকে ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় জীবনের সকল স্তরে প্রতিষ্ঠাসহ পবিত্র শবেবরাতের মাহাত্ম্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানব কল্যাণ ও দেশগড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

সৌভাগ্যের এ রজনীতে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে নারী-পুরুষ-শিশু-বৃদ্ধসহ সর্বস্তরের মুসলমানগণ কোরআন তেলাওয়াত, নফল নামাজ ও বিশেষ মোনাজাতের মধ্য দিয়ে আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য এবাদত-বন্দেগীতে মশগুল থাকবেন। এ উপলক্ষে ধর্মপ্রাণ নারী-পুরুষগণ নফল রোজাও পালন করেন।

বাসাবাড়ি ছাড়াও মসজিদে মসজিদে সারা রাত চলবে নফল নামাজ, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, ওয়াজ মাহফিল ও অন্যান্য এবাদত-বন্দেগী।

রাতব্যাপী এবাদত, বন্দেগী, জিকির ছাড়াও এই পবিত্র রাতে মুসলমানগণ মৃত পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজনসহ প্রিয়জনদের কবর জিয়ারত করে থাকেন। তাই এ রাতে কবরস্থানগুলোতেও মুসল্লীদের উপচেপড়া ভীড় দেখা যাবে।

মহিমান্বিত এ রজনী ভাবগম্ভীর পরিবেশের মধ্য দিয়ে পালনের লক্ষ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে রোববার দিবাগত রাতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে- ওয়াজ মাহফিল, কোরআন তেলাওয়াত, মিলাদ মাহফিল, হামদ্, না’ত, নফল ও তাহাজ্জুদের নামাজ এবং আখেরী মোনাজাত।

পবিত্র এ রাতে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররকসহ দেশের সকল মসজিদ রাতব্যাপী খোলা থাকবে।

এ রাতের বিশেষ অনুষঙ্গ কবর জিয়ারতের পাশাপাশি মুসল্লিদের ব্যাপক উপস্থিতিতে মসজিদে মসজিদে এশার নামাজের পর থেকেই দফায় দফায় ওয়াজ মাহফিল, জিকির ও মিলাদের পর বাদ ফজর দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর জন্য আল্লাহর রহমত কামনায় মোনাজাতের মধ্য দিয়ে পবিত্র লাইলাতুল বরাতের সমাপ্তি হবে।

পবিত্র শবেবরাত উপলক্ষে সোমবার সরকারি ছুটি।

ঢাকা িজার্নাল, মে ২২, ২০১৬।

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.